X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক জটিলতা সমাধানের টেনশনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

রশিদ আল রুহানী
১৯ অক্টোবর ২০১৭, ০০:৪৬আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ০০:৪৮

শিক্ষা মন্ত্রণালয়

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে ক্যাডার মর্যাদা পান কলেজ শিক্ষকরা। তবে জাতীয়করণের আওতায় এলে কলেজ শিক্ষকরা বিসিএস না দিয়েই ক্যাডারভুক্ত হন। এ নিয়ে শুরু থেকেই ক্ষুব্ধ বিসিএস শিক্ষকরা। তাদের দাবি, জাতীয়করণের আওতায় থাকা শিক্ষকদেরকে নন-ক্যাডার রাখতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে জাতীয়করণের আওতাভুক্ত শিক্ষকদের দাবি, আগের নিয়মেই তাদেরকে ক্যাডার মর্যাদা দিতে হবে। নয়তো তারা আইনের আশ্রয় নেবেন। এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে এখন রীতিমতো টেনশনে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

চলতি বছরের এপ্রিলে জাতীয়করণ হয় ২৮৩টি কলেজ। ১৯৭৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময় এসব কলেজ ছাড়াও প্রায় দুই শতাধিক কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে। তখন থেকেই জাতীয়করণ হওয়া কলেজ শিক্ষকরা ক্যাডার মর্যাদা পেয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে এত কলেজ জাতীয়করণ হওয়ায় বিসিএস শিক্ষকরা নড়েচড়ে বসেছেন। ক্রমাগত কর্মসূচি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্টদেরকে নিজেদের দাবি ও অবস্থান জানান তারা। অন্যদিকে জাতীয়করণের আওতাভুক্ত কলেজ শিক্ষকরা নিয়মে ব্যত্যয় হলে পাল্টা কর্মসূচিতে যাবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন।

বিসিএস সাধারণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক আছেন ১৫ হাজারের বেশি। কিন্তু ২৮৩টি কলেজ জাতীয়করণ হওয়ায় আরও প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষক ক্যাডারভুক্ত হচ্ছেন। এর আগেও এভাবেই কলেজ জাতীয়করণের পর শিক্ষকরা ক্যাডার মর্যাদা পেয়েছেন।

সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ্ খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ করলেও কোনও লাভ হয়নি। কিন্তু এবার আন্দোলনটা জোরালো হবে। কলেজ জাতীয়করণ হোক তাতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের দাবি— ওইসব শিক্ষককে নন-ক্যাডার মর্যাদায় রাখতে হবে। বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা আমাদের মতো দিলেও আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের দাবি, তারা যেসব কলেজে আছে তাদেরকে সেখানেই রাখতে হবে, বদলি করা যাবে না। এছাড়া পদোন্নতি পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।’

দাবি মেনে নেওয়া না হলে ক্লাস বন্ধ রেখে কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলেও হুমকি দিয়েছে বিসিএস সাধারণ সমিতি। এই সংগঠনের সভাপতির ভাষ্য, ‘বিসিএস দিয়ে শিক্ষা ক্যাডার হওয়া আর বিসিএস না দিয়ে এই মর্যাদা পাওয়া সমান ব্যাপার নয়। এটা করায় ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে শৃঙ্খলা বিনষ্ট ও বিসিএস ক্যাডারদের মর্যাদাকে অবহেলা করা হচ্ছে। এর সুরাহা করতে আমরা সরকারকে বিভিন্নভাবে বলেছি। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে বাধ্য হয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।’

অন্যদিকে জাতীয়করণের আওতাভুক্ত শিক্ষকরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাদেরকে ক্যাডারভুক্ত করার কথা রয়েছে। কলেজ জাতীয়করণের আদেশ ২০০০-এ একথা উল্লেখ আছে। তারা মনে করেন, বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে না এলেও বিসিএস ক্যাডারদের চেয়ে তাদের অভিজ্ঞতা কম নয়। অন্যদিকে, যেহেতু আইন তাদের পক্ষেই আছে ফলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭৮ সাল থেকে কলেজ জাতীয়করণ হচ্ছে। এতদিন ক্যাডার হিসেবেই নিয়োগ পেয়ে আসছে সবাই। এখন নিয়মের ব্যত্যয় হলে আমরা আইনের আশ্রয় নেবো।’

এদিকে শিক্ষকদের এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ও হুমকিতে চাপে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে সমস্যার সমাধান খুঁজতে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ্বাসকে প্রধান করে একটি কমিটিও করা হয়েছে। এর সদস্য হিসেবে আছেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ওহিদুজ্জামানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু এখনও কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। সমস্যা সমাধানে চারটি বিকল্প পথকে মাথায় নিয়ে তারা এগোচ্ছেন বলে জানায় সূত্রটি। এগুলো হলো— প্রচলিত নিয়মে জাতীয়করণভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আত্তীকরণ করা, শিক্ষকদের নন-ক্যাডার রেখেই আত্তীকরণ করা, ক্যাডারভুক্ত করা হলেও সুযোগ সুবিধা নন-ক্যাডারের মতোই রাখা অথবা নন-ক্যাডার রাখলেও সুযোগ-সুবিধা ক্যাডারের মতোই নিশ্চিত করা।

এই চারটি বিকল্প প্রস্তাবের মধ্যে সবশেষটি অর্থাৎ নন-ক্যাডার রাখলেও সুযোগ-সুবিধা ক্যাডারের মতোই নিশ্চিত করার দিকটি শুরুতে রেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কমিটি সুপারিশ করবে বলে জানা যায়। অবশ্য চারটি বিকল্প প্রস্তাব ঠিক করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন নীতি-নির্ধারকেরা।

তবে যে প্রস্তাবই গৃহীত হোক না কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিক্ষকদের জাতীয়করণের বিষয়ে এরই মধ্যে যে অনুশাসন দিয়েছেন, তা রাখা হবে বলেও জানা গেছে। সমস্যার সমাধান প্রসঙ্গে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ওহিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এতদিন অল্প অল্প কলেজ জাতীয়করণ হয়েছে। প্রচলিত নিয়মেই ওই শিক্ষকরা ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এখন একসঙ্গে এত কলেজ জাতীয়করণ হলো। ফলে এখন এ বিষয়টির বিকল্প ভাবার সময় এসেছে।’

 

 

/আরএআর/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ম্যাককিনি‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
তৃতীয় ওয়ানডেশ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার