X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুল আছে- স্কুল নেই!

রশিদ আল রুহানী
১৯ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:০০আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:০৪

রাজধানীর বুড়িগঙ্গার পাড়ে ছোট কাটরা ঘাটে ১৯৬৩ সালে স্থাপিত হয় ছোট কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জায়গার স্বল্পতার কারণে স্বাধীনতার পর বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হয় মিটফোর্ড রোডের নলগোলা এলাকায়। সেখানেও জরাজীর্ণ ভবনে টিকে থাকতে না পেরে ২০১৩ সালে স্কুলটির আশ্রয় মেলে বাবু বাজারের হয়বৎনগরে। হয়বৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকটি কক্ষ ব্যবহার করে স্কুলটিকে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে, যা লাইফ সাপোর্টের শামিল বলে মন্তব্য করেন সেখানকার শিক্ষকরা। ছোট কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড আর পরিত্যক্ত ভবন

বিদ্যালয়টির নাম ছোট কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সবাই মনে করেন, এর অবস্থান নিশ্চয়ই পুরনো ঢাকার চকবাজার সংলগ্ন ঐতিহাসিক ছোট কাটরার কাছে। কিন্তু পুরো এলাকা খুঁজে এই নামে স্কুলের হদিস পাবে না কেউ। ছোট কাটরা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মোসলেহ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি, যিনি এলাকায় বগু ভাই নামে পরিচিত ছিলেন। একারণে ওই এলাকার মানুষের কাছে স্কুলটি বগু স্কুল নামেও পরিচিত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সূত্রে পাওয়া এক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে শুরু হয় এই বিদ্যালয়টির খোঁজ। এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে স্কুলটির খোঁজখবর জানতে চাইলে এলাকাবাসী সাফ জানিয়ে দেন, তারা এই নামে কোনও স্কুল চেনেন না।

পুরনো ঢাকার চকবাজার, ছোট কাটরা, বড় কাটরা, বাবু বাজার এবং ইসলামপুর এলাকায় তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও স্কুলটির সন্ধান মেলেনি। একরকম হতাশ হয়েই ফিরছিলাম। ফিরে আসার আগে শেষবারের জন্য  স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে স্কুলটির নাম বলে জানতে চাইলাম চেনেন কিনা। জবাবে তিনি বললেন, ‘আপনি কি বগু স্কুলে যাবেন?’

কিছু না বুঝেই বললাম- ‘হ্যাঁ।’ তিনি বগু স্কুলে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। সেখানে গিয়ে প্রথমেই চোখে পড়ে স্কুলের প্রবেশ পথে ছোট্ট করে একটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘ছোট কাটারা (শুদ্ধ বানান অনুযায়ী কাটরা) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।

স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করতেই  হতাশা আরও বাড়লো। স্কুলটি এখানেও নেই। মিটফোর্ড এলাকায় দোতলা এই পরিত্যক্ত বাড়ির নিচ তলায়ই চলছিল ছোট কাটরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। কিন্তু এই ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া, এই ভবনের দোতলায় রয়েছে শাহ আব্দুল হামিদ কালান্দর উচ্চ বিদ্যালয় নামে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একইসঙ্গে দু’টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানো রীতিমত অসম্ভব হয়ে পড়ায় এখান থেকে সরে যেতে হয়েছে ছোট কাটরা স্কুলটিকে। মিটফোর্ড থেকে আস্তানা গুটিয়ে চলে গেছে বাবুবাজারের হয়বৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে। বর্তমানে সেখানে অনেকটা রিফিউজির মতো কার্যক্রম চলছে ছোট কাটরা প্রাথমিক বিদ্যালয় ওরফে বগু স্কুলের।

কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় গিয়ে দেখা গেল, শাহ আবদুল হামিদ কালান্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থাও ভালো না। পুরো ভবনটিই যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে- তা স্পষ্ট। বারান্দার ছাদ নষ্ট হওয়ায় টিন দিয়ে ঢাকা। অন্যান্য কক্ষের ছাদও জরাজীর্ণ। বিদ্যালয়টির একজন শিক্ষক বললেন, ভবনটি এখন ‘মরণ ফাঁদ’। ভবনটির এমন অবস্থার কারণে ছাত্রীরাও ঠিকমতো উপস্থিত থাকে না।

কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল এসএম আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় ছোট কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখান থেকে গিয়ে বাবু বাজার হয়বৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়েছে।

ছোট কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত ভবন

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরাও খুবই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। ছোট কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তো কোথাও গিয়ে একটু আশ্রয় নিয়েছে। আমরা যাবো কোথায়? ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অনেক ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।’

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে ছোট কাটরা এলাকায় মোসলেহ উদ্দিন বগু তার নিজের বাড়িতে প্রথমে ছোট কাটরা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। পরে জায়গা স্বল্পতার কারণে ১৯৭২ সালে নলগোলার এই ভবনে স্কুলটি স্থানান্তর করা হয়। পরে ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যালয়ের সম্পত্তিও সরকার অধিগ্রহণ করে। এ রকম পরিস্থিতিতে উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়টি স্থাপনের জন্য মোসলেহ উদ্দিন বগু তার পীর শাহ আব্দুল হামিদ কালান্দরের নামে সরকারের কাছ থেকে জায়গা লিজ পান। পরে দুটি স্কুলই একই ভবনে পরিচালিত হতে থাকে। এর মধ্যে কয়েক বছর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামেই জায়গাটি নামজারি হয়। কিন্তু সংস্কার বা নতুন করে ভবন না হওয়ায় পুরনো ভবনটি একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এ রকম অবস্থায় ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসের পর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বাবুবাজারের হয়বৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে যায়। তবে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ঝুঁকির মধ্যেই চলছে।

হয়বৎনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেটিরও বেহাল অবস্থা। অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। সরু প্রবেশ পথে আবর্জনা আর ময়লা পানিতে ডুবে আছে। ইট ফেলে তার ওপর দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক উত্তম কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে স্কুলটি লাইফ সাপোর্টে রয়েছে। এখানে দুটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ক্লাস নেওয়া হয়। তবে কাগজপত্রে সব আলাদা।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০১৪ সালে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা স্কুলগুলোর জায়গা দখলমুক্ত করতে ও জরাজীর্ণ ভবনের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য রাজধানীর ২৩টি স্কুলের তালিকা তৈরি করে। পরে এই কমিটির গঠিত উপ-কমিটি ওইসব স্কুল পরিদর্শনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। গত দু’বছরে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে। জরাজীর্ণ ভবনের কারণে অস্তিত্ব সংকটে থাকা ছোট কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্যাও জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করতে সুপারিশ করা হয়।  তবে আজও সেই সুপারিশের ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন হয়নি।

এসব বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিন আরা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্কুলের বেদখল হওয়া জায়গা উদ্ধারে প্রতিবন্ধকতা হলো- স্কুলগুলোর জায়গা নিয়ে আইনি জটিলতা। এছাড়া, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তা প্রয়োজন। ফলে সব বিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে দখলমুক্ত করতে সময় লাগছে। তবে আমরা এরইমধ্যে অনেক বিদ্যালয়ের জমি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। বাকিগুলোর ব্যাপারেও কাজ চলছে।’

আরও পড়ুন: 


হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

 

/আরএআর/এমএইচ/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ প্রতিমন্ত্রীর
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বেড়েছে
সর্বশেষ খবর
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী