স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রেডিং নতুনভাবে করতে গেলে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশঙ্কা থাকবে বলে মনে করে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন। রবিবার (১১ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় এমন আশঙ্কার কথা জানান সংগঠনটির নেতারা।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেছেন, ‘স্বীকৃতিই এমপিও প্রাপ্তির একমাত্র মানদণ্ড বিবেচনা করা উচিত। এমপিও বিষয়ক কোনও কমিটি গঠিত হলে এর অংশীজন হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আমাদের সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব দাবি করছি। তাহলে এমপিও নিয়ে আমরা এখনও যে ধোঁয়াশার মধ্যে আছি তা কেটে যাবে।’
ফেডারেশনের নেতারা উল্লেখ করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহম্মদ তাদের জানিয়েছেন, এমপিও বিষয়ক কমিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠিয়েছে। গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি হবে।
সভায় এমপিও শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুসরাত জাবিন বানু জানিয়ে রাখলেন, এ বিষয়ে একটি নীতিমালা হচ্ছে। এটি হয়ে গেলে দরখাস্ত আহ্বান করা হবে। বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আগামী অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তার কথায়, ‘আমরাও মে মাসের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট তালিকা চূড়ান্তকরণের দাবি জানাচ্ছি। যাতে সরকারের বর্তমান মেয়াদেই এমপিওভুক্তির কাজ সম্পন্ন হয়। ২০১০ সালের দৃষ্টান্ত থেকে আমরা জানি, ওই বছরের মে মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসে। এরপর তালিকা চূড়ান্ত করতে যায় তিন মাস।’
ফেডারেশনের দাবি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবদের সঙ্গে বসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইতিহাসবিদ সিরাজুদ্দিন আহমদ। তার ভাষ্য, ‘এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাবো। শেরেবাংলার পর এ দেশে শিক্ষা খাতে অবদান রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর তারই মেয়ে শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। কিন্তু সেই বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকারের সময়ে এ দেশের শিক্ষকরা দাবি নিয়ে আন্দোলন করবেন, এটা অকল্পনীয় ছিল।’
এমপিওভুক্তি নিয়ে তেমন আশা দেখছেন না বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সদস্য রঞ্জিত কুমার সাহা। তিনি বলে দিলেন, ‘দাবির ব্যাপারে আশ্বস্ত করার পরও কালো মেঘের ঘনঘটা দেখতে পাচ্ছি। এমপিওভুক্তি তো এতদিনে হয়ে যাওয়ার কথা। তবে ৫ হাজার ২৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নীতিমালার বাইরে রাখা যাবে না। এ দেশে আন্দোলনে না নামলে কেউ আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখায় না। আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায়ও করা যায় না। আমরাও অনেক সময় দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু এত দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি আমাদের।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর এমপিওভুক্তির আশ্বাস অনুযায়ী বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তিনি বললেন, ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়, ফলে সেদিকে সচেতন থাকতে হবে।’
উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা অনেক উন্নত থাকা প্রসঙ্গে ঢাবি’র সাবেক উপচার্য মনে করিয়ে দিলেন, ‘উন্নত সব দেশে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকদের ব্যাপক মূল্যায়ন করা হয়। কেননা, মূল কাজটি তারাই সম্পাদন করেন।’
এছাড়া দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তার মন্তব্য, ‘জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের মানবিক গুণাবলি অর্জন করা প্রয়োজন, কিন্তু তা সঠিকভাবে হচ্ছে না। আমরা কোন ধরনের ছেলেমেয়ে তৈরি করছি তা নিয়ে আমাদের অনুতপ্ত হওয়া উচিত। তারা অবলীলায় দুর্নীতিমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে।’
আলোচনা সভায় আরও ছিলেন ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলারসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।