একের পর এক মঞ্চে আসছেন শিল্পীরা। গাইছেন গান, সঙ্গে চলছে নাচ। পাশাপাশি ছিল আতশবাজির ঝলকানি। এত আয়োজনের পাশে অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল দৃষ্টিনন্দন ওয়াটার প্রজেকশন। যার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার প্রামাণ্যচিত্র।
চোখ ধাঁধানো এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে হাতিরঝিলে নবনির্মিত উন্মুক্ত মঞ্চে। শুক্রবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে শুরু করে রাত প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলে। মনোমুগ্ধকর এ আয়োজন উপভোগ করেছেন হাতির ঝিলের উন্মুক্ত মঞ্চ ও ঝিলের পাড়ে উপস্থিত হাজার মানুষ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দর্শকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। সে উপলক্ষেই আমাদের আজকের এই আয়োজন। আমরা আশা করি আপনারা সবাই এই অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন।‘’
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি থাকতে পারেননি। তবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, ‘এই অর্জনের মাধ্যমে আমরা নতুন পরিচয় পেয়েছি। একসময় যেসব দেশকে বড় দেশ হিসেবে জানতাম, আজকে আমরা তাদের কাতারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখার জন্য আমি সকলের কাছে আহ্বান জানাই।’
দেশত্ববোধক গান দিয়ে শুরু হয় মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । মঞ্চে চলতে থাকা গানের সঙ্গে মাঝে মাঝেই দেখা যায় আতশবাজির ঝলকানি। তার সঙ্গে ছিল ওয়াটার প্রজেকশন। এছাড়া গানের ফাঁকে ফাঁকে বেজে উঠছিল ৭ মার্চে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ।এরপর একে একে মঞ্চে আসেন সঙ্গিত শিল্পী হাবিব ওয়াহিদ, ফাহমিদা নবী ও হৃদয় খান। গানের পর ওয়াটার প্রজেকশনে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ফোয়ারার উপরে উঠে আসা পানিতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে ১৭৫৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার একটি চিত্র দেখানো হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা এ প্রদর্শনী চলে। এসময় প্রদর্শনী চলাকালীন সময়ে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। ওয়াটার প্রজেকশনের পর চিত্রনায়ক ও নায়িকাদের অংশগ্রহণে চলে নাচ। নাচে অংশ নেন নীরব, মেহজাবিন, ইমন, ফেরদৌস, বিদ্যা সিনহা মীম। নাচ চলাকালীন সময়ে চলতে থাকে ফায়ার ক্র্যাক।
উপস্থিত দর্শকদের সবচেয়ে বেশি মাতিয়েছে সবার শেষে মঞ্চে আসা ব্যান্ডদল ‘চিরকুট’। একের পর এক নিজেদের জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে শোনান তারা। এসময় দর্শকদের একসঙ্গে হাত উঁচু করে ও মোবাইল ফোনের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে অভিবাদন জানাতে দেখা গেছে।
পুরো আয়োজনটি আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেছেন উপস্থিত দর্শকরা। দর্শকদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল উন্মুক্ত মঞ্চ। যারা ভিতরে প্রবেশের সুযোগ পাননি তারা অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছেন ঝিলে পাড়ে রাস্তায় ধারে দাঁড়িয়ে। তাদের সুবিধার জন্য মঞ্চের বাইরে বসানো হয়ছিল বড় স্ক্রিন।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন রুমানা মালিক মুনমুন। হাতিরঝিলের উন্মুক্ত মঞ্চ থেকে পুরো আয়োজনটি সরাসরি দেখিয়েছে বেসরকারি টেলিভিশন ‘গান বাংলা’।