X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে সামনে রেখেই চলছে বাচ্চু হত্যার তদন্ত

নুরুজ্জামান লাবু
১৮ জুন ২০১৮, ০৭:৫৮আপডেট : ১৮ জুন ২০১৮, ০৭:৫৮

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে সামনে রেখেই চলছে বাচ্চু হত্যার তদন্ত

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম- এবিটিকে (নতুন নাম আনসার আল ইসলাম) সামনে রেখেই চলছে মুক্তমনা লেখক ও প্রকাশক শাজাহান বাচ্চু হত্যার তদন্ত কার্যক্রম। তবে হত্যাকাণ্ডের সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোন সূত্র খুঁজে পায়নি পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে যেসব লেখালেখি করতেন তিনি, সেসব কারণে পাওয়া হুমকির সঙ্গেই হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র থাকতে পারে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘লেখালেখিকে কেন্দ্র করে তিনি যে হুমকি পেতেন আমরা সেসব ধরেই তদন্ত করছি। ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তার পারিবারিক বিরোধগুলো খোঁজ করে দেখা হচ্ছে।’

গত ১১ জুন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের কাকালদি গ্রামের নিজ বাড়ির পাশের ছোট্ট একটি বাজারে খুন হন মুক্তচিন্তার লেখক-প্রকাশক ও সাবেক সিপিবি নেতা শাহজাহান বাচ্চু। অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা তাকে কাছ থেকে গুলি করে এবঙ বোমা ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শাহজাহান বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের পর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করার চেষ্টা চলছে। বাচ্চুকে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারা হুমকি দিয়েছিল এবং খুনিরা আগে থেকে তাকে রেকি করেছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা নিয়ে খুনিদের একটি অবয়ব ধারণা করা হচ্ছে। দুই মোটরসাইকেলে আসা চার খুনির বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর, তাদের পরনে ছিল শার্ট ও প্যান্ট। একজনের পেছনে একটি ব্যাগও ছিল।

স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি শাহজাহান বাচ্চুর হত্যার ছায়া তদন্ত করছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসি ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান- র‌্যাব। র‌্যাব ইতোমধ্যে আশেপাশের সড়কগুলো থেকে সিসিটিভি থেকে সন্দেহভাজন মোটরসাইকেল আরোহীদের ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের ধরণ দেখে তাদের কাছে মনে হচ্ছে এর সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত। ২০১৩ সাল থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম টার্গেট করে ব্লগার, মুক্তচিন্তার লেখক-প্রকাশক ও কথিত নাস্তিকদের হত্যা করে আসছে। যদিও আগের হত্যাকাণ্ডগুলোতে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যেতে আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহারের নজিরও রয়েছে তাদের।

সম্প্রতি সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, তারা ধারণা করছেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ হিসেবে আনসারুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের ধরণ ও টার্গেট বিশ্লেষণ করে এই ধারণা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল সর্বশেষ রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় সমকামীদের অধিকারকর্মী ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সাবেককর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তার সহযোগী মাহাবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর প্রায় দুই বছর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (আনসার আল ইসলাম) কোনও টার্গেট কিলিংয়ে অংশ নেওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সিটিটিসি সূত্র বলছে, এই সময়ে আনসার আল ইসলামের আসকারী শাখার (যারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়) অনেক সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এই সংগঠনের শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক এবং তার অন্যতম সহযোগী সেলিম ওরফে হাদী এখনো পলাতক রয়েছে। তারাই পলাতক থেকে নতুন করে টার্গেট কিলিং শুরু করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, আনসার আল ইসলাম গত দুই বছরে হত্যাকাণ্ডে অংশ না নিলেও এই সময়ে তারা অনেক লোকজনকে টার্গেট করে খোঁজখবর নিয়েছে। এমনকি গ্রেফতার হওয়া একাধিক আনসার আল ইসলামের সদস্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির রেকি করা তথ্য সম্বলিত নথিপত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।

সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা মাঝখানে কিছু মুক্তচিন্তার ব্লগার ও লেখককে কার্যালয়ে ডেকে নিরাপত্তা পরামর্শও দিয়েছেন। তবে শাহাজাহান বাচ্চুকে রেকি করার কোনও তালিকা তাদের কাছে ছিল না। এছাড়া হুমকি পেয়েও শাহজাহান বাচ্চু আগে থেকে পুলিশের কাছে কোনও সহায়তা চায়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারীতে জঙ্গি হামলার পর ধারবাহিক জঙ্গি বিরোধী অভিযানে কোনঠাসা হয়ে পড়া জঙ্গি সংগঠনগুলো আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতাসহ অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার ও অভিযানে নিহত হলেও এখনো বেশ কয়েকজন নেতা আত্মগোপনে থেকে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া জেএমবির পুরানা দলের কথিত আমীর সালাউদ্দিন সালেহীন ও মিজানুর রহমান ওরফে বোমা মিজান ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতে গিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। সেখানে থেকেই তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি রাজশাহী ও বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় ছিনতাই ও ডাকাতি করে পুরানা জেএমবি অর্থ সংগ্রহ করছে বলে প্রমান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গত শুক্রবার সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জঙ্গিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছিলেন। তাদের ধারণা, মুন্সীগঞ্জের বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।

এনএল /এমএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ