X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি কর্মকর্তাদের কারণে মাদ্রাসায় দুর্নীতি!

এস এম আববাস
০৪ জুলাই ২০১৮, ০১:০১আপডেট : ০৪ জুলাই ২০১৮, ১৪:৩২

 





মাদ্রাসায় পাঠ নিচ্ছে এক শিক্ষার্থী (ফাইল ছবি) বিভিন্ন মাদ্রাসায় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আর্থিক দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির জন্যও তাদের দায়ী করা হচ্ছে। এতে নিয়মবহির্ভূত কাজে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সংশ্লিষ্টরা। তবে দুর্নীতিতে জড়ালেও গতানুগতিক ব্যবস্থায় সরাসরি কাউকে শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।



সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে—প্রক্রিয়াগত জটিলতার সুযোগ নিয়ে দুর্নীতিতে জড়াচ্ছেন মাদ্রাসার প্রধান ও কিছু শিক্ষক। এতে সহযোগিতা রয়েছে ম্যানেজিং কমিটির। তবে ঢালাওভাবে এ অভিযোগ করারও সুযোগ নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রসা) রওনক মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢালাওভাবে এই অভিযোগ করার সুযোগ নেই। গতানুগতিক ব্যবস্থায় কৌশল করে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কিছু শিক্ষক দুর্নীতি করছেন। সরাসরি ধরার সুযোগ নেই বলে আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত আনাও কঠিন হয়ে পড়ছে।’
এই সংখ্যা খুব বেশি নয় দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই দুর্নীতি বন্ধ করতে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা চালু করবো।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়োগসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির পাশাপাশি গভর্নিং বডির সহায়তায় দেশের কিছু মাদ্রাসার প্রধানসহ অন্য শিক্ষকরা অতিরিক্ত বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের একটি বরগুনা জেলার সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া এছাহাকিয়া আলিম মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান ৬২ মাস অতিরিক্ত বেতন-ভাতা তুলে নিয়েছেন। একইসঙ্গে ওই মাদ্রাসার অন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিমাসে ৪ লাখ ৫০ হাজার সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেন। এই প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেওয়া হয়।
ওই প্রতিবেদনের পর গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সহকারী সচিব মো. আবদুল খালেকের সই করা আদেশে বলা হয়, অধ্যক্ষ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান মোট ৬২ মাসে ১ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা অতিরিক্ত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন, তা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
এই অর্থ বরগুনার জেলা প্রশাসককে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশের পর জেলা প্রশাসন অর্থ আদায় না করে বরগুনার সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসারকে ঘটনা তন্তের নির্দেশ দেয়।
বরগুনার জেলা শিক্ষা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. শাহাদৎ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাকে গত ফেব্রুয়ারিতে জেলা প্রশাসক তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। আমি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। অধ্যক্ষ একটি ইনক্রিমেন্টের বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করেছেন বলে এজি অফিস (হিসাব নিয়ন্ত্রক) অফিসের তথ্যে জেনেছি। অধ্যক্ষ বলেছেন যদি অতিরিক্ত উঠিয়ে থাকি তাহলে কিস্তিতে ফেরত দেবো।’
এদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী জেলার লেমুয়া চন্দ্রকান্দা আলিম মাদ্রাসার এমপিও বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের স্পষ্ট প্রমাণ ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড তা বন্ধ না করে পাঁচ মাস বেতন-ভাতা তোলার সুযোগ করে দেয়। পাঁচ মাস পর মাদ্রাসাটির এমপিও বন্ধে নতুন করে নির্দেশনা চাওয়া হয়। এ কারণে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যাও চায় মন্ত্রণালয়। এরপর বন্ধ করা হয় মাদ্রাসার এমপিও।
এই দুই ঘটনাতেই শেষ নয়, এমন ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায়। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী ফাতেহিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার শিক্ষকের চাকরি ৬০ বছর পার হওয়ার পরও বেতন-ভাতা তোলার অভিযোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইদিন মন্ত্রণালয় থেকে চারজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা তোলার জন্য সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের গত ২৭ ফেব্রুয়ারির একটি আদেশে বলা হয়, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার পরেও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর জামেয়া আদুরিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবি বিষয়ক জালিয়াতি করে উপাধ্যক্ষ পদে এমপিওভুক্ত হন। বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। গত ৪ মার্চ চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর কাশেমিয়া ছিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও ঘুষসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের গত ২৪ সেপ্টেম্বরের একটি আদেশে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবদ মোশারফ মেয়াজ্জেম ইসলামমিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও ম্যানেজিং কমিটির সরাসরি সহযোগিতা ছাড়া আর্থিক দুর্নীতিতে জড়ানোর সুযোগ নিতে পারেন না মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ