X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাল্যবিয়ের কারণে এক বছরে ঝরে পড়েছে পাঁচ হাজার ছাত্রী

এস এম আববাস
২৮ আগস্ট ২০১৮, ২৩:০৫আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৮, ১১:১৩





বাল্যবিয়ের প্রতীকী ছবি

সার্বিকভাবে দেশে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটলেও এখনও বড় প্রতিবন্ধকতা বাল্যবিয়ে। সরকারিভাবে লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা বাড়নো হলেও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও অসচেতনতার জন্য এটি পুরোপুরি রোধ করা যাচ্ছে না। সরকারি হিসাব বলছে, বাল্যবিয়ের কারণে ২০১৭ সালের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার আগে ঝরে পড়েছে পাঁচ হাজার ১৬৯ জন ছাত্রী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার প্রথম দিন সারাদেশে ৬০ হাজার ৮৯৩ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এর মধ্যে বাল্যবিয়ের কারণে অনুপস্থিত থাকে পাঁচ হাজার ১৬৯ জন ছাত্রী।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরে কন্যাসন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারী-পুরুষের সমতা আনা, সম্মান ও সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা এমন একটা সাংস্কৃতিক বলয়ের মধ্যে বাস করি, যেখানে কন্যাসন্তানের দায়িত্ব কেউ নেয় না। এই ঝরে পড়া প্রকাশ করে যে, মা-বাবাও কন্যাসন্তানের দায়িত্ব নিতে চান না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার কন্যাসন্তানকে আরেকজনের হাতে তুলে দিতে চান। এই ঝরে পড়া নির্দেশ করে যে, এখন পর্যন্ত আমাদের সমাজে কন্যাসন্তানের মূল্যায়ণ সেভাবে হয় না। কন্যাসন্তানকে তার প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা, অধিকার দেওয়া হয় না।’
বিশিষ্ট এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘এর সবচেয়ে বড় প্রতিকার আমরা পেতে পারি সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানে কন্যাসন্তানকে সমান অধিকারের দাবিদার করা হয়েছে। সমান অধিকারের সবকিছু— স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সম্পত্তি অর্জনের অধিকারসহ সবকিছুতে যদি সমঅধিকার নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে কন্যাসন্তানকে সমাজ সব সময় বোঝা মনে করবে, তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা নারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে তাদের বিচার ঠিকমতো হয় না। নারী নির্যাতনের বিচারগুলো ঠিক সময়ে ঠিকমতো হতো, তাহলে যারা নির্যাতন করে তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক বিচার হতো, তাহলে বাল্যবিয়ে অনেকটাইই রোধ করা যেতো।’
নারীদের কর্মসংস্থান সীমিত বলে মনে করেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘যদিও কোটা আছে, তারপরও নারীদের কর্মসস্থান সীমিত, এটি বাড়ানো হলে সমস্যা কমবে।’
বাল্যবিয়ের কারণে ঝরে পড়া রোধে করণীয় প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছি। সামাজিকভাবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মিড-ডে মিল বাস্তবায়ন এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে।’
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বাল্যবিয়ে যাতে না দেওয়া হয় সেজন্য ব্যপকভাবে প্রচারণাসহ বিভিন্ন কৌশল নেওয়া হচ্ছে।’
জানা গেছে, অনুপস্থিতির বিষয়ে দেশের প্রতিটি বিভাগ থেকে বিভাগীয় কমিশনাররা সরকারের কাছে বাল্যবিয়ের কারণে অনুপস্থিত থাকে পাঁচ হাজার ১৬৯ জন নারী পরীক্ষার্থীর চিত্র তুলে ধরেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগকে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, উপবৃত্তি চালু থাকলে ২০১৭ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় বাল্যবিয়ের কারণে অনুপস্থিত রয়েছে পাঁচ হাজার ১৬৯ জন পরীক্ষার্থী। ভবিষ্যতে যাতে এমন পরিস্থিতি না হয় এবং এর প্রতিরোধে গৃহীত কৌশল প্রতিবেদনসহ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের উপপরিচালক (ইনোভেশন) মোছা. মোর্শেদা খাতুনের সই করা চিঠি পাঠানো হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে। গত ২৮ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয় ওই চিঠিতে।
এরপর গত ১৪ মার্চ মাউশির মহাপরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির চেয়ারম্যানকে অনুপস্থিতির কারণ জানাতে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাউশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে নেওয়া কৌশল প্রতিবেদনসহ মস্ত্রণালকে পাঠায়।
মাউশির প্রতিবেদনের আলোকে গত ১৫ জুলাই অনুপস্থিতির কারণ ও প্রতিকারে নেওয়া কৌশল প্রতিবেদনসহ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠায় মন্ত্রণালয়।
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও সার্বিকভাবে ঝরে পড়া রোধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে পাঁচটি কৌশলের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো, মিড-ডে মিল নিশ্চিত করা, শিশুশ্রম বন্ধ করা এবং দারিদ্র কমানো।
ঝরে পড়া প্রতিরোধে বৃত্তি চালু রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে মা সমাবেশ অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে, তা রোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
আপাতত গরমেই খেলতে হচ্ছে সাবিনা-সানজিদাদের
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর যুবরাজ
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন