বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এই ইনিস্টটিউটের নামে রংপুর সিটি করপোরেশন থেকে দুটি ট্রেড লাইসেন্স এবং রংপুরের রাজস্ব অফিস থেকে একটি ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিন) এবং বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (বিন) নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় কোনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ইনিস্টিটিউটের নামে ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য ২০০৯ সালে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১১ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ তম সিন্ডিকেট সভায় এই ইনস্টিটিউটে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি করানোর সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়, সেখানে ট্রেড লাইসেন্স ও ভ্যাট-ট্যাক্স নম্বর নিয়ে বেরোবি’র এই গবেষণা ইনস্টিটিউটকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আওতায় নিয়ে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। এ অভিযোগ প্রশাসনিক কয়েকজন কর্মকর্তার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন থেকে এই গবেষণা ইনিস্টিটিউটের নামে দুটি ট্রেড লাইসেন্স এবং রংপুরের রাজস্ব অফিস থেকে ভ্যাট সার্টিফিকেট অর্থাৎ বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ও ট্যাক্স পেয়ারস নম্বর নেওয়া হয়েছে। এই চারটি লাইসেন্সের কপি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে।
এ বছরের ২৬ জুলাই রংপুর সিটি করপোরেশন থেকে ইস্যু করা দুটি লাইসেন্সের তথ্য থেকে জানা গেছে, লাইসেন্স দুটির প্রোপ্রাইটর বা মালিকের নামের স্থানে ‘ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ লেখা হয়েছে। একটি লাইসেন্সে ব্যবসার ধরনের জায়গায় ‘শিক্ষামূলক কনসালটেন্সি' আর অন্যটিতে ‘রিসার্চ সেন্টার’ উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যবসার স্থান হিসেবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ রয়েছে। লাইসেন্স দুটির মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রেড লাইনসেন্স দুটির মধ্যে একটির নম্বর BL-2018-19000241 এবং অন্যটির নম্বর BL-2018-19000242.
অন্যদিকে, গত ১ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ইনস্টিটিউটকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে খোলা হয়েছে একটি টিন এবং ২ আগস্ট খোলা হয়েছে বিন নম্বর।
ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানটি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল। এ কারণেই লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন পড়ে কিনা জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের বোর্ড অব গভর্নর ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ট্রেড লাইসেন্স এবং ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিন) প্রয়োজন পড়ে। একারণেই ট্রেড লাইসেন্স ও টিন করা হয়েছে। ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ ও কনসালটেন্সি করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্জন বাড়বে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজেই খরচ হবে।’
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, রুয়েটসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের নামে আলাদা করে কোনও ট্রেড লাইসেন্স নেই। এর কোনও প্রয়োজনও পড়ে না।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একাধিক সদস্য এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে জানতে চাইলে তারা বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত জানান, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে গবেষণার উন্মুক্ত স্থান। এখানকার গবেষণাগারে গবেষণা করা বাধ্যতামূলক। এই গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বাইরে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অথবা গবেষকরা ব্যবহার করতে পারেন। তবে গবেষণাগার ব্যবহার করতে কিছু অর্থ পরিশোধ করার নিয়ম আছে। সেই টাকার একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের কাজের জন্য খরচ করা হয়। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ই যে টাকা নেয় তাও নয়। অনেকেই ফ্রি সার্ভিস দিয়ে থাকে। তবে সেখানে অর্থ লেনদেন হলেও এর জন্য কোনও ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একটি নির্দিষ্ট ট্রেড লাইসেন্স থাকে। রাজস্ব খাতের সঙ্গে ওই লাইসেন্সের মাধ্যমেই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনিস্টিটিউটের নামে আলাদা করে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া মানেই ভিন্ন কোনও উদ্দেশ্য আছে বলেই মন্তব্য করেন তারা।
এদিকে জানতে চাইলে বেরোবি’র রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। লাইসেন্স নেওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘ইনস্টিটিউটের ব্যাপারে শুধু উপাচার্য বলতে পারেন।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে গত দুই দিন ধরে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।