X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তবু মিলছে মাদক

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:৩৬আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:০২

কারওয়ান বাজারের রেললাইন বস্তিতে মাদক বেচাকেনা ‘আমার কাছে তামুক (গাঁজা) আছে, আপনের কি লাগবো ভাই? গোডা (ইয়াবা) লাগলে আইনা দেওন (দেওয়া) যাইবো। ট্যাকা দেন আইনা দিমু, যদি খুশি হইয়া ৫০/১০০ টাকা দেন হেইডা আপনার ব্যাপার। আামি চামু না।’ রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রেললাইন বস্তিতে দেখা মাত্রই মাদকসেবী ভেবে এভাবেই কথাগুলো বলছিল রহমত (ছদ্মনাম)। কোথায় ইয়াবা পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে এই মাদক বিক্রেতা আরও জানায়, ‘কই ব্যাচে (বিক্রি) সেইটা কমু না। তবে ট্যাকা (টাকা) দিলে আইনা দেওন যাইবো।’ কে ব্যাচে হেইডাও কমু না। লাগলে কন আই না দেই, কয় পিস লাগবো?’
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিজেদের গ্রেফতার এড়াতে চিহ্নিত ও শীর্ষ মাদক বিক্রেতাদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়ে আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে মাদক পাচারের চেষ্টা করছে তারা। এ কারণেই রাজধানীতে মাদকের স্পট না থাকলেও গোপনে মিলছে মাদকদ্রব্য। কারওয়ান বাজারে রেললাইন বস্তিতে ভাসমান মাদক বিক্রেতাদের আনা-গোনা এখনও রয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় এই বস্তির একটি অংশ ভেঙে দেওয়া হলেও সেখানে বন্ধ হয়নি মাদক বেচাকেনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় রাজধানীতে এক সময়ের চিহ্নিত মাদক স্পটগুলো ভেঙে দেওয়ার পরও মিলছে মাদকদ্রব্য।
বস্তির একটি অংশ ভেঙে দেওয়া হলেও থেমে নেই মাদক বেচাকেনা মাদকবিরোধী অভিযানে প্রতিদিনই শত শত মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতা গ্রেফতার করা হচ্ছে। অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অনেক শীর্ষ মাদক চোরকারবারীর মৃত্যুও হয়েছে। বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, দেশি-বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হলেও মাদকদ্রব্য সরবরাহ, বিক্রি ও সেবন থেমে নেই।
শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) কারওয়ান বাজার রেললাইন বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন গাঁজা বিক্রি করছে। তেজগাঁওয়ের দক্ষিণ বেগুনবাড়ি এলাকায় রেললাইনের পাশে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা। তবে পরিচিত মানুষ ছাড়া ইয়াবা বিক্রি করে না মাদক বিক্রেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গাঁজা বিক্রেতা জানায়, ‘এখন ইয়াবা চাইলেই পাওয়া যায় না। ট্যাকা (টাকা) দিলে এক ঘণ্টা পর আইনা দেওন যাইবো।’
গাঁজা কোথা থেকে কারওয়ান বাজারে আসে জানাতে চাইলে এই মাদক বিক্রেতা জানায়, ‘টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে সিস্টেমে আসে। মাল লাগলে ওই পারে জানাই, ওরা সেখান থেকে লোক দিয়া ট্রেনে কইরা পাঠাইয়া দেয়।’ কীভাবে আনা হয় জানতে চাইলে জানায়, ‘কত পদ্ধতি আছে? লগে কইরা নিয়া ট্রেনে উঠলে ১০/১৫ মিনিট লাগে কারওয়ান বাজার আসতে।’
প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মাদক ইয়াবা কীভাবে আসছে জানতে চাইলে এই মাদক বিক্রেতা জানায়, চকবাজার থেকে ইয়াবার কিছু চালান আসে। এখান থেকে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যে শ্রমিকরা যায়, আসার সময় তাদের সঙ্গে অল্প পরিমাণে ইয়াবা দেওয়া হয়। তারা নিয়ে আসে। এগুলো পরে পরিচিত কাস্টমারের কাছে বিক্রি করা হয়।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় আমরা রেললাইন বস্তিটি ভেঙে দিয়েছি, কিন্তু এর ফলে ভাসমান মাদক বিক্রেতা বেড়ে গেছে। তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
বিশেষ কৌশলে মাদক বিক্রি গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-২ এর রাইনখোলায় মিরপুর কমার্স কলেজের ঢাল সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তিতে ইয়াবা কিনতে গিয়ে জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক মাদকসেবী খুন হন। ইয়াবা কেনার সময় বিশ টাকা কম দেওয়ায় তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে মাদক বিক্রেতা বুলেট। নিহত জাকির পরিবহন শ্রমিক ছিলেন। এ ঘটনায় জড়িত আসামি রুবেল ও লিটনকে ওই রাতেই গ্রেফতার করা হয়। গত ৩ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে বুলেটকে গ্রেফতার করে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুলেট রাইনখোলা ঝিলপারের ওই বস্তিতে বসবাস করতো না। তবে ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতা হিসেবে সে ইয়াবা বিক্রি করতো।
বস্তির বাসিন্দা লাইলি বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘এই বস্তিতে আগেও পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এখানকার অনেক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অনেকেই আবার পালিয়ে গেছে। এখানে মাদক বেচাকেনা বন্ধ ছিল। কিন্তু বুলেট অন্য জায়গা থেকে ইয়াবা এনে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতো। প্রায়ই এই বস্তির বাসিন্দা রুবেলের ঘরে গিয়ে বুলেট নিজেও ইয়াবা খেতো।’
এদিকে ভাসানটেক এলাকায় মাদকের স্পট না থাকলেও ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতা রয়েছে। ভাসানটেক মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট সংলগ্ন এক নম্বর বস্তির (কুমিল্লাপট্টি) স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিজের গ্রেফতার এড়াতে আলোচিত মাদক চোরাকারবারি মোর্শেদা আত্মগোপনে রয়েছে। এলাকার মাদক কেনাবেচা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে মোর্শেদা। তার সহযোগীরা গোপনে ভ্রাম্যমাণভাবে মাদক সরবরাহ ও বিক্রি করছে।
লুকিয়ে মাদক বিক্রি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, মাদক চোরাকারবারির তালিকায় শীর্ষ স্থানে মোর্শেদার নাম রয়েছে। মিরপুরের ভাসানটেকে তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলাও রয়েছে। মিরপুরের অন্য থানায়ও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তবে চলতি বছরের মে মাসে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে মোর্শেদা আত্মগোপনে রয়েছে।
এ বিষয়ে ভাসানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘মোর্শেদা তালিকাভুক্ত একজন মাদক চোরাকারবারি। সে আমাদের এলাকায় থাকে না। তবে ভাসানটেক থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু ভাসানটেক থানা এলাকায় তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মোর্শেদাকে গ্রেফতারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উপ অঞ্চলের (উত্তর) সহকারী পরিচালন খোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযানের ফলে মাদকের সরবরাহ অনেকাংশে কমে গেছে। তবে একেবারে বন্ধ বলা যাবে না। মাদকদ্রব্য বিক্রি বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৪ মে থেকে ১৭ অক্টেবর পর্যন্ত র‌্যাবের ৩ হাজার ৯০৮টি অভিযানে ৬ হাজার ৬৮৪ জন মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৮৩ জন মাদক চোরাকারবারি নিহত হয়। এসব অভিযানে ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা, ২ হাজার ৩৯১ কেজি গাঁজা, ৫৩ হাজার ৬৫২ বোতল ফেনসিডিল, ১৫ কেজি ৮৫৭ গ্রাম হেরোইন, ৩০ হাজার ৩৮৬ বোতল বিদেশি মদ ও ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৭৪ লিটার দেশি মদ উদ্ধার করা হয়।

/এসজেএ/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
টেবিলে রাখা ‘সুইসাইড নোট’, ফ্ল্যাট থেকে দম্পতির মরদেহ উদ্ধার
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ