X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১১ শতাংশ বর্জ্য থেকে যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে

শাহেদ শফিক
১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৫৯আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:২৭

কনটেইনারের বাইরে ময়লার স্তূপ

বর্জ্য অপসারণে প্রতীকী কর্মসূচি পালন করে বিশ্ব রেকর্ড গড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় প্রতিদিন উৎপাদিত বর্জ্যের ১১শতাংশ অপসারণ করা হয় না।  ডিএসসি’র অভ্যন্তরীণ এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এ অবস্থায় শতভাগ বর্জ্য অপসারণের পরিকল্পনা করেছেন সংস্থাটির মেয়র সাঈদ খোকন। এজন্য সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার নাইট শিফট চালু করেছেন তিনি। পাশাপাশি সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা কলকাতা সিটি করপোরেশন পরিদর্শনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসা বাড়িতে দৈনিক তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৩০০ টনবর্জ্য উৎপাদন হয়। এ থেকে মাত্র দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য সংগ্রহ করে তা ল্যান্ড ফিলে অপসারণ করা হয়। বাকি ৩০০ থেকে ৬০০ টন বর্জ্য প্রতিদিন নগরীতে থেকে যাচ্ছে। এসব বর্জ্য ড্রেন ও স্যুয়ারেজ লাইন হয়ে  নগরীর নিচু জায়গাগুলো ভরাট করছে।  এছাড়া, ড্রেন ও নর্দমা ভরাট হয়ে বর্ষা কালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি জমে থাকা বর্জ্য থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ও রোগ-ব্যাধি।

নগরভাবনের পেছনে দেয়াল ঘেঁষে ময়লার স্তূপ

ডিএসসিসি’র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৩০০ মেট্রিক টন বর্জ্যের সঙ্গে নতুন করে ৮০০টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১১ মেট্রিক টন মেডিক্যাল বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে। এসব বর্জ্য অপসারণে সংস্থার পাঁচ হাজার ২৪৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। কিন্তু তারা পুরোপুরি বর্জ্য অপসারণ করতে পারছেন না। এজন্য নগরবাসীর অসচেতনতার পাশাপাশি সংস্থার জনবল সংকটকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সম্প্রতি  নতুন করে আগের সমপরিমাণ এলাকা যুক্ত হওয়ায় আরও বেকায়দায় পড়েছে ডিএসসিসি। যদিও এখনও ওইসব এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হয়নি। তবে সেসব এলাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলে ডিএসসিসিকে ব্যাপক হিমশিম খেতে হবে।

ডিএসসিসি সূত্র আরও জানায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ৪৩টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০টির নির্মাণ কাজ শেষে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৩টি এসটিএস-এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বলা হচ্ছে, এসটিএস গুলো নির্মিত হলে সড়কে দৃশ্যমান ও দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য কমে যাবে। কিন্তু এর পরেও বর্জ্যের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর।

সরেজমিনে ধানমন্ডি রাসেল স্কয়ার এলাকায়  ডিএসসিসি’র সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, এই এসটিএসটি খুবই অত্যাধুনিক। বাইরে থেকে এর অবকাঠামো দেখলে মনে হতে পারে— যেন একটি অত্যাধুনিক থাকার হোটেল। কিন্তু সামনে গেলেই দুর্গন্ধে থাকা টেকা দায়। এসটিএসটি’র ভেতরে জায়গা না থাকায় সামনের ফুটপাতজুড়ে ময়লা ফেলে রাখা হচ্ছে। এছাড়া, ময়লাবাহী ভ্যানগাড়িগুলো সড়কের ওপরে অবস্থান করায় যানজট ‍সৃষ্টির পাশাপাশি তীব্র দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

একই চিত্র দেখা গেছে, মেরাদিয়া বাজারে। বাজারটির রামপুরা খাল সংলগ্ন বিশাল এলাকাজুড়ে ময়লার স্তুপ জমে রয়েছে। প্রতিরাতে এসব বর্জ্য অপসারণের জন্য এলাকায় সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি ভারী যন্ত্রপাতি ও যানবাহন দেখা গেলেও জমে থাকা বর্জ্যগুলো অপসারণ করা হয় না, এমন অভিযোগ— স্থানীয় বাসিন্দা ও মেরাদিয়া বাজারের দোকানিদের।

ডিএসসিসি’র বিভিন্ন এলাকায় অহরহ এমন দৃশ্য চোখে পড়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ডাব বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে যত বর্জ্য ফেলা হয়, সবগুলো  খালে গিয়ে পড়ে। মাঝে-মধ্যে রাতে সিটি করপোরেশনের কয়েকটি বড়বড় গাড়ি দেখি। কিন্তু গাড়িগুরো বর্জ্য নেয় না। ফলে বর্জে্যর কারণে খালটি ভরে যাচ্ছে।’

বাসাবো খেলার মাঠ সংলগ্ন এলাকায় দিনের বেলা বর্জ্যের স্তুপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এখানে জড়ো করা ময়লার পরিমাণ এত বেশি যে, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তা সবটা অপসারণ করতে পারছে না। শেষ করতে পারে না। একই চিত্র বাসাবো আল শিফা মেডিক্যাল সার্ভিসের সামনেও। এখানে ডিএসসিসি’র বেশ কয়েকটি খোলা কনটেইনার থাকলেও তার আশপাশে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়।

একই চিত্র পুরান ঢাকার বাংলা বাজার ফুটওভার ব্রিজ এলাকার।  এখান থেকে ইসলামপুরে কাপড়ের মার্কেটের দিতে যেতে দেখা যায়— একটি  বিশাল বর্জ্যের  স্তুপ। আবর্জনার দুর্গন্ধে  রাস্তায় চলাচলে পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

রবিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে ময়লা-আবর্জনা দেখা গেছে, নগরভবনের পেছনে দেয়াল ঘেঁষা সড়কেও। এছাড়া, সিদ্দিক বাজার, বংশাল, নাজিরাবাজার, পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার ও চকবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ির বর্জ্য সড়কের পাশে ফুটপাতজুড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এসব লাকায় ডিএসসিসি’র কোনও পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে দেখা যায়নি।

এদিকে, রাত ১০টা থেকে সকাল ছয়টার মধ্যে বর্জ্য ও ময়লা অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। পাশাপাশি একাজে ঢাকনাযুক্ত গাড়ি ব্যবহারেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশও মানা হচ্ছে না। গত কয়েকদিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় দিনের বেলায় ঢাকনা ছাড়াই ট্রাকে বর্জ্য অপসারণ করতে যায়। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নগরীতে পরিবহনের আধিক্য থাকা এবং ঢাকনাযুক্ত ট্রাকের স্বল্পতার কারণে তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করতে পারছে না।

কনটেইনারের বাইরে পড়ে আছে বর্জ্য জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজধানীতে অনেক বর্জ্য উৎপাদন হয়। কিন্তু আমরা এখনও সববর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ করতে পারছি না। তবে ৯০ শতাংশের মতো কালেকশান হচ্ছে। আমরা অপসারণের হার শতভাগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এজন্য সাপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার মেয়রের তত্ত্বাবধানে লাইভ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। আশা করি, আমরা একে শতভাগে উন্নীত করতে পারবো।’

জানতে চাইলে ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্জ্য) আ হ ম আব্দুল্লাহ হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা আমাদের এলাকা নিয়ে একটি সার্ভে করেছি। এতে দেখা গেছে, যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হয়, তা থেকে ৮৯ ভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়। বাকি ১১ ভাগ বর্জ্য থেকে যায়। আমরা একে শতাভাগে উন্নীত করার জন্য কাজ করছি।’

জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতা সিটিতে যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন হয়, তা শতভাগ অপসারণ করে এই নগরীর সিটি করপোরেশন আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। ডিএসসিসিও কলাকাতা শহর থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেই পুরস্কার পাওয়ার জন্য কাজ করছে। এজন্য সংস্থার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাকে কলকাতা শহর পরিদর্শনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা লাভ করে দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজে লাগানো হবে।

এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ হারুন  বলেন, ‘আমরা কয়েকজন কলকাতায় যাচ্ছি। তারা কীভাবে সফলতা অর্জন করছে, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে এসে আমরাও কাজ করবো।’

প্রসঙ্গত, পরিচ্ছন্নতায় বিশ্বরেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে এ বছরের ১৩ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তিতে ডিএসসিসি ও রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘ডেটল পরিচ্ছন্ন ঢাকা’ নামে ওই কর্মসূচি পালিত হয়। পরবর্তীতে ৭ হাজার ২১ জনের স্বীকৃতি দিয়ে এ কর্মসূচি পালন করার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে নাম উঠে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। কিন্তু এর পরেও নগরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দৃশ্যমান সফলতা দেখা যাচ্ছে না। যদিও ডিএসসিসি বলছে, ওই কর্মসূচি ছিল প্রতীকী। নাগরিকদের সচেতন করতেই ওই কর্মসূচি পালন করা হয়।’ 

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
তুর্কি মিডফিল্ডারের গোলে শিরোপার আরও কাছে রিয়াল মাদ্রিদ
তুর্কি মিডফিল্ডারের গোলে শিরোপার আরও কাছে রিয়াল মাদ্রিদ
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!