X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় অপহরণ, মুক্তিপণ না দেওয়ায় হাত-পা ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা

সাদ্দিফ অভি
২৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০৮আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ১২:৪৮

হাসপাতালে মর্তুজা আলী পাবনার সদর উপজেলার কড়ইডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মর্তুজা আলী। এক সময় টানা ১২ বছর কাজ করেছেন মালয়েশিয়ায়। এরপর দুই বছরের জন্য তিনি দেশে পরিবারের কাছে ফিরে আসেন। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে আবারও মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু এবার যাওয়াই কাল হলো তার। চলতি বছরের মার্চ মাসে মালয়েশিয়ায় অপহরণের শিকার হন তিনি। দেশে তার বাড়িতে ফোন করে মুক্তিপণ চাওয়া হয় তিন লাখ টাকা। টাকা দিতে না পারায় মর্তুজা আলীকে সেখানে হত্যার চেষ্টা করা হয়। হাত-পা ভেঙে দেওয়ার পর মৃত্যু হয়েছে মনে করে তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। গত ২২ নভেম্বর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং স্থানীয় বাঙালিদের সহায়তায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন তিনি। দেশে তার চিকিৎসার তদারকি এবং সহায়তা করছে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং সে দেশে স্থানীয় বাংলাদেশি এবং মর্তুজা আলীর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পুনরায় মালয়েশিয়া যান মর্তুজা আলী। কিন্তু দালাল এবার তাকে মতিয়ার রহমান নামে পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর বিনিময়ে দালাল তার কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নেয়। ট্যুরিস্ট ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার এক মাস পর মার্চ মাসে সে দেশে অপহরণের শিকার হন মতিয়ার রহমান নামে পাসপোর্টধারী মর্তুজা। তার বাড়িতে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়, নাহলে তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। টাকা দিতে না পারায় মর্তুজা আলীর হাত-পা ভেঙে রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায়। স্থানীয় বাংলাদেশিরা তাকে ক্লাং হাসপাতালে ভর্তি করেন। কয়েকদিন চিকিৎসার পর তার অবস্থার অবনতি হলে ক্লাং হাসপাতাল থেকে সাবা বারহাম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মতিয়ারের অভিভাবক খুঁজতে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করে। এছাড়া সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে খোঁজ করা হয়। মতিয়ারের পরিবার এই খবর জানতে পারে। পরে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিমা আক্তারের মাধ্যমে হাইকমিশন তার পরিবারের সন্ধান পায় এবং মতিয়ারের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়।
মালয়েশিয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ মেটাতে স্থানীয় বাংলাদেশিরা মতিয়ারের জন্য ফান্ড সংগ্রহ করেন। মতিয়ারের স্পেশাল পাসের জন্য ৩১০০ রিঙ্গিত পরিশোধ করা হয়। এছাড়া হাসপাতাল ও বিমানের টিকিটসহ যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নিয়ে হাইকমিশন তাকে গত ২২ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে দেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে ফিরে আসার পর অসুস্থ মতিয়ার রহমানকে নেওয়া হয় পাবনা সদর হাসপাতালে। কিন্তু সেখান থেকে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালে।
মতিয়ারের পরিবার ২৬ নভেম্বর রাতে ঢাকায় নিয়ে আসেন তাকে। কিন্তু সিটি স্ক্যান করার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মতিয়ারের ছোট একটি স্ট্রোক হয়েছে, তাতে তার শরীরের এক পাশ কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। যেহেতু তার হাত এবং পা ভাঙা আছে সেজন্য তাকে আগে সবল করা জরুরি, এজন্য তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতালে) নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই তার পরিবার তাকে রাতেই আবার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন জানান, পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেসব রোগী দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আসেন তাদের ভর্তির বিষয়ে পরামর্শ জরুরি বিভাগ দিতে পারে। কিন্তু মতিয়ারের ঘটনা যেহেতু অনেক আগের তাই তাকে বহির্বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ২৭ নভেম্বর সকালে পঙ্গু হাসপাতালের বহির্বিভাগের কনসালটেন্ট ড. শ্যামল চন্দ্র দেবনাথ জানান, এই মুহূর্তে মতিয়ারের সার্জারি সম্ভব না। আগে তাকে শারীরিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। সেজন্য তিনি ফিজিওথ্যারাপির পরামর্শ দেন এবং মতিয়ার শারীরিকভাবে কিছুটা সক্ষম হওয়ার পর তার সার্জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।
মতিয়ারের বিষয়ে আর কী করার আছে- জানতে চাইলে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘আমি মনে করি বিদেশ থেকে যারা প্রতারিত হয়ে আসে, অসহায় অবস্থায় কিংবা অসুস্থ হয়ে তাদের জন্য আমাদের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা থাকা উচিৎ। যেহেতু তিনি বাংলাদেশের নাগরিক সেহেতু আমরা কিভাবে তার সহায়তা করতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। আমরা এই মুহূর্তে মতিয়ারকে চিকিৎসার জন্য সহায়তা করছি। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ হলে তার আইনি সহায়তার ব্যবস্থাও আমরা করবো।’
এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। কিন্তু মতিয়ার কোনও কথা বলতে না পারায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হবে না।

/জেজে/ওআর/
সম্পর্কিত
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
কানাডায় দ্বিতীয়বার ‘ডিরেক্টরস ক্লাব অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন মাহবুব ওসমানী
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে ম্যানিলায় শিশু-কিশোরদের মিলনমেলা 
সর্বশেষ খবর
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী