X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে নির্মাণসামগ্রী, কাউকে পাত্তা দেন না বাড়ির মালিক

শাহেদ শফিক ও রাফসান জানি
১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৩১আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:৫৭

রাস্তাজুড়ে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী, ড্রেনেজ বন্ধ হয়ে উপচে পড়ছে ময়লা পানি রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কলাবাগান বশিরউদ্দিন রোডের লাল ফকিরের মাজার সংলগ্ন সড়কটিতে নির্মাণসামগ্রী রেখে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে এই এলাকার ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের স্যুয়ারেজ লাইনে নির্মাণসামগ্রী জমে গিয়ে   সড়কজুড়ে সয়লাব হয়ে আছে ময়লা পানিতে। এতে করে সড়কটিতে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। গত চার মাস ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই সমস্যার উত্তরণে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান ওয়াসা, রাজউক ও সিটি করপোরেশনের কোনও তৎপরতা বা তদারকি দেখা যায়নি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন জানা গেছে, মাজার সংলগ্ন পাশের একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। বাড়ির মালিক তার ভবনের নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় ওপরে রেখেই নির্মাণ কাজ করছেন। ভবনের নির্মাণ কাজে ওয়াসার পানির লাইন কেটে অবৈধভাবে সংযোগ নিতে গিয়ে লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছেন। ফলে ওই সংযোগ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে। যদিও এ দাবি অস্বীকার করেন বাড়ি মালিক মুকুল আহমেদ।

জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা তাদের স্যুয়ারেজ ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা ও পলিথিন জমে লাইন বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এখন আমি নিজেই ওয়াসাকে ডেকে তাদের গাড়ি দিয়ে পানি অপসারণ করে দিচ্ছি।’

ময়লা পানিতে সয়লাব সড়ক, দায় নিচ্ছে না কেউ নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সড়ক দখল করে ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সবাই করে। আমি রাস্তার একপাশে মালামাল রেখেছি। না হয় মালামাল কোথায় রাখবো? নিরুপায় হয়ে রাস্তায় রেখেছি। অফিসাররা এসে আল্টিমেটাম দিয়ে গেছেন। এখন থেকে আর রাখবো না।’

স্থানীয়দের দাবি, নির্মাণসামগ্রী দিয়ে রাস্তা দখল না করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে  বাড়ির মালিক মুকুল আহমেদকে  বহুবার অনুরোধ করলেও তিনি তাদের কথা রাখেননি। তিনি তার নিজের এক ভাইকে কখনও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করে প্রায়ই এ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছেন। তার বিষয়ে কাউকে অভিযোগ করলেও কোনও কাজে আসছে না।

শুক্রবার  (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে বশিরউদ্দিন রোডের লাল ফকিরের মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়কটির একটি অংশ জুড়ে ভবন নির্মাণের জন্য ইটা-পাথর, রড ও বালুর স্তুপ জড়ো করে রাখা হয়েছে। বাকি অংশ জুড়ে রয়েছে ময়লা পানি। স্যুয়ারেজ লাইন উপচে পড়ে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবির মুখে ঢাকা ওয়াসার একটি পাম্প মেশিনও দেখা গেছে ওই সড়কে। ওই মেশিন দিয়ে পাম্পিং করে ড্রেনের পানি পাশের অন্য একটি ম্যানহোলে ফেলা হলেও স্থানীয়রা বলছেন— এটা সাময়িক। পাম্পিং বন্ধ করলেই আবারও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বাড়ি মালিককে কোনও কথা বললে তিনি উল্টো তেড়ে আসেন। কোনও কথাই পাত্তা দেন না। অনেক দিন ধরেই আমরা মহল্লাবাসী তাকে বলে আসছি— তিনি যেন রাস্তায় ইট-বালি না রাখেন। তিনি কারও কথায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না।  মুকুল আহমেদ কখনও নিজেকে সচিবালয়ের বড় কর্মকর্তা দাবি করেন। এখন স্যুয়ারেজ লাইন বন্ধ হয়ে রাস্তায় পানি জমে গেছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায় না। মসজিদে নামাজে গেলে নাপাক পানি লেগে অজু নষ্ট হয়ে যায়।’

কর্মরত ওয়াসার একজন কর্মী জানান, প্রাথমিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এখনে পানির লাইন ফেটে গেছে। কেউ লাইন কেটে পানির সংযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এছাড়া, পানি অপসারণ করতে গিয়ে দেখেছি— এখানকার লাইনে বিপুল পরিমাণ ইট-পাথর ও বালু জমে ভর্তি হয়ে রয়েছে। এগুলো পুরোপুরি অপসারণ করা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

ড্রেনের পানিতে সড়কে জলাবদ্ধতা, এলাকাবাসির অভিযোগ- সড়কে রাখা নির্মাণসামগ্রী এর জন্য দায়ী জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্থানীয় (১৭ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর সালাউদ্দিন আহমেদ ঢালী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে এটা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই রাস্তার ওপরে নির্মাণসামগ্রী রেখে বাড়ি নির্মাণ করে। জিজ্ঞাস করলে বলে, কোথায় রাখবো? লাল ফকিরের মাজার এলাকার ঘটনাটি আমার জানা নেই। আমি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শককে  সেখানে পাঠিয়েছি। আমি নিজেও ওই এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। আমরা বাড়ি মালিককে আজ (শুক্রবার) রাত পর্যন্ত সময় দিয়েছি। তিনি যদি এগুলো অপসারণ করে না নেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পেট্রোল টিমকে পাঠিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেবে।’ পেট্রোল টিমের দায়িত্বে থাকা এসআই আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল ঘুরে এসে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রী রাস্তার মধ্যে ফেলে রাখায় স্থানীয়দের চলাচলে বাধার সৃষ্ট হচ্ছে। পানির লাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।  ভবন মালিককে রাস্তা থেকে নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিতে বলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা অপসারণ করা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

এদিকে, রাজধানীতে শুধু এই সড়কটিই নয়, বেশ কয়েকটি সড়কে দেখা গেছে এমন চিত্র। এর মধ্যে খিলগাঁও তারাবাগের ফায়ার স্টেশন সংলগ্ন সড়ক,তিলপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন সড়ক ও মিরপুরের বিভিন্ন অলিগলিতে ময়লা পানি দেখা গেছে। এসব এলাকায় বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও স্যুয়ারেজের দুর্গন্ধ পানির জন্য জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার অলিগলি থেকে শুরু করে ভিআইপি সড়কেও দেখা যাচ্ছে ময়লা পানির এমন চিত্র। ফলে সড়কজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ময়লা-আবর্জনা, আর সেই  সঙ্গে দুর্গন্ধ। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর নাগরিক ভোগান্তিও চরমে পৌঁছেছে। এ নিয়ে ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন ও রাজউকের নেই কোনও মাথাব্যথা।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ