X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগুনের ঝুঁকিতে রাজধানীর ৪২২ হাসপাতাল

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৮:১৭আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:৫৭

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুন লাগে
রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অধিকাংশই রয়েছে আগুন লাগার ঝুঁকিতে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পক্ষ থেকে বারবার এসব হাসপাতালকে নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা হলেও তা আমলে নিচ্ছে না এসব জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। ফায়ার সার্ভিসের জরিপ অনুসারে শুধু রাজধানীতে হাসপাতালের সংখ্যা মোট ৪৩৩টি। এর মধ্যে আগুন লাগার ঝুঁকিতে আছে ৪২২টি হাসপাতাল। এই ঝুঁকির তালিকায় থাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আগুন লেগে ভয়াবহ ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এরপরও টনক নড়েনি অগ্নিঝুঁকিতে থাকা বেশিরভাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।    
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নতুন ভবনে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগে। হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে জানতে পারলেও এখনও আগুন লাগার কারণ জানানো হয়নি। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।  সেদিন ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ৮টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।  যদিও সেদিন ওই ভবনে থাকা রোগীদের সবাইকে দ্রুত বাইরে নিয়ে আসা সম্ভব হয় এবং রোগীদের পরিস্থিতি দেখে বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে পাঠানো সম্ভব হয়, তারপরেও এ রকম একটি পরিস্থিতি রোগী, তার স্বজনসহ চিকিৎসাসেবা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ভাবিয়ে তোলে। সব মহলে প্রশ্ন ওঠে, সরকারি হাসপাতালও যদি আগুনের ঝুঁকির বাইরে না থাকে তাহলে নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা কোথায় কীভাবে পাওয়া যাবে?

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে লাগা আগুনের ধোঁয়া
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে লাগা আগুনের ঘটনা তদন্তে হাসপাতালটির পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়ার নেতৃত্ব সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৩ থেকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।প্রতিবেদনটিতে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতি সম্পর্কে জানা যাবে হয়তো কিন্তু, এই হাসপাতালটি যে আগুন লাগার ঝুঁকিতে ছিল সে সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহু আগেই সতর্ক করেছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এমনকি এখানে আগুন লাগা ও উদ্ধারের মহড়াও করে ফায়ার সার্ভিস। বিষয়টি স্বীকার করেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক (ডিজি) উত্তম কুমার বড়ুয়া।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার ঘটনার প্রায় ৫-৬ মাস আগে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ফায়ার সার্ভিসের একটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই মহড়া আমাদের কাজে লেগেছে, সেই কারণে অগ্নিকাণ্ডের  সময় আমরা রোগীদের দ্রত বের করতে পেরেছি।’

আতঙ্কিত রোগীদের বের করে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয় মাঠে
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের কোথাও যদি কোনো ল্যাকিংস (ত্রুটি) থাকে তবে সেগুলো খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিকে ঘটনা পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এখনও তা পাওয়া যায়নি।     
ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান উপ পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) দিলীপ কুমার ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। আমরা কাজ করছি। আগুনের ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি এখনও নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। আরও সময় লাগবে।’
ফায়ার সার্ভিসের করা তালিকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালকে রাখা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায়। অথচ এর চেয়েও অতি ঝুঁকিপূর্ণ আরও ১৭৩টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা না রেখেই দিব্যি দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

খুবই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা রাজধানীর বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিচতলায় নেই অগ্নি নির্বাপনের ফায়ার অ্যালার্মসহ অন্যান্য জরুরি সরঞ্জাম
২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর চারটি অঞ্চলে থাকা হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো পরিদর্শন করে একটি তালিকা তৈরি করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। এরপর একই বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যসন্ত দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে সংস্থাটি। অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ও সক্ষমতার দিকটি পরিদর্শন করে এগুলোকে মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। তালিকা অনুযায়ী অগ্নিকাণ্ডের ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ হাসপাতাল হিসেবে ১৭৩টি এবং ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ২৪৯টি এবং সন্তোষজনক হিসেবে মাত্র ১১টি হাসপাতালকে চিহ্নিত করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংস্থাপনের বিষয়ে এ পর্যন্ত তিন দফা নোটিশ এবং করণীয় নির্দেশক স্মরণিকা দেওয়া হলেও তা আমলেই নেয়নি হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ। আগুনঝুঁকি মোকাবিলায় এখনও যদি এসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ না নেয় তাহলে যে কোনও সময় এর যে কোনওটাতেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

 বক্ষব্যাধি হাসপাতালের নিচতলায় ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকলেও তা আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট নয়
তালিকায় ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে- জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইএনটি, মেট্রোপলিটন মেডিক্যাল সেন্টার, হাইটেক মর্ডান সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, এস.পি.আর.সি অ্যান্ড নিউরোলজি হাসপাতাল, ফার্মগেটের আল রাজী হাসপাতাল, ব্রেইন অ্যান্ড লাইফ কেয়ার হাসপাতাল, তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সি পি এইচ ডি জেনারেল হাসপাতাল, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, গুলশানের প্রত্যয় মেডিক্যাল ক্লিনিক, প্রমিসেস মেডিক্যাল লিমিটেড, গুলশান মা ও শিশু ক্লিনিক, আর এ হাসপাতাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট,বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল ইত্যাদি।
ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকা হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে শাহবাগের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হোসপাতাল, বারডেম হাসপাতাল, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, আগারগাঁও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপতালা, নাজিরা বাজার মাতৃসদন হাসপাতাল, মহাখালির আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট, মনোয়ারা হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এম.এইচ শমরিতা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ, ল্যাবএইড হাসপাতাল, পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিরপুরের মেরিস্টোপ বাংলাদেশ, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল, মরিপুর হলি ক্রিসেন্ট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক কমপ্লেক্স, সিকদার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সরকারি ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডি জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হাসপাতাল, ধানমন্ডি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিএসওএইচ হাসপাতাল, প্যানোরমা হসপিটাল লিমিটেড ও ধানমন্ডি মেডি এইড জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেড।

সরকারি হাসপাতালগুলোর কাজ সরকারি ইলেকট্রিশিয়ান করায় বিদ্যুতের তার বের করে রাখে যেভাবে খুশি। একাধিক হাসপালে দেখা গেছে এমন চিত্র।


ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে দুই দফা ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলো পরিদর্শন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এ পর্যরন্ত তাদের তিন দফা নোটিশ ও স্মরণিকা দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের কোনও অগ্রগতি নেই।’
ফায়ার সার্ভিস ওয়্যার হাউজ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এসব হাসপাতাল ভবনের ধারণক্ষমতা, বেইজমেন্ট আছে কিনা, সাধারণ সিঁড়ির সংখ্যা ও প্রশস্ততা, জরুরি নির্গমণ সিঁড়ির সংখ্যা, লিফটের সংখ্যা, হাসপাতালের র্যা ব আছে কিনা, জেনারেটর রুম, ট্রান্সফরমার রুম, সুইচ গিয়ার রুম, পাম্প রুম, ফায়ার কন্ট্রোল রুম আছে কিনা, প্রতি তলায় স্মোক/হিট ডিটেক্টর আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়।
খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতালগুলোর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ও ঝুঁকির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে মহাখালী এলাকার দুটি হাসপাতাল পর্যবেক্ষণ করা হয়।  এর প্রথমটি বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৫৫ সালে প্রথমে যক্ষ্মা হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটিতে ২০০ শয্যা থেকে বর্তমানে ৬৭০ শয্যার সুবিধা আনা সম্ভব হলেও এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করা হলেও আগুন লাগার ঝুঁকি মোকাবিলায় তেমন কোনও পরিকল্পনাই নেওয়া হয়নি। এই হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় প্রতিটি ওয়ার্ডে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার থাকতে দেখা গেলেও জরুরি বিভাগসহ গ্রাউন্ড ফ্লোরে কোনও স্মোক/হিট ডিটেক্টর, ফায়ার এলার্ম, দেখা যায়নি। ভবনের প্রায় সবকয়টি দেয়ালে বৈদ্যুতিক তারগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঝুলে আছে। এছাড়া আলাদা কোনও ফায়ার কন্ট্রোল রুম দেখা যায়নি।
হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদুর রহমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। তবে ট্রমা সেন্টারে সংস্থাপনের কাজ চলছে। সেটি শেষ হলে সেখানেও অগ্নিনির্বাপন সিলিন্ডার রাখা হবে।’
হাসপাতাল ভবনের দেয়ালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা বৈদ্যুতিক তার থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের সকল বৈদ্যুতিক কাজ পিডব্লিউডি’র ইলেক্ট্রিশিয়ানরা করে দেয়। অনেক পুরোনো হাসপাতাল। তাই সেগুলো এভাবেই রয়েছে।’   
তিনি বলেন, ‘বর্তমানের হাসপাতালটি ৬৭০ শয্যা বিশিষ্ট এবং এর ভবনও অনেক পুরাতন। আমরা এই হাসপাতালটিকে ১ হাজার ২০০ শয্যা বিশিষ্ট করার জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সেটির অনুমোদন পেলে নতুন করে ভবনের কাজ শুরু করা হবে। তখন ভবনের সবকিছুই আমরা আধুনিকভাবে প্রস্তুত করবো। অগ্নিনির্বাপনের ক্ষেত্রে যেসব আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা প্রয়োজন সেগুলো সামনে আমাদেরও হবে বলে আশা করছি।’

এই একটি মাত্র সিঁড়ি আছে ৯ তলা বিশিষ্ট মহাখালী ক্যানসার হাসপাতালের ৭ম তলা পর্যন্ত। ওপরের দুই তলা উঠতে হয় লিফট দিয়ে। হাসপাতালটিতে জরুরি বের হওয়ার কোন পথ নেই।
এর কাছেই অবস্থিত জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালটিও ফায়ার সার্ভিসের তালিকায় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি এই হাসপাতালটিও সরেজমিন পরিদর্শন করা  হয়। প্রায় দশ বছর বয়সী এই মহাখালীর এই হাসপাতালটির গিয়ে দেখা গেছে, ৯তলা ভবনটিতে ওঠা-নামার জন্য একটি মাত্র সিঁড়ি, তাও সেটি ৭ম তলা পর্যন্ত। জরুরি বের হওয়ার জন্য আরও কোনও সিঁড়ি নেই। ভবনটি অষ্টম ও নবম তলায় ওঠার জন্য কোনও সিঁড়ি নেই। যাতায়াত করতে হয় লিফট দিয়ে। ভবনটিতে রোগীসহ সবার ব্যবহারের জন্য মাত্র ২টি লিফট রয়েছে। হাসপাতালটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে স্মোক/হিট ডিটেক্টর দেখা যায়নি। তবে হাসপাতালে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণের কিছু ব্যবস্থা থাকতে দেখা গেছে। গ্রাউন্ডফ্লোরে একটি অগ্নিনির্বাপনে ব্যবহারের জন্য পানির লাইন থাকতে দেখা গেছে। হাসপাতালটির পাশের ভবনেও বৈদ্যুতিক তারগুলো বাইরে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ড মো. কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এই হাসপাতালের ওঠানামার জন্য একটি সিঁড়ি পথ রয়েছে। সেটি ৭ম তলা পর্যন্ত। ৮ম ও ৯ম তলায় লিফটের মাধ্যমে যাওয়া আসা হয়। ভবনের ৭ম তলা পর্যন্ত রোগীদের ওয়ার্ড ও কেবিন ব্লক রয়েছে। মোটামুটি প্রতি ফ্লোরেই অগ্নিনির্বাপন সিলিন্ডার আছে।’  
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) আলী আহম্মদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ এসব হাসপাতালগুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বারবার প্রেশার (চাপ) দেওয়া হচ্ছে। তারা আমাদের নির্দেশনা মানছে না বলে হুট করেই হাসপাতাল বন্ধ করা যায় না। এবিষয়ে আমরা সবাইকে ডাকবো এবং ফায়ার সার্ভিসের শর্ত অনুযায়ী হাসপাতাল ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার প্রণয়ন করাতে চেষ্টা করবো।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হয়ত জেনে সন্তুষ্ট হবেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরদিনই শুক্রবার আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটি প্রেস ব্রিফিং করেছেন। এসময় তিনি বলেছেন আমাদের যে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাটা এটা আমাদের চাহিদার চেয়ে অনেক অপ্রতুল এবং যত নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা কেন্দ্র সেগুলাতে আধুনিক অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা রাখা হবে। যেগুলো পুরনো আছে সেগুলোতে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র সংযোজন করব। সময় সময় ধরে মহড়ার ব্যবস্থা করে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে আমরা রোগীদের সবাইকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করবো। এক্ষেত্রে  গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় সবগুলোর আন্তঃ মন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। একটা জরুরি সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করবো।’
এসময় তিনি গণমাধ্যমের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।


/এসজেএ/এসটি/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা