X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

'উগ্রবাদ দূর করতে দরকার পরিবারভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা'

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৫ মার্চ ২০১৯, ১৬:০০আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৯, ১৬:০৩

জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'তারুণ্য রুখবে সহিংস উগ্রবাদ' শীর্ষক নাগরিক সংলাপবাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদের সূচনা হয়েছিল তার সৃষ্টি এ দেশের কারও মাধ্যমে হয়নি। উগ্রবাদ দূর করতে দরকার পরিবারভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা। কেননা এই ভূখণ্ডের মানুষ যথেষ্ট শান্তিপ্রিয় ও সম্পূর্ণরূপে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান করে। যার ফলে খুব দ্রুতই জঙ্গিবাদকে দমন করা সম্ভব হয়েছে। সোমবার (২৫ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে 'মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত 'তারুণ্য রুখবে সহিংস উগ্রবাদ' শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।
নাগরিক সংলাপে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, উগ্রবাদ দূর করতে হলে প্রথমেই দরকার পরিবারভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা। প্রথমে পরিবার, এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, তারপর সামাজিক পরিবেশে ও সবশেষে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই উগ্রবাদবিরোধী মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এই শ্রেণিগুলো উগ্রবাদ চিন্তাধারাকে প্রশ্রয় না দিলে কোনও দেশেই তথা বিশ্বের উগ্রবাদ শব্দটিই আর থাকবে না। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো উগ্রবাদীদের লালন-পালন করে। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশেও উগ্রবাদের সূচনা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। আর আমাদের দেশের জনগণ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। ধর্মের বিষয়টি যদি রাষ্ট্রসমাজ ও গোত্রের বাইরে রাখতে পারি তাহলে জঙ্গি দমনে আরও সফলতা আসবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে সহিংস উগ্রবাদের মতো নিষ্ঠুর বাস্তবতা কোনও রাজনৈতিক মতবাদ বা নির্দিষ্ট উদ্দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পরিসংখ্যান বলে উগ্রবাদ সৃষ্টির কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই। কেননা একেক পরিস্থিতিতে একেকভাবে উগ্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে। কোনও ছকেই এই উগ্রবাদকে সরলীকরণ করা যাবে না। পাশাপাশি ধর্মের কারণে এককেন্দ্রিক চেতনার ফলে সহিংসতারও সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এ দেশে হরকাতুল জিহাদের কারণে যে সহিংস কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তারা আফগান ফেরত যুদ্ধ বলে নিজেদের দাবি করেছিল। এরপর এসেছে জেএমবি। আর এই সব উগ্রবাদ যে শুধুমাত্র ধর্মের কারণে সৃষ্টি হয়েছে তাও বলা যাবে না। প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতার অপব্যবহার এর পেছনে দায়ী হতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের ডিআইজি খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, দায় এড়ানোর সংস্কৃতি বাঙালিদের নেই। এই বাঙালি সত্তাকে সব সময় জাগ্রত রাখতে হবে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মনের মিল রয়েছে। সে অনুসারে এই অপরূপ প্রকৃতির দেশে বাঙালি সত্তাকে সমন্বিত করলেই আমাদের সংবিধান সার্থক হবে। জঙ্গিবাদ আমাদের ওপর অপরিচিত একটি অবয়ব। এর সূচনা আমাদের দেশে নয়। এটি নির্মূলেও দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর অবদান রয়েছে।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সহিংস উগ্রবাদ মোকাবিলায় আমরা তৃপ্ত নয়, এটি তৃপ্ত হওয়ার বিষয়ও নয়। সাধারণত বিভিন্ন জাতীয় দিবসের আগেই উগ্রবাদীদের অপকর্মগুলো ঘটে থাকে। তাই আমরা ঢাকা শহরে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। আর আমাদের সামর্থ্যকে সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শন করে উগ্রবাদীদের ভয় দেখানোর লক্ষ্যে সোয়াতসহ বিভিন্ন বাহিনীকে নামানো হয়েছে।
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার চন্দন বেনেডিক্ট গোমেজ বলেন, আমরা আলোকিত মানুষ হতে শিখাই জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত করার মাধ্যমে। আমাদের মূলমন্ত্র একটি সুন্দর হৃদয় সৃষ্টি করার লক্ষ্যে। ধর্ম আমাদের শেখায় আরও ভালো মানুষ হতে।
এ সময় বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় বলেন, ধর্মটা রাজনীতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব কমে যাচ্ছে। এ কারণে সাম্প্রদায়িকতার সৃষ্টি হয়েছে। আসলে এই উগ্রবাদ দমন করতে হলে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে সচেষ্ট হতে হবে।
রামকৃষ্ণ মিশনের সহকারী সম্পাদক স্বামী সেবানন্দ বলেন, সব ধর্মই সত্য। এটা সবাই স্বীকার করে নিলে হানাহানি বন্ধ হবে। অর্থাৎ সকল ধর্মের লোকদের সম্মান করতে হবে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পরে বিভিন্ন শ্রেণি থেকে আশা মানুষগুলোর মাঝে আর কোনও ভেদাভেদ থাকে না। তারা একই পদে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত থাকে। মানুষকে ঠিক সেই কাতারে বিচার করতে হবে। কেননা উগ্রবাদ একটি রোগ মাত্র।
এদিকে তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, নিউজিল্যান্ডের ঘটনা প্রমাণ করেছে মুসলিমরা শান্তিপ্রিয়। ওই উগ্রবাদীরা মসজিদের গেট খুলতে বললেও গেট খুলে দেওয়া হয়। তাছাড়া মনে রাখতে হবে নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ নাগরিক অধিকার ও মানুষের সম্মান নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। আমি সৌদি আরবে গিয়েও এতটা সম্মান পাইনি, এসব দেশে গিয়ে যতটা সম্মান পেয়েছি। আমাদের দেশে নৈতিকতা শেখার জন্য উপযুক্ত কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। যে কারণে শিশু ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের আনন্দদায়ক পরিবেশ উপহার দিতে হবে তাদের ভালো মানসিকতায় পরিবর্তিত করতে হবে। তাহলেই সহিংস উগ্রবাদ এড়িয়ে চলা সম্ভব।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে নাগরিক সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সম্প্রীতি প্রকল্পের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার আইরিন বাশার রিফাত, ইসরাত পারভীন, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ শায়লা মনোয়ার প্রমুখ।

 

/এসও/ওআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
দেশের জন্য কাজ করতে আ.লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী