X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসন-যানবাহন সংকট ও বিরতিহীন দায়িত্ব পালন

জামাল উদ্দিন
১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৩২আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৫:৩৭

পুলিশের সমস্যা

অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে পুলিশের সক্ষমতা ও আধুনিকায়ন এখন দৃশ্যমান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে পুলিশের সুনাম বেড়েছে। অপরাধ দমনে পুলিশের সফলতাও কম নয়। বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করেই প্রতিদিন কাজ করতে হয় তাদের। দীর্ঘ সময় ধরে বিরতিহীন দায়িত্ব পালন, ঝুঁকি ভাতা না পাওয়া, আবাসন ও যানবাহন সমস্যাসহ এই পেশায় কর্মরতদের রয়েছে নানান সমস্যা।

পুলিশ সদস্যরা বলছেন, বাংলাদেশ পুলিশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আধুনিকায়ন এবং সক্ষমতাও বেড়েছে। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের দুঃখ-কষ্টের সমাধান হয়নি। বেতনভাতা, রেশন সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা পেলেও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদেরকে অমানবিক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। প্রতিদিন কম করে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদস্যরা। দায়িত্ব পালনের আগে ও পরে আরও দেড়-দু’ঘণ্টা সময় ব্যয় হয় প্রস্তুতি নিতে। দেখা যায়, অমানুষিক পরিশ্রম করার পরও তারা ঘুমানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় পান না। এ পেশায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত পরিশ্রম করলেও এজন্য পুলিশ সদস্যদের বাড়তি কোনও সুবিধা বা ভাতা দেওয়া হয় না।

রাজধানীতে বিভিন্ন থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশে পুলিশের সংখ্যা দু’লাখেরও বেশি। তাদের রয়েছে তীব্র আবাসন সংকট। থানাগুলোতে পর্যাপ্ত গাড়িও নেই। গাড়ির অভাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় থানা পুলিশকে। রিকুইজিশন করা গাড়ি, সেটাও না থাকলে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে অভিযানে যেতে হয় তাদের। পুলিশ সদস্যরা জানান, নতুন যেসব গাড়ি আসে সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই ব্যবহার করেন। থানায় দেওয়া হয় পুরনো গাড়িগুলো। একটি গাড়ি ওসির জন্য বরাদ্দ থাকে। অন্য ইন্সপেক্টরদের জন্য কোনও গাড়ি নেই। বর্তমানে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি থানায়ই ওসিসহ তিন থেকে চারজন ইন্সপেক্টর রয়েছেন। ওসির গাড়ি ফাঁকা থাকলেই কেবল সেটা ইন্সপেক্টররা ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেই সুযোগ কমই হয়। ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টরদেরকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাড়ি সংগ্রহ করে বিভিন্ন অপারেশনে যেতে হয়। এছাড়া, নতুন মডেল থানাগুলোতে সমস্যা কম থাকলেও পুরনো থানাগুলোতে রয়েছে জায়গার সংকট। এ কারণে থানার কর্মকর্তারা দাফতরিক কাজে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারেন না। জানা গেছে, রাজধানীর শাহবাগ থানায় বর্তমানে অফিসার আছেন ৭২ জন। তাদের সবার জন্য বসার জায়গা নেই। এই থানায় কনস্টেবল আছেন ৫০ জন। তাদের ব্যবহারের পিকআপ আছে মাত্র চারটি।

একটানা দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনের বিষয়ে পুলিশ সদস্যরা জানান, ১৫-১৬ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি কোনও টাকা বা সরকারি ভাতাও নেই। তবে ইদানীং রায়ট পুলিশসহ কিছু সদস্য মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় দেড় থেকে দু’শ টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন স্থানে পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়। তখন স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে তাদেরকে বিপাকে পড়তে হয়। বছরের মাঝামাঝি বদলি হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তি করানোর সুযোগ পাওয়া যায় না। বিশেষ করে জুন-জুলাই মাসে বদলি হলে এ ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয়। অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয়— সিট খালি নাই।

রাজধানীর একটি থানায় কর্মরত একজন ইন্সপেক্টর (অপারেশন) নাম প্রকাশ না করে জানান, আগে মামলার তদন্ত বিল একেবারেই দেওয়া হতো না। এখন মামলা অনুযায়ী এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত তদন্ত বিল দেওয়া হয়, এটা একেবারেই সামান্য। একটি মামলা তদন্তে যদি এক থেকে দু’বছর সময় লাগে, তখন কি মাত্র দুই হাজার টাকা খরচ হয়? এতে কিছুই হয় না। এছাড়া, ইন্সপেক্টরদের সোর্স মানি দেওয়ার কথা। সেটাও দেওয়া হয় না। সোর্স মানি শুধু ওসি ও তার ওপরের কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন। অভিযোগ আছে, ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে প্রমোশনের ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ কোটা মানা হয় না।

শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পুলিশের ডিউটি তো ২৪ ঘণ্টা। যেকোনও সময় ডাক আসলেই বেরিয়ে যেতে হয়। রায়ট পুলিশসহ লাইনের পুলিশ সদস্যরা শিফটিংয়ে ডিউটি করেন। সাব ইন্সপেক্টরদের তো ১২ ঘণ্টার নিচে ডিউটি হয় না। এটা সাধারণ হিসাব।’ তিনি বলেন, ‘একটানা দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করে ক্লান্ত হয়ে যান সবাই। মেট্রোতে যারা নাইট করেন, তাদের ডিউটি রাত আটটা থেকে সকাল আটটা। পরদিন আবারও দুপুর দুইটা থেকে তাদেরকে ডিউটি করতে হয়। আট ঘণ্টা বলতে পুলিশের কোনও ডিউটি নাই। তাদের ডিউটি ১২ ঘণ্টার ওপরে। এজন্য কোনও বাড়তি ভাতাও নাই।’

সন্দ্বীপ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবদুল হালিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইন্সপেক্টরদের কোনও ঝুঁকিভাতা দেওয়া হয় না। সারাবছরে এক মাসের বেসিকের ঝুঁকিভাতা দেওয়া হয়। সবাই তো মাঠে কাজ করতে যান। তারা কি ঝুঁকি নেন না? মডেল থানাগুলোতে চারজন করে ইন্সপেক্টর আছেন। তাদের ঝুঁকিভাতা দেওয়া হয় না। সাব ইন্সপেক্টরদের ১২ মাসই ঝুঁকি ভাতা দেওয়া হয়।’ সাব ইন্সপেক্টরদের মতো ইন্সপেক্টরদেরও ঝুঁকিভাতা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

পুলিশ সদস্যদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (প্রশাসন) মিলন মাহমুদ বলেন, ‘সিভিল সার্ভিসে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন আপনাকে বলা হয়— ২৪ ঘণ্টাই ডিউটি। অতিরিক্ত ডিউটিসহ অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়তো আর্থিক সক্ষমতা বাড়লে সরকার অবশ্যই দেখবে। আর আবাসন সমস্যা সবার জন্যই। এটা শুধু পুলিশের সমস্যা নয়। সবার জন্যই একটা সংকট। এটাও সরকারের বিবেচনায় আছে। আমরা এখন যেখানে জায়গা পাচ্ছি, সেখানে আবাসন সংকট নিরসনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যেখানে একতলা ভবন ছিল সেখানে পাঁচতলা বা ২০ তলা ভবন করার প্ল্যান করছি, যাতে বেশিসংখ্যক লোকের আবাসন সমস্যা নিরসন হয়। এটা নিয়ে পুলিশ সপ্তাহের কল্যাণ সভায়ও কথা হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন— আবাসন সমস্যার নিরসন করবেন। একটু সময় লাগলেও সমস্যার সমাধান হবে।’

আরও পড়ুন:

পুলিশে রেশনের চাল নিয়ে যত অভিযোগ

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা