X
রবিবার, ১২ মে ২০২৪
২৯ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ অর্থে বিদেশেও সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছেন কাউন্সিলর মিজান

শেখ জাহাঙ্গীর আলম
১২ অক্টোবর ২০১৯, ০১:১৭আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০১:৪৫

হাবিবুর রহমান মিজান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে মোহাম্মদপুরে গড়ে তুলেন অপরাধের সাম্রাজ্য। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল, টেন্ডারবাজির মাস্টার হিসেবে বেশ সুপরিচিত তিনি। নিজের কোনও ব্যবসা নেই, তবুও দেশে-বিদেশে রয়েছে তার কোটি কেটি টাকার সম্পত্তি। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মিজানের আলিশান দুটি বাড়ি ও দামি গাড়ি থাকার সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দুর্নীতিগ্রস্ত এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ভোরে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে তার এক বান্ধবীর বাসা থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ওই সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন ও নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর তাকে ঢাকায় নিয়ে এসে প্রথমে লালমাটিয়ায় তার কাউন্সিলর কার্যালয়ে এবং পরে মোহাম্মদপুরে আওরঙ্গজেব রোডে তার বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। কার্যালয়ে অবৈধ কিছু না পেলেও বাসা থেকে ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক ও এক কোটি টাকার এফডিআর উদ্ধার করে র‌্যাব।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে র‌্যাব জানায়, কাউন্সিলর মিজানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে জমি দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনাকারীদের সঙ্গে মিজানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেফতার এড়াতে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন মিজান। এর জন্য গত মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) তিনি ঢাকা ছেড়ে শ্রীমঙ্গলে চলে যান। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার মিজান ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ টাকা তুলেছিলেন। তবে সেই টাকা কোথায় রেখেছেন সেটি স্বীকার করেননি। কাউন্সিলর মিজানের বিরুদ্ধে সিলেটের শ্রীমঙ্গল থানায় একটি অস্ত্র মামলা এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাউন্সিলর মিজানের বাসায় অভিযান চালিয়ে ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ব্যাংকের ৮টি চেক পাওয়া যায়। এছাড়াও ৩টি এফডিআর মিলে মোট ১ কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, বিভিন্ন ডেভেলপার্স কোম্পানির জমি দখলে সহায়তার জন্য এসব চেক তাকে দেওয়া হয়েছিল।’

সারোয়ার আলম আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে মিজানের নিজস্ব কোনও ব্যবসা নেই। কাউন্সিলর হিসেবে যে সম্মানী (৩৬ হাজার টাকা) পান সেটিই তার একমাত্র আয়ের উৎস। তবে উদ্ধার হওয়া কোটি টাকা ও বিদেশে বাড়ি-গাড়ি কীভাবে হয়েছে মিজানের? আমরা ধারণা করছি, এসব সম্পত্তি সে অবৈধ অর্থ দিয়ে গড়েছেন।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাউন্সিলর মিজান মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের কাছে ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তাকে পাগলা মিজান নামে সবাই চেনে। মোহাম্মদপুরে অপরাধীদের প্রশ্রয়দাতা ছিলেন এই কাউন্সিলর। তার কারণে মোহাম্মদপুরে অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটলেও ক্ষমতার জোরে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যেত।

জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাউন্সিলর মিজান জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতো। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বিভিন্ন বড় বড় হোটেলে মিটিং করতেন, আড্ডা দিতেন। ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দৈনিক ৩০ হাজার টাকা নিতেন মিজান। আর এই টাকা তোলার কাজে নিয়োজিত ছিল মর্তুজা, জিলানীসহ কাউন্সিলরের লোকজন। এছাড়াও টোল মার্কেটের একক নিয়ন্ত্রক ছিল মিজানের। ক্যাম্পের বিদ্যুতের সংযোগ দুটি ভাগে ভাগ করে একটি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের দেওয়া হয় এবং অপরটি ক্যাম্পের বাজারে সংযোগ দেওয়া হয়। প্রায় ২৫০টি দোকান থেকে সে বিদ্যুতের টাকা তুলতেন তিনি। এতে মিজানের প্রতিমাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় ছিল।

কাউন্সিলর মিজানের লালমাটিয়ার কার্যালয়ে অভিযান
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে তিনটার দকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের লালমাটিয়ার কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম। তবে কার্যালয়ে অবৈধ কিছু পাওয়া যায়নি।

মিজানের মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান

শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোডের ৭/৩ নম্বর পান্থনীর বাসায় তার ফ্ল্যাটে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। ৬ তলা ভবরের ৫ তলায় তার ফ্ল্যাটে অভিযানে ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক এবং এক কোটি টাকার এফডিআরের ডকুমেন্ট জব্দ করা হয়। বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে মিজানের এই বাসার সামনে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ও নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে কাউন্সিলর মিজানের ফাঁসির দাবিতে মিছিল করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবনে হামলা

১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালায় একটি চক্র। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করা হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে ১৯৯৭ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১৬ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান ও তার ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা ছিল।

১৯৯৫ সালে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে মিজানের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর মারা যান। পরবর্তীতে মিজান তার নাম পরিবর্তন করে হাবিবুর রহমান মিজান রাখেন এবং ফ্রিডম পার্টি ছেড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘কাউন্সিলর মিজানের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলোর তদন্ত চলছে। আমরা তার বাসা থেকে উদ্ধর করা টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। কিন্তু সে এই টাকার কোনও উৎস সম্পর্কে বলতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হবে।’

আরও পড়ুন: 
বিদেশে পালিয়ে যেতে ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ টাকা তোলেন মিজান: র‌্যাব

কাউন্সিলর মিজানের বাসা থেকে ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক উদ্ধার (ভিডিও)

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ডিপ্লোমায় ভর্তির আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ডিপ্লোমায় ভর্তির আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
এক পদে ১০ জনকে চাকরি দেবে ওয়ালটন
এক পদে ১০ জনকে চাকরি দেবে ওয়ালটন
শ্রম আইন সংশোধনে আইএলও’র সঙ্গে আলোচনা চলছে: আইনমন্ত্রী
শ্রম আইন সংশোধনে আইএলও’র সঙ্গে আলোচনা চলছে: আইনমন্ত্রী
দুই হাত না থাকার পরেও জিপিএ-৫ পেলো রাব্বি
দুই হাত না থাকার পরেও জিপিএ-৫ পেলো রাব্বি
সর্বাধিক পঠিত
ইএফডিতে নজর দিয়ে হিরো হতে পারেন এনবিআরের চেয়ারম্যান
ইএফডিতে নজর দিয়ে হিরো হতে পারেন এনবিআরের চেয়ারম্যান
এসএসসি পরীক্ষার ফল জানা যাবে যেভাবে
এসএসসি পরীক্ষার ফল জানা যাবে যেভাবে
সোনার দাম আরও বাড়লো
সোনার দাম আরও বাড়লো
আজ বিশ্ব মা দিবস
আজ বিশ্ব মা দিবস
বিবি-বাইডেনের সখ্যতায় ফাটল কি লোক দেখানো?
বিবি-বাইডেনের সখ্যতায় ফাটল কি লোক দেখানো?