X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শত কোটির মালিক গণপূর্তের প্রকৌশলী মঈনুল

দীপু সারোয়ার
০৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৭:৫০আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৭:৫১

ড. মঈনুল ইসলাম

ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, দুর্নীতি আর অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে শত কোটি টাকারও বেশি সম্পদ ও নগদ অর্থের মালিক হয়েছেন গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুল ইসলাম। গণপূর্তের মাত্র তিনটি প্রকল্প থেকে এই সম্পদ গড়েছেন তিনি। র‌্যাব সদর দফতর নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহ্বান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ সংশ্লিষ্ট ভবন নির্মাণ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আবাসিক ভবনের মালামাল কেনাকাটায় এই দুর্নীতি করেছেন প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কথিত যুবলীগ নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম। 
রবিবার (৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মঈনুলকে  জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে গণপূর্তের প্রকৌশলী ও ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিয়ে নানা তথ্য দিয়েছেন তিনি। দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ও সহকারী পরিচালক গাজী নোয়ামুল আহসান জিজ্ঞাসাবাদ  তাকে করেন। 

তবে এ বিষয়ে প্রকৌলী মঈনুল কোনও তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। 

দুদক সূত্র জানায়, গত ২৬ ডিসেম্বর প্রকৌশলী মঈনুলের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই দিনই তলবি নোটিশ পাঠিয়ে ৫ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয় তাকে। তলবি নোটিশ পাঠান দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।  

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেট্রোপলিটন জোন) ড. মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:   
১. চাকরি জীবনের শুরু থেকেই মঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আছে। ১৫তম ব্যাচের সহকারী প্রকৌশলীরা ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর যোগদান করলেও মঈনুল ৯ মাস পর ১৯৯৬ সালের ১২ আগস্ট চাকরিতে যোগ দেন।
২. ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি চাকরিতে অনুপস্থিত ছিলেন। ৯ বছর ৮ মাস ২২ দিন অনুপস্থিত থাকায় মঈনুলকে চাকরি থেকে চূড়ান্ত অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য মন্ত্রণালয়ে আপিলের মাধ্যমে তিনি চাকরি ফিরে পান।

৩. গত বছরের ৫ জুন র‌্যাব সদর দফতর নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব সদর দফতর নির্মাণ কাজের টেন্ডার নিষ্পত্তির চেয়ারম্যান ছিলেন প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম। কথিত যুবলীগ নেতা ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সকে র‌্যাব সদর দফতর নির্মাণের কাজ পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় ভূমিকা রাখেন তিনি। বিধি অনুযায়ী প্রকল্পের দরপত্র গণপূর্তের ঢাকা সার্কেল-৩ থেকে আহ্বান ও তৎকালীন ঢাকা গণপূর্ত জোন থেকে মূল্যায়ন করার কথা। কিন্তু  নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গণপূর্তের সদর দফতর থেকে ওই টেন্ডার আহ্বান করে জি কে শামীমকে র‌্যাব সদর দফতরের কাজ পাইয়ে দেন মঈনুল।

৪. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভের ভবন নির্মাণে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প ৭.১৩ শতাংশ বেশিতে ঠিকাদারকে পাইয়ে দেন মঈনুল। ঠিকাদারের কাছ থেকে ১৩.৫ শতাংশ হারে কমিশন নেন।
৫. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আবাসিক ভবনের জন্য বালিশসহ ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় দুর্নীতির ঘটনায়  মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আসিফ হোসেন ও সাজিন কন্সট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. শাহাদাত হোসেনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় ঠিকাদার আসিফ ও শাহাদাত এবং ১১ জন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গত ১২ ডিসেম্বর মামলা হয়। মামলার আসামিরা সবাই মঈনুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ। মঈনুলের ভূমিকার কারণে আসামিরা ৩১ কোটি টাকারও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেন।

গণপূর্ত ঠিকাদার সমিতির পক্ষে গত ২০ নভেম্বর সোহেল রানা ও গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের পক্ষে গত ৫ ডিসেম্বর মো. বদরুদ্দীন ওমর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মঈনুলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে পৃথক অভিযোগ জমা দেন। অভিযোগে তার ছাত্র জীবন, রাজনৈতিক পরিচয় ও অর্থ-সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ড. মঈনুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সংস্থাটি। অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট নথিপত্রও পাওয়া গেছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেফতার হন জি কে শামীম। ৩০ সেপ্টেম্বর জি কে শামীম ও তার সহযোগীদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ওই দিন থেকেই সংস্থার পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের অনুসন্ধান দল কাজ শুরু করে। ২১ অক্টোবর দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ঠিকাদার জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম যাদের নাম বলেছে, তাদের মধ্যে প্রকৌশলী মঈনুলের নাম আছে।

প্রসঙ্গত, যুবলীগের কথিত নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীমকে সহযোগিতা, অবৈধ সম্পদ অর্জন, বিদেশে অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে গণপূর্ত’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দেসহ ১১ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। ১৮, ১৯ ও ২৩ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাদের। দুদকের পরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২) সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের অনুসন্ধান টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের সম্পদ বিবরণীও নেওয়া হয়েছে।

 

 

/এপিএইচ/আপ-এনএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: কোন জেলায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোন জেলায় কেমন গরম পড়বে
রাফায় আবারও ব্যাপক হামলা ইসরায়েলের
রাফায় আবারও ব্যাপক হামলা ইসরায়েলের
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ