X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিড়ম্বনার শেষ নেই ট্রাফিক পুলিশের!

জামাল উদ্দিন
২৯ জানুয়ারি ২০১৬, ১৪:৫১আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০১৬, ১৫:১১

দায়িত্ব পালনকালে ট্রাফিক পুলিশ বিড়ম্বনার শেষ নেই ট্রাফিক পুলিশের। এরপরও দায়িত্ব পালন করেই যেতে হয় তাদের। প্রাকৃতিক হোক আর মানবসৃষ্টই হোক, যেকোনও দুর্যোগেও দায়িত্ব পালনে কোনও বিরতি নেই। ধুলো-বালি আর রোদ-বৃষ্টিতে অক্লান্ত পরিশ্রমের পরও ট্রাফিক জ্যামের জন্য অপবাদ শুনে যেতে হয় নীরবে। দিন-রাত রাস্তায় থাকার কারণে নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। এরমধ্যে সাইনোসাইটিস, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা সারাবছরই লেগে থাকে তাদের। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানান এসব তথ্য।
ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ও ইন্সপেক্টররা জানান, রাস্তায় দায়িত্ব পালনের সময় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেও সমস্যা। প্রায় প্রতিদিনই প্রভাবশালীরা উল্টো পথে যাতায়াত করেন। কাগজপত্রসহ নানা কারণে যানবাহন আটকালেই শুরু হয়ে যায় তদবির। প্রভাবশালীরা হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চাকরি খাওয়ারও হুমকিও দেন তারা। দিতে থাকেন নানা অপবাদ। মামলা করলে বলা হয় ‘ঘুষ’ না দেওয়ায় মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলা না করলে বলা হয় ‘ঘুষ’ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা জানান, চাওয়া মাত্র কাগজপত্র দেখাতেও অনীহা চালক ও মালিকের। আইনের দুর্বলতার কারণে যানবাহনের চালকরাও থাকেন বেপরোয়া। আইন না মানাকে তারা গর্বের কাজ বলে মনে করেন। এমন বহুমুখী সংকটের মধ্যেই দায়িত্ব পালন করে যেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের। কনস্টেবল ও সার্জেন্টরা আট ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করলেও ইন্সপেক্টর থেকে ওপরের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয় ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা।

অনেকেই নাম প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করে বলেন, ছুটি নেই। কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি নেই। সামাজিক মর্যাদাও নেই। দিন-রাত পরিশ্রমের পরও কোনও ধন্যবাদ নেই। দুর্ঘটনাসহ নানা ঝুঁকি তো আছেই। এরপরও যানজটের জন্য নিত্য গালমন্দ শুনতে হয় সাধারণ মানুষের। যানজট না থাকলে সেই কৃতিত্ব আর ট্রাফিকের থাকে না। অনেকেই অবর্ণনীয় কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন।

দায়িত্ব পালনকালে ট্রাফিক পুলিশ ট্রাফিক বিভাগে এমনও অনেক কর্মকর্তা আছেন, যিনি ১৫ বছর আগে সার্জেন্ট হিসেবে এই পেশায় যোগ দিয়ে এখনও সেই একই পদে বহাল রয়েছেন। ফলে ওই সব সার্জেন্টরা চরম মনোকষ্টে ভুগছেন। তাদের দাবি, পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত কর্মকর্তাদের ঝুঁকিভাতা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ট্রাফিক (নিরস্ত্র) পুলিশে কর্মরত কর্মকর্তারা ঝুঁকিভাতা পান না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্মক্ষেত্রে যথাযথ মূল্যায়ন না থাকায় ও সুযোগ-সুবিধা কম পাওয়ায় অনেক ট্রাফিক সার্জেন্টই দায়িত্ব পালনের চেয়ে অসৎ উপায়ে অর্থ-উপার্জনে বেশি আগ্রহী হন বলে অভিযোগ রয়েছে। দেখা গেছে, বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যালে তীব্র যানজট থাকার পরও সেদিকে খেয়াল না করে সার্জেন্ট গাড়ির কাগজপত্র দেখায় ব্যস্ত থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, অযথাই গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেক করার নামে কতিপয় সার্জেন্ট পয়সা কামানোর ধান্ধায় থাকেন। পেশাগত ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন মূল্যায়ন না থাকায় অনেকটা হতাশা থেকেই এমনটা ঘটছে বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের একাধিক সদস্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, ১৯৯৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষে সার্জেন্ট (এসআই) হিসেবে ট্রাফিক পুলিশে যোগ দেন। অদ্যাবধি একই পদে বহাল আছেন। মেধা থাকার পরও দীর্ঘদিনেও কোনও পদোন্নতি পাননি তিনি। ফলে চরম হতাশা কাজ করছে মনে। তিনি জানান, এ জন্য দায়িত্ব পালনেও উৎসাহ তেমন নেই। মেধার মূল্যায়ন না হলে পেশার প্রতি শ্রদ্ধা কমে যায়। শুধু আমি না অনেক সার্জেন্টের মধ্যে এই হতাশা কাজ করছে বলে জানান তিনি।

অন্য এক সার্জেন্ট জানান, ২০০১ সালের ব্যাচে সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দেন তিনি। একই ব্যাচে যিনি এএসআই হয়ে কাজ করতেন, তখন তিনি তাকে স্যার সম্বোধন করতেন। পরে তিনি এসআই হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ভাই বলে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর হন। এখন তাকেই উল্টো স্যার বলতে হয় তার। এই হলো অবস্থা।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের অনেক সমস্যা রয়েছে। যা বলে শেষ করা যাবে না। এছাড়া, যারা রাস্তায় কাজ করেন তাদের বিড়ম্বনা আরও বেশি। ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা প্রায় সবার মধ্যেই কাজ করে। যত অপবাদই থাকুক ট্রাফিক পুলিশকে রাস্তায় কাজ করে যেতে হয় প্রতিনিয়ত।

ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আবু ইউছুফ বলেন, জনবল ও যানবাহন সংকট সরমাঞ্জাদি, সিগন্যাল লাইটের স্বল্পতা ও আবাসন সংকটসহ নানাবাধি সমস্যা রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের। তার সঙ্গে যোগ হয় রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনা। সিগন্যাল দিতে গিয়ে অনেক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে গাড়ির মালিক ও চালকদের আইন অমান্যের প্রবণতা, দুটো গাড়ির সংঘর্ষ হলে রাস্তা বন্ধ করে ঝগড়া, অকারণে ট্রাফিক পুলিশকে গালমন্দ করা নিত্যদিনের ব্যাপার।

পুলিশের ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর জোনে কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম মাওলা বলেন, ট্রাফিক পুলিশের বিড়ম্বনার শেষ নেই। মামলা করতে গেলে নানামুখী তদবির শুরু হয়। সবার মধ্যেই ট্রাফিক আইনভঙ্গের প্রবণতা লক্ষণীয়। তিনি জানান, সারাবছরই সাইনোসাইটিস ও মাথাব্যথা রোগে ভুগতে হয়। এরপর নানা ঝুঁকি তো রয়েছেই। 

ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় চারটি ট্রাফিক বিভাগে তাদের জনবল রয়েছে সাড়ে তিন হাজার। এর মধ্যে চার জন উপ-কমিশনার (ডিসি) ছাড়াও রয়েছেন চারজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি)। রয়েছেন শতাধিক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ও সাত শতাধিক সার্জেন্ট। অন্যরা ট্রাফিক কনস্টেবল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ