X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস বিকৃতি রুখে দিতে পারে শক্তিশালী আর্কাইভ: সাব্বির হোসাইন

উদিসা ইসলাম
১৭ এপ্রিল ২০১৬, ২০:০৫আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৬, ২০:৩৫





সাব্বির হোসাইন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা রুখে দিতে কাজ করে যাচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট’। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দুর্লভ বই বাজারে পাওয়া না গেলেও এক ক্লিকেই মিলবে এই আর্কাইভে। ডাউনলোড করে সংগ্রহেও রাখা যাবে। আর্কাইভটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে। তখন থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গবেষণা এবং প্রচার নিয়ে কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠান। জনমানুষের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য পৌঁছে দিতে এটি প্রতিষ্ঠা করেন সাব্বির হোসাইন। তিনি একাধারে লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক। মানবতাবিরোধীদের বিচারে সবসময় ছিলেন সোচ্চার। অনলাইনে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন অনেকের সঙ্গে।
প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র’ নামে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ২০১৬ সালের মার্চ মাসে তা ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট’ নামে নিবন্ধিত হয়। ইতিহাস সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সাব্বির কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে।
এ ধরনের আর্কাইভ গড়ে তোলার কথা মাথায় এলো কেন?
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক বিকৃতি হয়েছে। ইদানিং একটি ‘দেশদ্রোহী’ মহল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সহজভাবে পাওয়া যায় না বলেই তারা এই কাজটি করতে পারছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টাকে রুখে দিতে ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে সর্বস্তরে সহজলভ্য করে দিতেই ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট’ কাজ করে যাচ্ছে। কারণ ইতিহাস বিকৃতি রুখে দিতে পারে শক্তিশালী আর্কাইভ।
আমরা দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে অনলাইনভিত্তিক বেশ কয়েকটি আর্কাইভ রয়েছে। সেসব আর্কাইভের চেয়ে এই আর্কাইভটি কোন জায়গায় আলাদা বলে মনে করেন?
‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ’ হলো মুক্তিযুদ্ধের বই, দলিল, ডকুমেন্টারি, ভিডিও ফুটেজ, চলচ্চিত্র, অডিও ও ছবির ডিজিটাল লাইব্রেরি। মুক্তিযুদ্ধের ওপর এত বড় পরিসরে করা ডিজিটাল লাইব্রেরি আর নেই। এই ডিজিটাল আর্কাইভের সবকিছু পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত।
মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার বই, কয়েকশ ডকুমেন্টারি ও ভিডিও ফুটেজ, হাজারের ওপর প্রিন্ট কোয়ালিটি ছবি, এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ও বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রের একটি বড় ডিজিটাইজড সংগ্রহ। আমরা তথ্য-উপাত্তের সূত্রের বিষয়ে ভীষণ সংবেদনশীল।
আর্কাইভ করতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যায় পড়ছেন কি? সমস্যার ধরন কী?
হ্যাঁ, তা পড়তে হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সব তথ্য ও নথি এখনও সম্পূর্ণভাবে এক জায়গায় পাওয়া যায় না। ব্যক্তিগত সংগ্রহে অনেক ডকুমেন্টস আছে, আবার বিদেশের বিভিন্ন লাইব্রেরি ও আর্কাইভে প্রচুর ডকুমেন্টস আছে; যেগুলোর কোনও কপিই দেশে নেই। এসব ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে বেশ বেগ পেতে হয়। এই বিষয়ে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ট্রাস্ট, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টের গ্রন্থাগার, সিবিজিআর, আইসিএসএফ, সুইডেনের বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্রসহ অনেক প্রতিষ্ঠান সহায়তা করেছে।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর সমান্তরালে কামাল মজুমদার! 

 

এ ধরনের আর্কাইভ নতুন প্রজন্মের জন্য কতটা জরুরি বলে মনে করেন? আর আর্কাইভ করার কোনও প্রশিক্ষণ আমাদের আছে কি না?

নতুন প্রজন্ম ও অনলাইনের শক্তির নমুনা আমরা শাহবাগ আন্দোলনে দেখেছি। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের একটি জাতিকে একত্রিত করে ফেলেছিল। ৭৫-৯৫ ও ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রায় তিন দশক মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত পক্ষ বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অভিযান রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত করেছিল। সেই সময়টায় একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছিল। ফলে প্রজন্মের কাছে পারিবারিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গিয়েছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে নয়। এখন অনলাইনে এসব তথ্য সংরক্ষিত থাকার ফলে চাইলেও কেউ ভুলভাবে মুক্তিযুদ্ধকে উপস্থাপন করতে পারবে না। আমরাও সার্বক্ষণিক একটা মনিটরিং চালু রেখেছি। কোথাও এ ধরনের অপচেষ্টা দেখলে আমরা সেখানে মোকাবিলা করার জন্য সঠিক তথ্য সরবরাহ করার কাজটি করি।

আমাদের একটি কর্মশালা উদ্যোগ আছে- মুক্তিযুদ্ধ পাঠশালা। সেটিও খুব অনন্য কাজ। আমরা আড্ডা ছলেই উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা নিয়ে কথা বলি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সম্পদের সুষম বণ্টন, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার যে মূলভিত্তিগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেসব নিয়ে আলোচনা করি।

ইন্টারনেটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভালো আলোকচিত্র পাওয়া যায় না। সেগুলো কীভাবে সংরক্ষণ করা যেত বলে মনে করেন।

আমরা এই বিষয়ে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। একটি নির্দিষ্ট সাইজ পর্যন্ত ভালো কোয়ালিটির ছবি ম্যাগনাম, গেটি, কন্ট্যাক্ট প্রেস ইমেজ পাবলিকলি বিনামূল্যে বিতরণ করার অনুমতি দেয়। আমরা ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্ট’ থেকে সেই ছবিগুলো শেয়ার করেছি। মুক্তিযুদ্ধের অনেক ছবি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা-ম্যাগাজিন ও বইতে পাওয়া যায়। আমরা সেই ছবিগুলো সংগ্রহ করে প্রফেশনালদের মাধ্যমে ভালো কোয়ালিটিতে পাবলিকলি শেয়ার করি।

জনযুদ্ধ, সিবিজিআর বা জেনোসাইড আর্কাইভগুলোর সঙ্গে আপনাদের সমন্বয়ের জায়গা আছে কি? নাকি সবগুলোই আলাদা আলাদা কাজ করে? সবাই মিলে একটা আর্কাইভ না করতে পারার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন।

আমরা সবাই আসলে পারস্পরিক শেয়ারিংয়ের মাধ্যমেই কাজ করি। সিবিজিআর বা জন্মযুদ্ধকে আর্কাইভিং সাইট থেকে গবেষণা সাইট বললে ভালো হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা চর্চার যে রেনেসাঁ হয়েছে, সিবিজিআরের শ্রদ্ধেয় জালাল ভাই ও জন্মযুদ্ধের পিয়াল ভাইরা এর অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তারা উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে উৎসাহ যুগিয়েছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের বই-ছবি-দলিল-ডকুমেন্টারিসহ বিভিন্ন কনটেন্ট সরবরাহ করেছেন, সহযোগিতা করেছেন ও সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন।

ছবি কৃতজ্ঞতা: মাহিদুল ইসলাম নকীব

আরও পড়ুন: আ. লীগ নেতার পত্রিকা ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন’ পালন করলো আজ

/এজে/

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক