X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে জামায়াত নিষিদ্ধ করতে চায় সরকার

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২৫ মে ২০১৬, ১০:০৮আপডেট : ২৬ মে ২০১৬, ০০:১২

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

সরাসরি নির্বাহী আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধের পথে সরকার যেতে চায় না। এই রাজনৈতিক সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করতে শক্তিশালী জনমত গড়ে তুলতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও বিশিষ্ট আলেমদের নিয়ে  একটি জোট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ চায় জামায়াত নিষিদ্ধে জনমত তৈরিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর দাবির পাশাপাশি ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর ভেতর থেকেও দাবি উঠুক। এতে জোরালো ভূমিকা রাখুক ইসলামী সংগঠনগুলোও। এ ধরনের একটি জোট গড়ে তোলা সম্ভব হলে জামায়াত নিষিদ্ধের কাজটি সরকারের জন্য সহজ হবে।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেকোনও সময়ে এটি মন্ত্রিসভায় উঠবে। তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট সংশোধন করা হচ্ছে। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের জন্যে একটি উপযোগী আইন করা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী হিসেবে আমি সে কাজটি করছি। তিনি বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধ করার আগে কিছু কাজ করার আছে সরকারের। আমরা সেগুলো করছি। 

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী নেতাদের মতে, জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে যেসব ইসলামী রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে তারা এক করতে চান, তাদের মধ্যে অন্যতম হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), ইউনাইটেড ইসলামিক পার্টি, আহলে সুন্নাত আল জামাত, বাংলাদেশ ইসলামী পার্টি, ওলামা মাশায়েখ সংহতি পরিষদ। এর সঙ্গে বিশিষ্ট আলেমরও যুক্ত করতে চান তারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আওয়াল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান অটল। আমাদের মামলার কারণে  ইতোমধ্যেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। জামায়াত নেতারা গ্রেফতারও হয়েছেন। তিনি বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের জন্যে জনমত সৃষ্টি হয়েই আছে। এ ইস্যুতে ইসলামী দলগুলোকে এক করার উদ্যোগ নিলে আমরা থাকব। এ বিষয়ে এখনও সরকারের বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনও আলোচনা হয়নি। তবে বিভিন্ন সময়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে।  

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধ এখন সময়ের ব্যাপার। তবু এ কাজটি করার জন্যে জোরালো জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমরা চাই জামায়াত নিষিদ্ধ সর্বস্তরের দাবি হয়ে উঠুক। তিনি বলেন, এ সরকার মানবতাবিরোধীদের বিচার করেছে, শুধু বিচার কাজই নয়, তাদের রায়ও বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন,জাতি বিশ্বাস করে জামায়াত নিষিদ্ধের কাজটিও আওয়ামী লীগ সরকারই করবে।

জানা গেছে, জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো যেমন জোরালো দাবি তুলছে, সেইসঙ্গে ইসলামী সংগঠনগুলো একাট্টা হলে নির্বিঘ্নে জামায়াতকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে। আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা রয়েছে, জামায়াত নিষিদ্ধ করা হলে সংগঠনটির চিহ্নিত নেতারা যেন আর কোনও রাজনৈতিক সংগঠনে অনুপ্রবেশ করতে না পারেন, সে ব্যাপারেও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একটি ‘জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্ট’ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা চিন্তা করছি, জামায়াত নিষিদ্ধ করলেই শুধু হবে না, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এ সংগঠনের চিহ্নিত নেতারা যেন অন্য কোনও সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে না পারেন, সেদিকেও সবাইকে সজাগ ও সতর্ক করে তুলতে।

নীতি-নির্ধারণী মহল বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পাশাপাশি ইসলামী সংগঠনগুলোর মধ্য থেকে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হলে লাভ হবে সরকারের। কারণ, এর ফলে একদিকে যেমন জামায়াত নিষিদ্ধ হবে। অন্যদিকে এ নিয়ে পরে কোনও ইসলামী দল ও সংগঠনের ভেতর থেকে আন্দোলন গড়ে উঠবে না। একইসঙ্গে ইসলামী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যেন সম্পর্ক নষ্ট না হয়  এ বিষয়টিও তাদের মাথায় রয়েছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ইসলামী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ইসলাম ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে সরকার ও আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি অনুষ্ঠানে ব্লগারদের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্লগারদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন, ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর কথা বলা ও লেখা একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। বিষয়টিকে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি ধাপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।  তারা মনে করছেন,  ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো চটে যায়, এমন কোনও কর্মকাণ্ডে জড়াতে চায় না আওয়ামী লীগ। নীতি-নিধারণী মহল থেকে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে বলা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর  নানা অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে যাওয়া-আসা করছেন। 

আরও পড়ুন: 

ব্যবসায়ীদের দিতে হবে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা

কাজে অনীহা, তাই ৪০ হাজার নারী গৃহকর্মীকে ফেরত পাঠিয়েছে সৌদি আরব!

 /এমএনএইচ/ আপ-এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা