X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১
ব্যবসা না বাড়লেও বাড়ছে ভ্যাট আরোপের হার

ব্যবসায়ীদের দিতে হবে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা

গোলাম মওলা
২৫ মে ২০১৬, ০৭:৫৯আপডেট : ২৫ মে ২০১৬, ১৮:১৬


জাতীয় রাজস্ব ভভন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এখনও গতি আসেনি। সংকট কাটছে না গার্মেন্টস খাতের। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও সরকারি সুযোগ-সুবিধাও নেই। গ্যাসের সংযোগ নেই। বিদ্যুতের চাহিদাও মিটছে না। উচ্চ সুদের কারণে অধিকাংশ শিল্প গ্রুপ পড়েছে বিপাকে। এই অবস্থার মধ্যেই সরকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা নিতে চায় শুধু ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে। চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার মূল বাজেটের মধ্যে ভ্যাট বা মূসক থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে (২০১৬-১৭) মূসক থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ১৫ শতাংশ হারে কর আদায় করতে চাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আগামী জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই হারে মূসক বা ভ্যাট আদায় করবেন। বর্তমানে গড়ে ব্যবসায়ীরা ৩ থেকে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিচ্ছেন।
এদিকে বর্তমান প্রচলিত প্যাকেজ পদ্ধতিতে ভ্যাট আদায় প্রথা বাদ দিয়ে মূল্য সংযোজনের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হলে ব্যবসায়ীরা আন্দোলনের হুমকি দেন। পাশাপাশি নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন সংশোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ১৫ মে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে মূসক আইনের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরির আশঙ্কা করা হয়। এতে বলা হয়, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াকে পুঁজি করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা হতে পারে। এ নিয়ে ব্যবসায়ী মহল উদ্বিগ্ন। এর আগে ২৪ এপ্রিল মূসক আইনের সংশোধনী চেয়ে আরেকটি চিঠি দেয় সংগঠনটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন ও সেবা দেওয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা যে ভ্যাট দেবেন, তা শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়েই চাপবে। বিশেষ করে সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে এবং নির্ধারিত মূল্যের (ট্যারিফ মূল্য) ওপর যেসব পণ্য বা সেবা পর্যায়ে বর্তমানে যে হারে মূসক আদায় করা হয়, সেসব খাতে সরাসরি ১৫ শতাংশ হারে মূসক বসবে। এছাড়া নতুন আইনে ১ হাজার ৯৭৩টি পণ্যের মূসক অব্যাহতি সুবিধাও উঠে যাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। বিদ্যুৎ বিলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হবে।

এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই-এর উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নতুন মূসক আইন বাস্তবায়িত হলে অধিকাংশ পণ্যের দাম আরও ১০ শতাংশের বেশি বাড়বে। এর প্রভাবে সার্বিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন মূলত হিসাবভিত্তিক কর ব্যবস্থা। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব রাখা সম্ভব না। এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই বাকিতে ব্যবসা করেন, আবার পণ্য কিনলেও তারা চালান যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেন না। ফলে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই নতুন ভ্যাট আইনে রেয়াত নিতে অসমর্থ হবে। ফলে নতুন ভ্যাট আইন তাদের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্কে পরিণত হবে।

জানা গেছে, নতুন আইন কার্যকর হলে প্রতি টন রড কিনতে ডেভলপার ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ২ হাজার ৮শ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। একইভাবে দোকানের যে শার্ট এখন ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা ২ হাজার ২শ টাকা বিক্রি করতে হবে। বর্তমানে ৫ শতাংশ হারে গয়নার ওপর মূসক আরোপ করা হয়ে থাকে। এই গয়নায় ১৫ শতাংশ মূসক আরোপ করা হলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার গয়না কিনতে ভোক্তার অতিরিক্ত খরচ বাড়বে ৪ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা মূসক দেওয়ার অজুহাতে এই পরিমাণ অর্থ ভোক্তাদের কাছ থেকে কেটে নেবেন। একইভাবে বিদ্যুৎ সুবিধাসহ ২০ ধরনের সেবা পেতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে ভোক্তাদের।

এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মূসক আইন নিয়ে এমন কিছু করা যাবে না যা ব্যবসা-বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করে। বর্তমান অবস্থায় মূসক আইন বাস্তবায়িত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। কারণ প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে হিসাব রাখতে অভ্যস্ত নন। এছাড়া বড় ব্যবসায়ীরাও বিভিন্নভাবে বিপাকে পড়বেন। গেলো কয়েক বছর ধরে সামগ্রিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য এক ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। অধিকাংশ শিল্প গ্রুপ ব্যাংক ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে।

ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ার আশঙ্কা করছে খোদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। সম্প্রতি নতুন মূসক আইনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে রড কিনতে টনপ্রতি ৪১২ টাকা ৫০ পয়সা মূসক পরিশোধ করতে হয়। নতুন আইনে বিভিন্ন পর্যায়ে রেয়াত নেওয়ার পরও বর্তমান বাজার দরে প্রতি টনে ৩ হাজার ২২৯ টাকা মূসক পরিশোধ করতে হবে। এতে টনপ্রতি এমএস রডের বাজার দর টনে ২ হাজার ৮১৬ টাকা বাড়বে।

এনবিআরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মূসক আরোপের ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। নতুন আইনের বাস্তবায়ন হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে। কারণ, এতে গৃহস্থালি ব্যয় বেড়ে সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াবে। পাশাপাশি নতুন মূসক আইনের কারণে সরকারি প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়বে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নতুন মূসক আইন বাস্তবায়ন করলে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে মূসক আদায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে; আমদানি পর্যায়ে মূসক আদায় বাড়বে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এনবিআর বলছে, নতুন আইন কার্যকর হলে আমদানি, উৎপাদন, বিক্রয় পর্যায়সহ সব মিলে ১ হাজার ৯৭৩টি পণ্যের সব ধরনের মূসক অব্যাহতি সুবিধা উঠে যাবে। ফলে এসব পণ্যের ভোক্তা পর্যায়ে মূসক বাবদ কর ভার বাড়বে। অর্থাৎ ভোক্তাকে আগের চেয়ে বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিদ্যুৎ বিলসহ ২০ ধরনের সেবার ওপর সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে বিভিন্ন হারে মূসক আরোপ করা আছে। এ হার ২ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন আইনে এসব খাতে অভিন্ন অর্থাৎ ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হবে।

নতুন মূসক আইনে মৌলিক খাদ্য, নির্ধারিত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহন সেবা, গণস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, কৃষি, মৎস্য চাষ, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অবাণিজ্যিক কার্যক্রম, অলাভজনক সাংস্কৃতিক সেবার ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি রয়েছে।

আরও পড়ুন: মুসলিম চৌধুরী সোনালী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান

/এএইচ/আপ-এনএস/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী