X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণের সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণাও চালাবেন খালেদা জিয়া

সালমান তারেক শাকিল
২৭ অক্টোবর ২০১৭, ২১:২৭আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৭, ০০:৫২

 

খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি: সংগৃহীত)

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে শনিবার (২৮ অক্টোবর) চারদিনের সফরে কক্সবাজারের উখিয়ায় যাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে মাত্র একদিন ত্রাণ বিতরণ করলেও বাকি তিন দিন খালেদা জিয়ার দৃষ্টি থাকবে অন্যত্র। দলীয় একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ বছর পর চট্টগ্রাম অঞ্চলে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। তাই বিএনপির নীতিনির্ধারকরা দলীয় প্রধানকে চারদিনের সফরে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তবে সফরের মূল লক্ষ্য থাকবে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমত তৈরি করা। এক্ষেত্রে শারিরীক অবস্থা খারাপ থাকলেও নেতাকর্মীদের আগ্রহ ও আগামী নির্বাচনকে প্রাধান্য দিতেই তার এ চারদিনের সফর।
দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার চার দিনের সফরের সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অঞ্চলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় দলীয় প্রধানকে যাত্রাপথে শুভেচ্ছা জানাতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ দিকে।

২৮ অক্টোবর সকাল ৯টায় খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে নয়াপল্টনের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একটি বিশাল বহর। সকাল ১০টায় নয়াপল্টন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন বিএনপি নেত্রী। পথে তার নির্বাচনি জেলা ফেনীর সার্কিট হাউজে দুপুরের খাবার ও নামাজের বিরতি দেবেন। এরপর বিকালে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। পরে চট্টগ্রাম নগরীর সার্কিট হাউজে রাত্রিযাপন করবেন। পরদিন সকালে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে ওইদিন জেলা সার্কিট হাউজে বিশ্রাম নেবেন। ৩০ অক্টোবর সকাল ১১টায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে যাত্রা করবেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, ‘সোমবার সকাল ১১টায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন খালেদা জিয়া। তিনি বালুখালী-১, বালুখালী-২, হাকিমপাড়া ও ময়নারগুনায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। এরপর দুপুর ২টার দিকে জেলার সার্কিট হাউজে বিশ্রাম নিয়ে রাতে চট্টগ্রামে এসে রাত্রীযাপন করবেন।’

মিডিয়া উইংয়ের আরেক সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, ‘৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন বিএনপির চেয়ারপারসন। পথে ফেনীতে থামবেন।’   

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিভাগের লাখ-লাখ জনতা বিএনপির চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। চট্টগ্রামের মানুষ খালেদা জিয়ার সফরের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।’

চট্টগ্রাম বিএনপির প্রস্তুতি সভা

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে খালেদা জিয়ার আগমনকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সভা হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘ডা. শাহাদাৎ হোসেনের সভাপতিত্বে এই সভায় মীর নাসির উদ্দিন, গোলাম আকবর খন্দকারসহ সভায় কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।’

আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘দলীয় প্রধানের চট্টগ্রামে দুই রাতের যাত্রাবিরতিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানাবেন। শান্তিপূর্ণভাবে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনকে অভিনন্দন জানানো হবে।’

 ফেনীতে দলের প্রস্তুতি

বাংলা ট্রিবিউনের ফেনী প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, শনিবার খালেদা জিয়া ফেনী সার্কিট হাউসে দুপুরে যাত্রা বিরতি করবেন। বিরতির সময় বহরের সঙ্গে আসা দলীয় নেতাকর্মীরা দুপুরের সার্কিট হাউজে খাবেন। এই  উপলক্ষে ফেনী জেলা বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

পথে মহাসড়কের ফেনীর অংশে আটটি স্থানে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানাবেন জেলার নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামীকাল শনিবার খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোহাম্মদ আলী এলাকা থেকে মহিপাল সার্কিট হাউস-পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে নিশ্ছিদ্র মানবপ্রাচীর গড়ে  তুলবে।

ত্রাণের সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারণাও সারবেন খালেদা জিয়া

চারদিনের সফরে মাত্র কয়েক ঘণ্টা রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন খালেদা জিয়া। বাকি সময়টুকু বিশ্রাম, যাত্রাপথ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতে কাটবে তার। ঢাকা থেকে চেয়ারপারসনের সঙ্গে যাচ্ছেন একঝাঁক সিনিয়র নেতা। ইতোমধ্যে বিমান, বাস ও ট্রেনে কক্সবাজারের পথ ধরেছেন কয়েক শত নেতাকর্মী। এদিকে, খালেদা জিয়ার চট্টগ্রাম বিভাগের সফরকে কেন্দ্র করে পুরো অঞ্চলেই দলীয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে খালেদা জিয়ার শোডাউন এটি। ইতোমধ্যে বিভাগের জেলায়-জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আর যাত্রাপথে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে দুই বার করে যাত্রাবিরতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বাড়তি আগ্রহ জন্মেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।

তবে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষ ব্যাপার বলে কোনও ধরনের সমাবেশ করবে না বিএনপি। সেক্ষেত্রে ত্রাণ কার্যক্রমের সময়সীমা মাত্র একদিন থাকলেও বাকি তিন দিনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও যাত্রাপথেই ব্যয় করবেন খালেদা জিয়া। পাশাপাশি দীর্ঘযাত্রায় তার গাড়িবহরের গতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন সফরের সমন্বয়ের সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা।

প্রসঙ্গত, প্রায় পাঁচ বছর পর চট্টগ্রাম অঞ্চলে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। শায়রুল কবির খান জানান, ‘পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে ২০১২ সালের জুন মাসে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। ওই বছরের নভেম্বরে বৌদ্ধ মন্দিরের হামলার ঘটনায় কক্সবাজারের রামু পরিদর্শনে যান বিএনপি প্রধান।’

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, গত ২৩ অক্টোবর স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার যাবেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকেই তার সফরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন একাধিক নেতা।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনের আগমনের খবরে সর্বত্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। জেলায়-জেলায় নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে দলীয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাবেন। রাজনৈতিকভাবে তার এই আগমন ইতিবাচকতা সৃষ্টি করেছে।’

মাহবুবুর রহমান শামীমের দাবি, ‘খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। আগামী নির্বাচনে ভোটে ও আন্দোলনে; উভয়ক্ষেত্রেই অনেক বেশি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তার সফর।’

শায়রুল কবির খান বলেন, ‘পথে-পথে দলীয় চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। তারা দলের চেয়ারপারসনকে অভিনন্দিত করতে মুখিয়ে আছেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলীয় চেয়ারপারসনের সফরকে কেন্দ্র করে বিপুল উৎসাহ তৈরি হয়েছে। আশা করি, তার আগমনকে কেন্দ্র করে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে।’

দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কোনও রোডমার্চ বা সমাবেশ করতে যাচ্ছি না। দলীয় প্রধান মানবতার ডাকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াবেন।’ দেশের জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবে মানুষের কাছে তার সফর সাড়া ফেলেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।’

/এসটিএস/এসএনএইচ/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা