X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আ. লীগের জেলা কমিটিতে নারী নেতৃত্বে আরপিও’র বাস্তবায়ন নেই

পাভেল হায়দার চৌধুরী
১০ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:০৯আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:৩৬

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্বের উপস্থিতি  থাকলেও জেলা কমিটিতে নেই বললেই চলে। অথচ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯০-এর খ-এর (২) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সব স্তরেই ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিক জেলা কমিটিগুলোয় এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কোনও প্রতিফলন নেই। যদিও গত জুলাই মাসে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব স্তরে আরপিওর বিধান রক্ষা করে ৩৩ শতাংশ নিশ্চিত করারও অঙ্গীকার করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গত ১৩ জুন নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত ৪০টি দলের কাছে ‘নারী প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্তির’ সর্বশেষ তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায়। এর ধারাবাহিকতায় গত জুলাই মাসে দলের অবস্থান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে পৌঁছায়। সাধারণ সম্পাদক তার চিঠিতে কমিশনকে জানিয়েছেন, ৬৪টি জেলা ও ১২টি মহানগর নিয়ে মোট ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি রয়েছে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের। এর বাইরে ৪৯০টি উপজেলা কমিটি, ৩২৩টি পৌরসভা ও ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন কমিটি এবং তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিটি পৌরসভা ও ইউনিয়নে ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে সভাপতিসহ মোট ১৫ জন নারী। গত জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে নারী সদস্যের হার ১৫ শতাংশ বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তবে দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সর্বোচ্চ ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদে এই হার প্রায় ১৯ শতাংশ। সাধারণ সম্পাদক তার চিঠিতে আরও বলেন, আওয়ামী লীগের তিনটি সহযোগী সংগঠন—বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগের শতভাগ সদস্য নারী। তৃণমূল থেকে  জাতীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নে সংগঠনগুলো কাজ করছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০২০ সালের মধ্যেই সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আওয়ামী লীগ সক্ষম হবে।

১৫ শতাংস দাবি করা হলেও আওয়ামী লীগের অনুমোদিত অন্তত ৪০টি জেলা কমিটি যাচাই করা হয়েছে। প্রত্যেক জেলা কমিটি ৭১ সদস্যের। অনুমোদিত এসব কমিটিতে হাতেগোনা ২/৪টিতে দেখা গেছে সর্বোচ্চ ৫ জন নারী পদ পেয়েছেন। অধিকাংশ সাংগঠনিক জেলায় ৩/৪ টি নারী পদ রাখা হয়েছে। মহিলা সম্পাদক পদটি বাদ দিলে কমিটিতে দু’য়ের বেশি পদে নারী নেই। সহ-সভাপতি ও সম্পাদকীয় পদে নারীদের রাখাই হয়নি। প্রায় সব জেলায় নারীদের সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের মত কমিটিতে নারীদের উপস্থিতি কম। আশপাশের জেলা কমিটিতেও করুণ দশা নারীদের। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের দু’টি কমিটিতে দেখা গেছে মাত্র ৯ জন নারী পদ পেয়েছেন। মহিলা সম্পাদক ছাড়া সহ-সভাপতি ও সম্পাদকীয় পদে নারী নেতৃত্বের উপস্থিতি একেবারেই নেই। যেই কয়জন নারী পদ পেয়েছেন, তাদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে কমিটিতে। ৬টি সাংগঠনিক জেলার অনুমোদিত কমিটির চিত্র এখানে তুলে ধরা হলো। ঢাকা মাহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর, দক্ষিণ, ঢাকা জেলা, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণের কমিটিতে মাত্র ৯ জন নারী পদ পেয়েছেন। এরমধ্যে দক্ষিণে ৫ জন। মহিলা সম্পাদক পদে তাহমিনা বেগম। সাজেদা খানম, জাহানারা গেম রোজী, নাছিমা আহমেদ ও রোকসানাইসলাম চামেলী, এই চার জন সদস্য পদে জায়গা পেয়েছেন। উত্তরের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ৩ জন নারী। মহিলা সম্পাদক মেহেরুন্নেসা মেরী, জাহানারা বেগমকে সহ-সভাপতি ও সদস্য করা হয়েছে রাবেয়া আক্তার ডলিকে।

গোপালগঞ্জ জেলা কমিটিতে ৪ জন নারী পদ পেয়েছেন। মহিলা সম্পাদক নাসিমা খানম, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক শাহনাজ পারভীন লিপি, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক লতিফা জামাল চৌধুরী ও সদস্য পদ পেয়েছেন রেশমা আক্তার হাসি।কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটিতে দুই জন নারী পদ পেয়েছেন। তাদের একজন মহিলা সম্পাদক মনছুরা জামান, সদস্য বিলকিস বেগম। গাজীপুর জেলায় ৪ জন নারী পদ পেয়েছেন। এর মধ্যে মহিলা সম্পাদক লুৎফুন নাহার মেজবাহ ছাড়া বাকি ৩ জন সদস্য পদ পেয়েছেন। তারা হলেন, সিমিন হোসেন রিমি, মেহের আফরোজ চুমকী ও তাসলিমা রহমান লাভলী। ঢাকা জেলায় নারী পদ পেয়েছেন ৩ জন। তাদের মধ্যে মহিলা সম্পাদক হালিমা আক্তার লাবন্য, সদস্য হাসিনা দৌলা ও স্মৃতি কণা বিশ্বাস।

সাংগঠনিক জেলায় নারী নেতৃত্বের করুণ দশার কথা স্বীকার করে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দ্রিরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৩ শতাংসের প্রায় কাছাকাছি প্রতিষ্ঠা করেছি। সাংগঠনিক জেলায় ভবিষ্যতে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

ইন্দ্রিরা বলেন, ‘‘আমাদের দলীয় ফোরামে এই নিয়ে বার বার কথা হয়েছে। পুরুষশাষিত সমাজে পুরুষের ‘এটিচুয়েড’ পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে এর বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে উঠবে।’’

নারীদের পদে না থাকার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলা কমিটিতে পদে নারীরা না থাকার মূলে রয়েছে, মফস্বল শহরে নারীরা রাজনীতিতে আসতে চান না। এর ফলে নারী নেতৃত্বের কোটা পূরণ করা সম্ভব হয় না।’

সভাপতিমণ্ডলীর অন্য সদস্য ড. আবদুল রাজ্জাক বলেন, ‘ধীরে ধীরে নারী নেতৃত্ব বাড়ছে।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলায় নারী নেতৃত্ব বাড়ছে না—এ কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিগগিরই সুফল আসবে।’   

 

 

/পিএইচসি/এমএনএইচ/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা