X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সময়ের প্রয়োজনেই ‘অহিংস’ বিএনপি, টার্গেট নির্বাচন

সালমান তারেক শাকিল
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৪১আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৪৪

 

সময়ের প্রয়োজনেই ‘অহিংস’ বিএনপি, টার্গেট নির্বাচন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন কারাবন্দি। প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান-অনশন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। দুই-একটি স্থানে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়া দলীয় প্রধানের গ্রেফতার-পরবর্তী পরিস্থিতি ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করছে দলটি। কয়েকদিনের মধ্যে আবারও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সম্ভাব্য এই কর্মসূচিগুলোয়ও দলটির নেতাকর্মীরা কোনও ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে—এমন অবস্থান গ্রহণ করবে না।

বিএনপির নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচনের আগে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান তৈরি না করতেই শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে দলের চেয়ারপারসনের সাজা হলেও কোনোভাবেই নির্বাচনের রোড থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় না বিএনপি।

খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ-পরবর্তী বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের একাধিক শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাই বলছেন, আগামী নির্বাচনের এখনও অনেক বাকি। আর চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের এত সময় আগে সরকারবিরোধী আন্দোলন কঠোর করা হলে নেতাকর্মীদের টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।  আর সে কারণেই খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের দিন নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের পরও পরিস্থিতি শান্ত অবস্থায় মোকাবিলা করেছে বিএনপি।

২০ দলীয় জোটের শরিক দল, খেলাফত মজলিসে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক মনে করেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করতে গেলে সমস্যা আছে। পুলিশ দেখা যাবে ঝামেলা করবে। আর পুলিশ আক্রমণাত্মক হলে নেতাকর্মীরাও ভাঙচুর করবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলছেন, ‘জনগণই একসময় দেখবে বিএনপি একটি শান্তিপূর্ণ দল। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, উচ্ছৃঙ্খলতায় বিশ্বাস করে না। আমরা চরম উসকানির মধ্যেও উত্তেজিত হয় না। খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করেছে, তাকে খারাপ অবস্থায় রেখেছে, সাধারণ কয়েদির মতো রেখেছে। এরপরও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই প্রতিবাদ জনগণ যেমন প্রশংসা করছে, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিষয়টি প্রশংসিত হচ্ছে।’

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, জেল-জরিমানা, মামলা ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের সম্ভাব্য হামলার কথা মাথায় রেখে চলমান খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন সহিংস হচ্ছে না। আর এই অসহিংস আন্দোলনের নির্দেশনা এসেছে খোদ খালেদা জিয়ার কাছ থেকেই। আর দলীয়ভাবে শান্তিপূর্ণ থাকার বিষয়টি জানানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও। ইতোমধ্যে কূটনীতিকদের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক করেছে। বুধবারও গুলশানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। প্রতিটি বৈঠকেই বিএনপি কূটনীতিকদের কাছে, খালেদা জিয়ার জেল, তার মামলার আদ্যোপান্ত, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরছে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি দূতাবাসসহ দায়িত্বশীলদের কাছে।  

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, ‘চেয়ারপারসন নিজেই কয়েকদফা বলেছেন, কোনোভাবেই সহিংসতা, হঠকারিতা করা যাবে না। তার মুক্তির বিষয়ে আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ।’

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশবাসীর প্রতি আমার আবেদন, আমাকে আপনাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা হলেও বিশ্বাস করবেন, আমি আপনাদের সঙ্গেই আছি। আপনারা গণতন্ত্রের জন্য, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, জনগণের সরকার কায়েমের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশে সবসময়ই ছাত্র-যুবক-তরুণেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।’

গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় দুই বার, ৫ ফেব্রুয়ারির সিলেটে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বারবার তিনি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি জোর দিয়েছেন।

বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে সারাদেশে কর্মসূচি, ২০১৫ সালে ৩ মাসব্যাপী অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা হয়। রাজনৈতিকভাবে এই সহিংসতার সমালোচনা হয় অনেক। একইসঙ্গে নির্বাচন ঠেকাতে গিয়েও ব্যর্থ হয় বিএনপি। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নির্বাচন থেকে। ফলে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটসহ আরও কয়েকটি দল নির্বাচনের বাইরে রাখে।

বিএনপির রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে ও পরের বছর রাজনৈতিক সহিংসতার কারণেই পিছিয়ে পড়ে বিএনপি। আর অতীত-উপলব্ধি থেকেই এই বছরে বিএনপির রণকৌশল পরিবর্তন করা হয়। একইসঙ্গে এই বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা থাকায় আদতে মূল লক্ষ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ। ফলে, সাধারণ মানুষের কাছে যতটা সম্ভব সম্পৃক্ত থেকে নির্বাচনের লক্ষ্যেই ছুটছে বিএনপি।

বিএনপির শান্ত থাকার বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের ভাষ্য, ‘শান্ত থাকার কারণ হচ্ছে, নির্বাচন এখনও অনেক দেরি। নেতাকর্মীদের আন্দোলনে নামিয়ে দিলে এত দীর্ঘসময় চালানো সম্ভব না। কাজেই অহিংসভাবে আইনি লড়াই ও কর্মসূচি চলতে থাকুক। মানুষও উৎসাহিত হচ্ছে। তাদের সমস্যা হচ্ছে না। এতে বিএনপির জনপ্রিয়তাও বাড়ছে।’

তবে এখনই কোনও সিদ্ধান্ত দিতে নারাজ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এটা এখনই বলা খুব ডিফিকাল্ট। পরিস্থিতি কোন দিকে মার্চ করবে, এখনই এটা নিয়ে মন্তব্য করা অপরাধ হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় সরকারই তাদের লোক জ্বালাও-পোড়াও করে আমাদের ওপর চাপি দিয়েছে। পেট্রোল বোমা মেরেছে, আগুন দিয়েছে। আর সম্পূর্ণদোষ বিএনপির ওপর পড়েছে। আর সেজন্যই আমরা এবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে ধীরে-ধীরে মানুষকে আন্দোলনের দিকে সম্পৃক্ত করবো।’

সিনিয়র এই আইনজীবী জানান, ‘দেশের গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য আস্তে-আস্তে এগিয়ে যাবো, কোনও রকম উচ্ছৃঙ্খল আচরণ আমরা করবো না।’

 

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২
গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি