X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা-৬

মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপিতে বাড়ছে নেতাদের দ্বন্দ্ব

আদিত্য রিমন
০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১০:০৮আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১০:১৯

 




ঢাকা ‍বিভাগ বিএনপি

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির মেয়াদ শেষ হয়েছে ছয় বছর আগে। এই জেলার বিএনপি অফিসে নেই কোনও দলীয় সাইনবোর্ডও। গোপালগঞ্জের মতোই ঢাকা বিভাগের ১২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ছয় জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে  ছয় বছর আগে। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় জেলা কমিটিগুলোতে বিরাজ করছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্ব আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন স্থানীয় নেতারা।     

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপি

ছয় বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় হতাশ স্থানীয় নেতাকর্মীরা, যার প্রভাব পড়ছে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২০১১ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়।মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম মুনসুর আলী বলেন, ‘আশা করি, খুব শিগগিরই নতুন কমিটি হবে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নেতাকর্মীরা গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে ঝাঁপিয়ে পড়বে। রাজনৈতিক বিরূপ অবস্থার কারণে গোপালগঞ্জের মাটিতে প্রকাশ্যে মিটিং-মিছিল বা কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’

জানা গেছে, জেলা শহরে সাইনবোর্ডবিহীন বিএনপির দুটি কার্যালয় রয়েছে। শহরের গেটপাড়া অফিসের নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সড়কের পুরাতন লঞ্চঘাট এলাকায় সাবেক সভাপতি এম এইচ খান মঞ্জুরের বাসভবনে রয়েছে আরেকটি অফিস। এটির নেতৃত্বে রয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এম মুনসুর আলী। তবে বর্তমানে দুটি অফিসই বন্ধ রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি 

২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপির ২৬ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ১৯ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আশিংক কমিটি আর পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

কেন্দ্র থেকে গঠিত আংশিক কমিটির গুরত্বপূর্ণ পদে স্থান হয়নি নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলয়ের নেতাকর্মীদের। ফলে এই দুই নেতার অনুসারীরা বর্তমান কমিটির কর্মসূচিতে অংশ নেন না।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ— জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতির বাড়ি রূপগঞ্জ উপজেলায়। আর সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শহরের স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের দেখা সাক্ষাৎ পান না।

গত বছর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সামনেই জেলা কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।  মহাসচিবকে উদ্দেশ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে যাদের নেতৃত্বে কমিটি দেওয়া হয়েছে, তাদের দিয়ে ভালো কিছু হবে না। ’

এব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মুনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের বক্তব্য জানতে  একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

তবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘নারাণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাদেরকে জোরালোভাবে কোনও কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। এত দিনেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি তারা।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ,রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন হয় ২০১১ সালে। এরপর র্দীঘ আট বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি হয়নি এই  তিন উপজেলায়।

রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন,‘জেলা বা কেন্দ্র থেকে কোনও নির্দেশনা না পাওয়ায় সম্মেলন হয়নি। পুরনো কমিটিই দায়িত্ব পালন করছে। তবে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।’

ছয় মাস ধরে বিদেশে সাধারণ সম্পাদক

২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ২৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর গত ১৯ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি এই জেলায়। অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল এ  বছরের মার্চ মাসের ৪ তারিখে আমেরিকাতে চলে যান। এরপর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি দেশে ফেরেননি।

এছাড়া, মহানগর সভাপতি আবুল কালামও কর্মসূচিতে সক্রিয় নন বলেও অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। 

মহানগর সভাপতি আবুল কালামের মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার ছেলে মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবুল কাওছার জানান, তার বাবা দীর্ঘদিন দলে অসুস্থ। যে কারণে তিনি ফোন ধরছেন না। এছাড়া, মিথ্যা মামলার কারণে তিনিও বাসায় থাকতে পারছেন না।

মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন,‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিষ্ক্রিয়তার কারণে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সফল হচ্ছে না। কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি আমার নেতৃত্বে পালন হচ্ছে। ’

মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান জানান, কমিটি ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে পাঠানো হলেও এখনও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। 

গাজীপুর জেলা বিএনপি

পাঁচ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া এবং জেলার রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার হস্তক্ষেপে একাধিক গ্রুপ তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক নেতাকর্মী নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে— বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল— এই চার জনই জেলা বিএনপির কাণ্ডারি। তাদের নিজেদের পছন্দের লোক নিয়ে রয়েছে একাধিক গ্রুপ।

জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন ফজলুল হক মিলনকে সভাপতি ও কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৪ সালে।

ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘কমিটি গঠন করতে সব নেতাকে নিয়ে একটা সভা করতে হয়, সব পক্ষের মতামত নিতে হয়। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই রকম কিছু সম্ভব হচ্ছে না। নেতাকর্মীদের নামে হাজার হাজার মিথ্যা ও গায়েবি মামলা হচ্ছে। তাহলে কিভাবে নতুন কমিটি করবো।’      

মানিকগঞ্জ জেলা  বিএনপি

২০১৩ সালে ৮ জুন আফরোজা খান রিতাকে সভাপতি ও প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম খান শান্তকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৬ সদস্যের আংশিক কমিটি হয় মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির। এরপর ৫ বছর ধরে ১৬ সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম।  গত ৫ বছরে এই কমিটি মাত্র দুবার বৈঠক করতে সক্ষম হয়েছে , তাও ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৮ জুন মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এরপর আর জেলা কমিটি হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে বিএনপির কার্যক্রম।

জানা গেছে, জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বের কারণে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যেই বিভক্ত হয়ে আছে। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একসঙ্গে  দলীয় কোনও কর্মসূচিতেও দেখা যায় না।

দ্বন্দ্বের কারণে সভাপতি গ্রুপ বিভিন্ন উপজেলায় কোনও কমিটি গঠন করলে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ তা প্রত্যাখান করে। একই অবস্থা সাধারণ সম্পাদকের ক্ষেত্রেও। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন ঘিরে এই সংকট আরও বাড়বে বলেও অভিযোগ স্থানীয় নেতকর্মীদের। 

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএ কবির জিন্নাহ বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কথা স্বীকার করে বলেন,‘২০১৩ সালে রিতাকে সভাপতি  ও শান্তকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠনের পরে মাত্র দুইবার তারা একত্রে বসেছিল। এরপর আর ওই কমিটির কোনও সভা হয়নি। ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হয়নি। ’

তিনি জানান, বর্তমান সরকার বিএনপিকে কোনও কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। নেতাকর্মী, সমর্থকদের নামে অসংখ্য মামলা রয়েছে। যে কারণে দলের কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম খান শান্তকে এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি জরুরি মিটিং আছেন বলে জানান। এরপর আর ফোন ধরেননি তিনি।

ফরিদপুর জেলা বিএনপি 

২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর ফরিদুপর জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১২ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি গঠিত হয়নি।  

মেয়াদোত্তীর্ণ ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোদাররেস আলী ইছা বলেন, ‘আমাদের কমিটি নিয়ে আপনাদের এত মাথা ব্যথা কেন। এখন নতুন কমিটি নয়, বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়েই যত চিন্তা আমাদের। ’

দলীয় একাধিক সূত্র জানান, ফরিদপুর জেলা বিএনপিতে এখন দুটি গ্রুপ। এর একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এবং কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান মুকুল। অন্য অংশে রয়েছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোদাররেস আলী ইছা  ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ (ফরিদপুর-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী)।

ফরিদপুর বিএনপির বিরোধের কথা সীকার করে জেলা সাধারণ সম্পাদক মোদাররেস আলী ইছা বলেন, ‘ধানের শীষের প্রশ্নে তারা সবাই এক আছেন। ’

ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মো. আবু জাফর বলেন, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি পদ নিয়ে সম্পাদক মোদাররেস আলী ইছা ও সভাপতি জহুরুল হক শাহজাদা মিয়ার মধ্যে বিরোধের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় নির্বাচনে এর কোনও প্রভাব পড়বে না।’

মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপি

২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল কাউন্সিল ছাড়াই মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সাত  সদস্যের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিভক্তির কারণে ১৭ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। একই কারণে উপজেলা ও ওয়ার্ড কমিটিও গঠিত হয়নি।

জেলা সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অপু চাকলাদারের দ্বন্দ্বই মূলত বিএনপিকে বিভক্ত করে রেখেছে বলে স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ। এছাড়া,বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা জেলা কমিটির একটি পক্ষকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।

তবে জেলা সভাপতি আব্দুল হাই বলেন,‘বিএনপি একটি বড় দল। তাই কিছু ব্যাপারে দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু কোনও দ্বন্দ্ব নেই।’

জেলার লৌহজং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অপু চাকলাদার বলেন,‘জেলা বিএনপির দ্বন্দ্ব এখন নেই এমনটা বলা যাবে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা জেলা কমিটির একটি পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলার অনেক কমিটিরই মেয়াদ নেই। সেগুলো পুনর্গঠন জরুরি। কিন্তু দ্বন্দ্বের কারণেতা হচ্ছে না। তাই সাংগঠনিক অনেক কাজে বেগ পেতে হয়।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা বলেন,‘বিএনপি একটি বড় দল। তাই কিছুটা দ্বন্দ্ব থাকা স্বাভাবিক। তবে এই কারণে সাংগঠনিক কোনও কাজে সমস্যা হচ্ছে না।’

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি

জেলা কমিটিকে ঘিরে প্রকাশ্য কোন্দলে লিপ্ত রয়েছেন টাঙ্গাইল বিএনপির নেতাকর্মীরা। ২০১৭ সালের ২৬ মে কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফাকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি হয়। কমিটি গঠনের পর থেকে তা বাতিলের দাবিতে বিদ্রোহ শুরু করে স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ। তাদের অভিযোগ— সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটিতে বেশিরভাগ পদে বসানো হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু পরিবারের অনুসারীদের। এনিয়ে গত বছরের ২৩ জুলাই নবগঠিত জেলা কমিটি টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব কমিউনিটি সেন্টারে এক  কর্মী সভায়  দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসব কারণে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা থাকলেও তা হয়নি।

এ ঘটনায় জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলী ইমাম তপন, হাসানুজ্জামিল শাহীন, যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আহমেদুল হক শাতিল ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজী শফিকুর রহমান লিটনকে জেলা কমিটি  থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর থেকে জেলা বিএনপি ও বিদ্রোহী পক্ষ পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে।  

জেলা  সভাপতি শামসুল আলম তোফা বলেন, ‘বিদ্রোহীরা বর্তমানে দলীয় কোনও কার্যক্রমে নেই। পৃথকভাবে কার্যক্রম পালনের প্রশ্নই আসে না। তারা এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে একত্র হয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে।’

জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, ‘আব্দুস সালাম পিন্টুর পরিবারের অনুসারীদের নিয়ে এই কমিটি হয়েছে। সিনিয়র নেতাদের বাইরে রেখে কমিটি করায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা চলমান কমিটির বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি আদায় করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

শরীয়তপুর জেলা বিএনপি

২০১৬ সালের ১২ নভেম্বর সফিকুর রহমান কিরণকে সভাপতি ও নাসির উদ্দীন কালুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যের শরীয়তপুর জেলা কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জামাল শরীফ হিরুর নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপির একটি অংশ। এরপর থেকে স্থানীয় বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। এক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অন্য অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামাল শরীফ হিরু এবং সাবেক সংসদ সদস্য হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের স্ত্রী তাহমিনা আওরঙ্গ, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব তালুকদার।

জেলার সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন কালু বলেন, ‘বেগম জিয়া তৃণমূলের মূল্যায়নের ভিত্তিতে জেলা কমিটি দিয়েছেন। পদবঞ্চিতরা কমিটির বিরোধিতা করলেও তাদের সঙ্গে সাধারণ নেতাকর্মীরা নেই।’

এদিকে শরীয়তপুর-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা সভাপতি সফিকুর রহমান কিরণ ও জামাল শরীফ হিরু। সফিকুর রহমান কিরণ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।  দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে আশা করি— তিন আসনেই জয়ী হবো।’

তবে জামাল শরীফ হিরুকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেনি। 

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি

২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে সম্মেলন করে ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ— ত্যাগী নেতাকর্মীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে কমিটি গঠন করায় মাঠের রাজনীতিতে নামতে পারছে না বিএনপি। এই কারণে দীর্ঘদিনেও জেলা শহরে দলের একটি কার্যালয় স্থাপন করা  হয়নি।  

জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম নিজেও জেলা শহরে থাকেন না। তিনি জেলা শহরে এলেই কেবল দলে এক ধরনের চাঙ্গাভাব দেখা যায়। এছাড়া, বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমা মোকাবিলা করতেই ক্লান্ত।

জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম বলছেন, ‘সবই সাময়িক। নতুন কমিটি হয়েছে। সব সমস্যা মিটিয়ে দল গোছাতে কিছুটা সময় লাগবে। জেলা বিএনপিতে বড় ধরনের কোনও কোন্দল বা গ্রুপিং নেই। আর পদপদবী নিয়ে মান-অভিমান সব দলেই থাকে। কাজ করার ইচ্ছা থাকলে যে কোনও পদে থেকেই করা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন নির্বাচন ও আন্দোলন দুটো বিষয় মাথায় রেখেই কাজ করছি। তবে যেসব এলাকায় আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে, সেগুলোর সম্মেলনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ’

জেলা বিএনপির একনেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এমন এক কমিটি দেওয়া হয়েছে, যে কমিটির পাঁচ জন থাকেন বিদেশে। ২৭ জন সহ-সভাপতির মধ্যে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন সক্রিয়, বাকিরা নিষ্ক্রিয়। সব মিলিয়ে জেলা শহরে অবস্থান করেন এবং যারা আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন,এমন নেতাকর্মীদের কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়নি। এ কারণে গত একযুগের বিদ্যমান দ্বিধা-বিভক্তি মেঠানো যায়নি। ’

আগের জেলা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার বাধন বর্তমান কমিটিতে কার্যকরী সদস্য পদে আছেন। তিনি বলেন, ‘যারা কঠিন সময়গুলোতে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন, এমন ত্যাগীদের কমিটিতে যথাযোগ্য জায়গায় রাখা হয়নি। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে গঠন করা হয়েছে কমিটি।’

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, ‘বাস্তবতা হলো— নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে জেলা বিএনপির কর্মকাণ্ড প্রত্যাশিত মাত্রা পাচ্ছে না। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দলের প্রতি ভালোবাসা থাকলেও আমাদের মতো সিনিয়র পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে সমন্বয়টা ভালো হচ্ছে না। বর্তমানে যারা দলের মূল পদ-পদবীতে আছেন, তারা ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের যথাযথভাবে ডাকেন না। যাদের হাত ধরে এ জেলায় বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তাদের অংশীদারিত্ব দিতে নতুন নেতৃত্ব রাজি না। একারণেই দলে এক ধরনের অচলাবস্থা রয়েছে।’

নরসিংদী জেলা বিএনপি

দীর্ঘ পাঁচ বছরের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে নরসিংদী জেলা বিএনপি। সর্বশেষ ২০১১ সালে দুবছর মেয়াদী কমিটি গঠনের পর নতুন করে আর কোনও কমিটি হয়নি এ জেলায়। যদিও নেতারা বলছেন— বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপিকে কোনও মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। কমিটি গঠনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিটিং করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।

মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতে আমরা একসঙ্গে বসে একটা সভা করে যে কমিটি করবো, সেই পরিস্থিতি এখন নেই। নেতাকর্মীদের নামে হাজারও মামলা রয়েছে। তাহলে কীভাবে নতুন কমিটি করবো, বলেন এই নেতা। 

মাদারীপুর জেলা বিএনপি

পাঁচ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে মাদারীপুর জেলা বিএনপির কার্যক্রম। গত পাঁচ বছরে বেশ কয়েকবার নতুন কমিটির দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

জানা গেছে, ২০১০ সালে মাদারীপুর জেলা কমিটি গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র মোতাবেক কমিটির মেয়াদ ‍ছিল তিন বছরের। সেই হিসেবে ২০১৩ সালে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়।

এবিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক জাহান্দার আলী জাহানকে একাধিকবার ফোনে চেষ্টা করা হলেও তাদের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ