X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই বিএনপির

সালমান তারেক শাকিল
০৪ জুন ২০১৯, ২৩:৩২আপডেট : ০৪ জুন ২০১৯, ২৩:৩৬

চার কারণে রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই বিএনপির বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি কিংবা  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের দলের ভরাডুবিকে কেন্দ্র কার্যকর কোনও প্রতিবাদ-কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ‘মিনিমাম প্রতিবাদ’ কর্মসূচি দেওয়ার চাপ থাকলেও গা করেননি দলের নীতি-নির্ধারকরা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মতে, অন্তত চার কারণে  বিএনপিতে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই।

বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার মতে, চার কারণে কোনও কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না।  প্রথমত, নির্বাচনের পরদিন (৩১ ডিসেম্বর) ও এরপরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের যত বৈঠক হয়েছে, ওই বৈঠকগুলোয় কোনও সদস্যই কর্মসূচির পক্ষে কথা বলেননি। দ্বিতীয়ত, লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান নিজেও কর্মসূচি দিয়ে দলীয় প্রধানকে মুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান। সেক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকেও অনীহা ছিল। তৃতীয়ত, নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতারা আলোচনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। চতুর্থত, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে যেসব কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল, তা ‘স্যাবোটাজ’ হয়েছে নানা কারণে। এর মধ্যে গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর এবং একটি গোষ্ঠীর ‘রহস্যজনক’ আচরণ নিয়েও ভীতি তৈরি হয়েছে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে। ফলে, যেকোনও কর্মসূচি দেওয়ার আগে ‘স্যাবোটাজভীতি’ কাজ করছে দলটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।

কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তার মতে, ‘বিএনপিকে কর্মসূচি দেওয়ার আগে দেখতে হবে, এই অচলাবস্থা শুরু হয়েছে কবে থেকে। এক-এগারোর সময় ছদ্মবেশী সেনাশাসনের ধারাবাহিকতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। এক-এগারোর সরকারের সময়  রাজনৈতিক দল ও নেতাদের বিরুদ্ধে যত নির্যাতন, গ্রেফতার করা হয়েছে, তার আশিভাগই বিএনপির। এই সরকার আসার পর থেকে খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা পড়েছেন সরকারের রোষানলে। মামলা বেড়েছে, হামলা বেড়েছে, আদালতে হাজিরা দিতে-দিতে নেতাকর্মীদের হয়রান অবস্থা। খালেদা জিয়াকে শেষ করে বিএনপিকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল ছদ্মবেশী সামরিক সরকার, তা এখনও অব্যাহত আছে।’

বিএনপির এই নেতা মনে করেন, ‘উল্লিখ কারণেই সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার কোনও নিশ্চয়তা নেই। দলের অনেকে মনে করেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়েও সংগঠন গোছানো যায়, আবার অনেকেও এও মনে করেন, সংগঠন গোছানোর পর আন্দোলন বা কর্মসূচির চিন্তা করা ভালো।’

দলটির একাধিক দায়িত্বশীল জানান, কর্মসূচি দেওয়ার পেছনে আরেকটি বাধা জামায়াত। জোটগতভাবে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় বিগত দুই যুগে ‘জামায়াত-বিএনপি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল হিসেবে জামায়াতকে সঙ্গে রাখায় নাগরিক সমাজ কিংবআ বিদেশি সুহৃদদেরও কোনও সমর্থন পায় বিএনপি। বিশেষ করে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রাথমিক কর্মসূচিগুলোতেও নাগরিক সমাজ মুখ খোলেনি। এ নিয়ে হাইকমান্ডের মধ্যে বাস্তবতা উপলব্ধি হচ্ছে। যে কোনও কর্মসূচি দেওয়ার আগে সংগঠন গোছানো ও ‘রাজনীতি’ করাই এখন বিএনপির লক্ষ্য।

সাংগঠনিকভাবে দলটিকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বিএনপির একাধিক নেতা। তাদের মতে, রাজনীতিতে বিএনপির যে অচলাবস্থা, তা থেকে বের হতে নিয়মিত রাজনীতি ও সংগঠন শক্তিশালী করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। এ কারণে কর্মসূচির বিষয়ে অনেকটা ‘শাটডাউন’ অবস্থান নেবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

এদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক প্রভাবশালী নেতা বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে জানান, বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে দিন-দিন। জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের বাসায় অন্তত তিনদিনের হরতাল দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বিএনপিকে।

ফ্রন্টের শরিকদের এমন পরামর্শকে পাত্তাই দেননি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। উপরন্তু এর রেশ এসে পড়ে গত মাসেও। নাগরিক ঐক্যের আহ্বানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রকাশ্যেই মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করেছেন।

ঐক্যফ্রন্টের প্রভাবশালী এক নেতার সন্দেহ, ‘খোদ খালেদা জিয়াই এখন ডিরেকশন লেস।’ এই নেতার ক্ষোভ, ‘বিএনপি নির্বাচনের বিষয়ে দাঁড়াতে পারলো না, এমনকি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়টিও দলটি ক্যাশ করতে পারলো না। সবকিছু এখন লন্ডনে, এখানে কারও হাতেই কিছু নেই।’

কর্মসূচি না থাকার বিষয়টি নিয়ে বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা ব্যাখ্যা করেন। তার যুক্তি, ‘‘খালেদা জিয়ার বিষয়টি মোটেও নাগরিক সমস্যা নয়। বিষয়টি নির্ভর করে নেতাকর্মী ও সংগঠনের ওপর। এক্ষেত্রে নেতাকর্মীরা নিজেরাই বিপদগ্রস্ত ও সংগঠন দুর্বল। একইসঙ্গে নাগরিক সমস্যা নিয়েও কাজ করতে পারেনি বিএনপি। রাজধানী হিসেবে পুরো শহরটি একটি ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। কিন্তু দলীয়ভাবে কোনও পরিকল্পনা নিতে পারেনি বিএনপি। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকেই তার পরিবারের চিকিৎসা, তার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হয়। সেক্ষেত্রে যেই-ই ক্ষমতায় থাকুক, সব প্রক্রিয়া নিজেকেই করতে হয় বলে রাজনৈতিকভাবে মানুষ নিষ্ক্রিয়।  

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘নানা কারণেই আমরা কর্মসূচি নিয়ে সামনে যেতে পারিনি। আমাদের কাছে খালেদা জিয়ার বিষয়টিই প্রাধান্য পাচ্ছে। তার মুক্তি, জামিন, স্বাস্থ্য, তার মনোবলসহ নানা বিষয় আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। দলীয় রাজনীতি ও সংগঠন শক্তিশালী করতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রাম এর সময় নির্ধারণ করে দেবে।’

আর দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু অবশ্য সতর্ক করলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। লক্ষ্মীপুরে নুসরাতের মামলায় ওসিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিলেও সরকার গা করছে না। কোনও প্রতিষ্ঠানই পারফর্ম করছে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ওসিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।’ সব মিলিয়ে বিএনপিকেই নেতৃত্ব দেওয়াসহ কর্মসূচি নিয়ে ভাবতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত