X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেতন নিয়ে ধন্দে জাতীয় লিগের ক্রিকেটাররা

রবিউল ইসলাম
২৪ এপ্রিল ২০১৭, ২১:১৫আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ২১:২৭

বেতন নিয়ে ধন্দে জাতীয় লিগের ক্রিকেটাররা প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা খেলোয়াড়দের বেতন বাড়ার পরই আসলে বেড়ে গিয়েছিল প্রত্যাশার পর্যায়টা। অথচ জাতীয় দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের দেখতে হলো মুদ্রার উল্টো পিঠ! বেতন বাড়া তো দূরের কথা, মাসিক যে টাকা পেত, সেটাও বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাবনা উঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)!

জাতীয় লিগ বা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আওতাভুক্ত ক্রিকেটারদের বেতন বন্ধ করে শুধু ম্যাচ ফি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ থেকে। ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রধান আকরাম খান জানিয়েছেন তেমনটাই, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন পদ্ধতি বাতিল করে ম্যাচ ফি বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।’

জাতীয় দলে জায়গা হারানো আব্দুর রাজ্জাক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিয়মিত মুখ। বেতন বাতিল করার প্রস্তাবনায় স্বাভাবিকভাবেই হতাশ এই স্পিনার। ‘বাংলা ট্রিবিউন’কে তিনি বলেছেন, ‘এগুলো জটিল বিষয়, আমাদের কথা বলে আসলে লাভ নেই। যা সিদ্ধান্ত হওয়ার তাই হবে। আমাদের বলে কী হবে! তবে এই মুহূর্তে বিষয়টি যেহেতু প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে, খুব বেশি মন্তব্য করা কঠিন। ক্রিকেটের স্বার্থের বাইরে কোনও সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই আমরা কথা বলব।’

তবে ম্যাচ ফি বাড়লে বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন হবে না বলে মনে করেন রাজ্জাক, ‘ম্যাচ ফি বাড়ানোর কথা বললেও সেই হারে হয়তো ম্যাচ ফি বাড়বে না। খুব বেশি হলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা হতে পারে।’

আকরাম খান অবশ্য ম্যাচ ফি’তে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তবে সেটা কত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন, ‘ম্যাচ ফিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, এতটুকই বলতে পারি।’

অভিজ্ঞ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফীস শুধুমাত্র ম্যাচ ফি’র পক্ষে। সেক্ষেত্রে অবশ্য ম্যাচ ফি ন্যুনতম এক লাখ টাকা হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি, ‘বেতন পদ্ধতি না থাকলে আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সেক্ষেত্রে অবশ্য ম্যাচ ফি কমপক্ষে এক লাখ টাকা হতে হবে।’

প্রায় ১৮ বছর ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা মোহাম্মদ শরীফ অবশ্য দুটো বিষয়ের ভারসাম্য আনার চেষ্টা করলেন। তিনি মনে করেন, দুটোই থাকা উচিত। সময়ের দাবির কারণে ম্যাচ ফি ও বেতন বাড়ানো উচিত। তার বক্তব্যটা এমন, ‘ম্যাচ ফি বাড়াবে? কিন্তু সেটা কত? যদি এক লাখও করে তাহলেও হয়। কিন্তু সেটা তো আর হবে না। আমি মনে করি ম্যাচ ফি বাড়িয়ে ৪০ কিংবা ৫০ হাজার টাকা করা হোক। সেই সঙ্গে বেতনটা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা করলেই বিষয়টিতে ব্যালেন্স হয়। তাতে করে খেলোয়াড়দের খেলার মান বাড়ার পাশাপাশি আর্থিক সমস্যার সমাধানও হবে।’

২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো বিসিবি প্রথম শ্রেণির ১২০ জন ক্রিকেটারকে বেতনের আওতায় আনে। সেই বেতনের স্তর আবার তিনটি। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা খেলোয়াড়রা মাসে বেতন পান ২৫ হাজার টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরির বেতন ২০ হাজার টাকা, আর ‘সি’ ক্যাটাগরিভুক্তরা পান ১৫ হাজার টাকা করে। তারা সবাই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার সময় বিসিবির নির্ধারণ করে দেওয়া পরিমাণ অনুযায়ী ম্যাচ ফিও পান।

সেখানে আবার দুটো স্তর আছে। প্রথম স্তরের ২৫ হাজার এবং দ্বিতীয় স্তরে ২০ হাজার টাকা করে পান ম্যাচ ফি হিসেবে।

সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরে থাকা একজন ক্রিকেটারের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ লাখ টাকা। কোনও কোনও খেলোয়াড়দের এটা কমে দেড়-দুই লাখ টাকা আয় হয়।

প্রস্তাবটা বাস্তবায়ন হলে জাতীয় দলে বিষয়টির দীর্ঘমেয়দী প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন শরীফ, ‘এই পদ্ধতি আমাদের ক্রিকেটে খারাপ প্রভাব ফেলবে। জাতীয় দলের সঙ্গে বাইরের খেলোয়াড়দের এত বড় বৈষম্য থাকা উচিত নয়। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অবশ্যই আমাদের ক্রিকেটে পড়বে।’

২০১৩ সালের থেকে প্রতি বছরই একটু একটু করে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে বিসিবি। গত বছর সংখ্যাটা ছিল ৮৫ জনের। এই সংখ্যাটা চলতি মৌসুমে ৭৭ জনের। যদিও চুক্তি থাকলেও বেতন পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এই ক্রিকেটারের। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ ক্রিকেটাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বলে শঙ্কা শরীফের, ‘ক্রিকেটের পাইপলাইন ঠিক রাখতে হলে। নতুন প্রজন্মকে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে গেলে আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করতেই হবে। এর কোনও বিকল্প নেই।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আমি মনে করি, ভালো খেলোয়াড় বাছাই করে ১২০ থেকে ১৩০ খেলোয়াড়কে চুক্তির আওতায় এনে তাদেরকে বেতন দিতে হবে। যাতে করে সাকিব-‍মুশফিকরা চলে গেলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে খারাপ মুহূর্ত তৈরি না হয়।’

জাতীয় ক্রিকেট লিগ শাহরিয়ার নাফীস আবার মনে করে, টেস্ট ক্রিকেটের অর্ধেক হওয়া উচিত জাতীয় লিগের ম্যাচ ফি। এটা হলে ক্রিকেটারদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে। বাংলাদেশের টেস্টে উন্নতি করতে হলে এই পদ্ধতির বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি, ‘আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করা জরুরি। জাতীয় লিগের খেলোয়াড়দের অবহেলা করে টেস্টের উন্নতি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিসিবির এমন সিদ্ধান্ত খেলোয়াড়দের নিরুৎসাহিত করবে। তবে ম্যাচ ফি যদি এক লাখ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ভিন্ন কথা। তার কম হলে অবশ্যই বেতন কাঠামো রাখতেই হবে। বোর্ড ক্রিকেটারদের আর্থিক নিশ্চয়তা না দিতে পারলে ধীরে ধীরে তরুণরা ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তখন পাইপলাইনে খেলোয়াড় সংকট তৈরি হবে।’

জাতীয় লিগ কিংবা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের স্বার্থরক্ষা করতে অভিজ্ঞ এই খেলোয়াড়দের পরামর্শ, ‘বোর্ডের তো টাকার অভাব নেই। তাদের ইচ্ছা ও আন্তরিকতা যথেষ্ট এখানে। জাতীয় লিগের ক্রিকেটারদের দিকে বিসিবি যদি  আরও একটু ভালোভাবে নজর দেয়, তাহলে আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের জন্যই ভালো হবে।’

/কেআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত