X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারোত্তোলন পাল্টে দিয়েছে সীমান্তর জীবন

তানজীম আহমেদ
০৮ মার্চ ২০১৮, ১১:৪৫আপডেট : ০৮ মার্চ ২০১৮, ১২:০৪

মাবিয়া আক্তার সীমান্ত বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের এখন দৃপ্ত পদচারণা। শুধু খেলার মাঠে নয়, সংগঠক হিসেবেও দেশের জন্য অনেক অবদান রাখছেন নারীরা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাদেরই কয়েকজনকে নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ আয়োজনে থাকছে এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী মাবিয়া আক্তার সীমান্তর কথা।

সীমান্ত কখনও ভেবেছিলেন এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জিতে নিজে কাঁদবেন, আর দেশের মানুষকেও কাঁদাবেন? ৬৩ কেজি ওজনশ্রেণিতে স্বর্ণপদক জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখন মেয়েদের ভারোত্তোলনের প্রতিশব্দই যেন ‘সীমান্ত’। অথচ একসময় কত বাধার সামনেই না পড়তে হয়েছিল তাকে! সবচেয়ে বড় বাধা ছিল দারিদ্র্য।

খিলগাঁও সিপাহীবাগের ঝিলপাড়ের একটি টিনের বাসায় হারুনুর রশীদ ও আক্তার বানুর তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সংসার। বাবা সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক, তাই সংসার চলছিল কোনও মতে। হঠাৎ মামা কাজী শাহাদাত হোসেনের অনুপ্রেরণায় পাল্টে যায় সীমান্তর জীবন, জড়িয়ে পড়েন ভারোত্তোলনের সঙ্গে। ২০১০ সালে ক্যারিয়ার শুরু করা সীমান্তর ভাগ্য খুলে যায় ২০১৬ সালে। ভারতের গৌহাটি-শিলংয়ে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জিতে দেশের মানুষের ভালোবাসা, আর্থিক পুরস্কার, ফ্ল্যাট সবই পেয়েছেন তিনি।

বলতে গেলে সীমান্তর জীবন পাল্টে দিয়েছে সেই স্বর্ণপদক। তিনি বললেন, ‘ভারোত্তোলন আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। আমি কখনও ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখিনি। কারণ আমি গরীব ঘরে জন্মেছি। তবে এখন ভাগ্য বদলে গেছে বলতে পারেন। এসএ গেমসে স্বর্ণ জয়ের পর সরকার আর্থিক সহায়তা আর ফ্ল্যাট দিয়েছে, আরও অনেকেই সাহায্য করেছে।’

মামার হাত ধরে ভারোত্তোলনে এসেছিলেন সীমান্ত। তবে ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে একসময় খেলাটি চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল তার জন্য। সেই দুঃসময়ে ভারোত্তোলন ফেডারেশনের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তার দিকে। সেজন্য সীমান্ত তার প্রতি কৃতজ্ঞ, ‘শুরুতে ভারোত্তোলন পছন্দ করতাম না, কারণ ভারী জিনিস ওপরে ওঠাতে হয়। তবে ধীরে ধীরে এটা আত্মস্থ করে ফেলি। ভারোত্তোলন ব্যয়বহুল খেলা, এর জন্য পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। আমার পরিবারের সে সব খাবার দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। তখন উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন সাহেব আমাদের টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছেন, খাবার কিনে দিয়েছেন, আমাদের পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমি জানতাম দারিদ্রের সঙ্গে ‍যুদ্ধ করা কঠিন। তাই কিছু জয় করতে হলে খেলাধুলার মাধ্যমে করতে হবে, আর সেটাই করে যাচ্ছি।’

হারুনুর রশীদকে প্রতিবেশীদের কম কথা সহ্য করতে হয়নি। ছোট মেয়ে সকালে গিয়ে রাতে বাসায় ফেরে। ‘কই যায়? কী করে?’ এমন নানা প্রশ্নের মুখোমুখি  হতে হতো সীমান্তর বাবাকে। সে সব দিনের কথা আজও ভুলতে পারেননি তিনি, ‘ঝিলপাড়ের বাসায় সাঁকো দিয়ে যেতে হতো। আমার খেলাধুলায় জড়িয়ে পড়া এলাকার অনেকেই মেনে নিতে পারতো না। বাবাকে অনেক প্রশ্ন করতো। আমি সকালে বেরিয়ে রাতে বাসায় ফিরতাম। অনেকেই প্রশ্ন করতো, সারাদিন আমি কী করি। আমাকে কেউ সরাসরি প্রশ্ন করলে বলতাম আমি স্পোর্টসে আছি। এভাবে লড়াই করতে হয়েছে। আমার বাবা-মা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।’

এখন সে সব প্রতিবেশীর আচরণ বদলে গেছে। সীমান্তর কথা, ‘স্বর্ণপদক জেতার পর তারা বলে, খেলাধুলার সঙ্গেই থাকো, দেশের মুখ উজ্জ্বল করো। মাদারীপুরের গ্রামের বাড়িতেও আমার এখন অনেক সুনাম। আমার বাবাকে একসময় আমাদের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছিল। এমনকি খেলার পোশাক নিয়েও কম কথা শুনতে হয়নি। এখন আর সেই সমস্যা তেমন নেই।’

খেলাধুলায় মেয়েদের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তার মন্তব্য, ‘আমি যখন এসেছিলাম তখন অনেক কিছুই ছিল না। এখন সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। আমি কখনও চিন্তাও করিনি সরকারি চাকরি করবো। এখন আমি আনসারে চাকরি করি। আসলে জীবনে ঝুঁকি না নিলে বড় হওয়া যায় না।’

/টিএ/এএআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ