X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাবার স্বপ্নপূরণই লক্ষ্য মৃত্যুঞ্জয়ের

রবিউল ইসলাম
১৪ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:২৪আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১০:৩৩

মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা তাহাজ্জত হোসেন চৌধুরী ক্রিকেটের পাঁড়ভক্ত। না হলে কি আর কোনও বাঙালি বাবা সন্তান জন্মের পরই তাকে পেস বোলার বানানোর স্বপ্ন দেখেন! সেই স্বপ্নপূরণের পথে বড় বাধা ছিলো শহর থেকে দূরে সাতক্ষীরার সাদামাটা জীবন। সেখানে ছিলো না ক্রিকেটের কোনও অবকাঠামো। ২০০০ সালে সাতক্ষীরার  কলারোয়া উপজেলার হিজলদী গ্রামে জন্ম মৃত্যুঞ্জয়ের। শৈশব ওখানে কাটলেও ২০১০ সালে সাতক্ষীরা থেকে মৃত্যুঞ্জয়দের পরিবার চলে আসে ঢাকায়। খুলে যায় তার পেসার হওয়ার স্বপ্নপূরণের দুয়ারও।

নিজে ওয়াসিম আকরামের বোলিংয়ের ভক্ত বলে ছেলেকেও 'সুলতান অব সুইংয়ের' মতো দেখার স্বপ্ন ছিলো তাহাজ্জত হোসেনের । সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ২০১২ সালে ক্রিকেট কোচিং স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করে দেন। আবাহনী মাঠ থেকে শুরু হয় মৃত্যুঞ্জয়ের স্বপ্নপূরণের লড়াই। পেস বোলিংটা তার সহজাত  দ্রুতই বয়সভিত্তিক দলের সিঁড়ি ভেঙে বাংলাদেশ যুবদলে জায়গা করে নেন। সেই তার হাতেই এখন আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করার চ্যালেঞ্জ।

পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও করতে পারেন। দলের অন্য পেসারদের মধ্যে তার ব্যাটিংই সবচেয়ে ভালো। ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস তার পছন্দের ক্রিকেটার। তবে মৃত্যুঞ্জয়ের স্বপ্নের ক্রিকেটার প্রোটিয়া পেসার ডেইল স্টেইন। হতে চান তার মতোই। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অন্য ক্রিকেটারদের মতো তারও মনজুড়ে জাতীয় দলে খেলার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

২০১৮ সালে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব-১৭ দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে ভারত সফরে যান মৃত্যুঞ্জয়। সেই সিরিজে দারুণ সব কাটার ও রিভার্স সুইংয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের নাকাল করে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন সাতক্ষীরার তরুণ।  এরপর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় অনুর্ধ্ব-১৯ ত্রিদেশীয় সিরিজেও দারুণ পারফর্ম করে তিনি এখন যুব বিশ্বকাপ দলে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের কান্ডারী।

অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ যোদ্ধাকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে বাংলা ট্রিবিউনে। আজ থাকছে পেসার মোহাম্মদ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুনের একান্ত সাক্ষাৎকার−

বাংলা ট্রিবিউন: শুনেছি, আপনার বাবার স্বপ্ন ছিলো আপনাকে বাঁহাতি পেসার বানাবেন, সেই থেকেই কি ক্রিকেটার হয়ে ওঠা?

মৃত্যুঞ্জয়: ছোটবেলা থেকেই আব্বার স্বপ্ন ছিলো আমাকে ক্রিকেটার বানাবেন। আমার আব্বু ওয়াসিম আকরামের  খুব ভক্ত । সেই কারণেই আমার জন্মের সময়ই আমার বাবা পরিকল্পনা করেছিলেন আমাকে বাঁহাতি পেসার বানাবেন। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় আব্বার স্বপ্নপূরণে বিলম্ব হয়। পরে ঢাকার আসার পর সেটা করতে পেরেছেন। আমি নিজেও পেস বোলিং উপভোগ করতাম।

বাংলা ট্রিবিউন: ঢাকায় এসে কোথায়, কীভাবে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হলেন?

মৃত্যুঞ্জয়: আমরা দুই ভাই। আব্বু স্কুল শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসরে। আমার বড় ভাই এখন পরিবার চালায়। ঢাকায় আসা মূলত  বড় ভাইয়ের জন্য। উনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। ঢাকায় একা থাকতে ভাইয়ার খুব কষ্ট হতো। ২০১০ সালে ভাইয়ার কারণেই আমাদের পুরো পরিবারকে ঢাকায় আসতে হয়। ঢাকায় এসে আরও ২-১ বছর কেটে গেলেও ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারিনি। ২০১২ সালের শুরুর দিকে পরিবার সিদ্ধান্তে আবাহনী মাঠে অনুশীলন শুরু করি। ক্রিকেট কোচিং স্কুলে আমার ক্রিকেট দীক্ষা শুরু। এই মুহুর্তে আমি উদয়ন ক্রিকেট একাডেমিতে অনুশীলন করছি।

বাবার স্বপ্নপূরণই লক্ষ্য মৃত্যুঞ্জয়ের বাংলা ট্রিবিউন: সাতক্ষীরায় কখনও ক্রিকেট খেলেননি?

মৃত্যুঞ্জয়: সেভাবে খেলা হয়নি। সাতক্ষীরায় ক্রিকেটের অবকাঠামো তেমন ছিল না। সাতক্ষীরার অবকাঠামো উন্নত হয়েছে সৌম্য ও মোস্তাফিজ ভাই জাতীয় দলে আসার পর থেকে। এর আগে ক্রিকেট নিয়ে সেরকম কেউ চিন্তা করতো না। তবে এমনিতেই টেপ টেনিস ও ফাইভ স্টার বলের ক্রিকেট  দেখতাম। আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে খেলতাম। আমার ভাই প্রতিদিন একটা করে বল হারাতো। ফাইভ স্টার নামে একটা বল। ২০০৬ সালে ওটা খুব দামি বল ছিল। আব্বুর  কাছ থেকে প্রায়দিনই বলের জন্য ৭৫ টাকা করে নিতাম। বড় ভাইকে চ্যালেঞ্জ দিতাম, তবুও তার কাছে মার খেতাম।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন নিশ্চয়ই?

মৃত্যুঞ্জয়: ক্লাস সেভেন পর্যন্ত খুব ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পেরেছি। এরপর যখন খেলাধুলায় ভালো করতে শুরু করলাম, খেলার চাপ বাড়লো, পরীক্ষা মিস করতে থাকলাম। তখন আব্বু একটু টেনশনে পড়েন, খেলতে গিয়ে দুই কূল হারাই কি না। তবে বিভিন্ন জায়গায় সুযোগ পাওয়ার কারণে আস্তে আস্তে পড়াশোনার  চাপ সরে যায়। আব্বুরও যেহেতু আমাকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন ছিল, সুতরাং তার আর আমার স্বপ্ন মিলে বেশি সমস্যা হয়নি। সত্যি বলতে ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পরিবারের শতভাগ সাপোর্ট পেয়েছি।    

বাংলা ট্রিবিউন: তিনদিন পরই বিশ্বকাপ শুরু, দলের প্রস্তুতি কেমন?

মৃত্যুঞ্জয়:  আমি মনে করি আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভালো। বিগত কয়েকটি সিরিজের পাশাপাশি এখানে আমাদের কয়েক সপ্তাহের ক্যাম্প হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কাল প্রস্তুতি ম্যাচ খেললাম, সেখানে আমাদের ব্যাটসম্যান-বোলাররা ভালো করেছে। আরও একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। দেশে ও দেশের বাইরে অনেকগুলো সিরিজ খেলাছি, ওখানে আমাদের ফল খুব ভালো ছিলো। সব মিলিয়ে প্রস্তুতি ভালো মনোবলও খুব ভালো।  আশা করি সকলের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো।

বাংলা ট্রিবিউন: দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

মৃত্যুঞ্জয়: নিজের স্বপ্ন বিশ্বকাপে সেরাদের তালিকায় থাকা। যেহেতু পেসবান্ধব উইকেট থাকবে, আমার সেরাটাই চেষ্টা করবো।  অতিরিক্তি কিছু করার চেয়ে স্বাভাবিক বোলিংটাই করতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: যুব ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট (২০ ম্যাচে ৩৪টি)  আপনার, ব্যক্তিগত প্রস্তুতি আসলে কেমন?

মৃত্যুঞ্জয়: দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মতোই উইকেট। আমি ওখানে দুটি সিরিজ খেলেছি। কন্ডিশনটা খুব ভালোই আমার জানা । সত্যি বলতে আমি খুব রোমাঞ্চিত। আশা করি ওখানে দলের জয়ে অবদান রাখতে পারবো। গত দুই বছর যে পরিশ্রম করেছি, সেটার প্রতিদান পাবো।

বাংলা ট্রিবিউন: মোস্তাফিজের বোলিং অনুসরণ করেন বলছিলেন, আবার ডেইল স্টেইনের মতো গতি তোলার স্বপ্ন, এ ব্যাপারে জানতে চাই।

মৃত্যুঞ্জয়: মোস্তাফিজ ভাইকে দেখে অনুপ্রাণিত, তবে নিজের মতো করেই চেষ্টা করি।  আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক পেসে বোলিং করলে ব্যাটসম্যানরা সহজেই রিড করতে পারে।  অনূর্ধ্ব-১৭ থেকে শুরু করে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। ওখান থেকে আমি শিখেছি কিভাবে পেসে ভেরিয়েশেন আনতে হয়। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ । নতুন বলে না হলেও পুরোনো বলে দরকার। এই মুহূর্তে আমার বলের গতি ১৩৫ কিমির আশেপাশে। ডেইল স্টেইনের মতো গতি তুলতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: বাবার অনুপ্রেরণার কথা যদি বলেন…

মৃত্যুঞ্জয়: আব্বুই বেশি স্বপ্ন দেখেন,  সবসময় ইতিবাচক কথা বলে। ক্রিকেটের সব খোঁজখবর রাখে। ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার ১০-১৫ বছরের।  এক বছর  খারাপ গেলে আরেক বছর ভালো যেতে পারে। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল আমি ৯ বছর ক্রিকেট একাডেমিতে অনুশীলন করে ২০১৮ সালে ক্লিক করেছি ওটাই আমার জন্য টার্নিং পয়েন্ট। এমন আসবে ক্রিকেটারদের। এগুলোই আমাকে আমার বাবা আমাকে বোঝান। তার কথায় অনুপ্রাণিত হই।  এখন স্বপ্ন দেখি একদিন জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলবো

বাংলা ট্রিবিউন: ডেইল স্টেইনের মতো গতি তুলতে চান, তবুও কেন স্টোকস ও সাকিব প্রিয় ক্রিকেটার?

মৃত্যুঞ্জয়: দুইজনই অলরাউন্ডার। দুইজনেরই দলে অবদান  অনেক। বিশেষ করে বেন স্টোকস তো অসাধারণ। সাকিব ভাইও তা-ই। ঠান্ডা মাথায় যেভাবে খেলেন!

 

প্রোফাইল

নাম : মোহাম্মদ মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী

ডাক নাম : মৃত্যুন

জন্ম :  ২৮ জানুয়ারি, ২০০১

জন্মস্থান :  সাতক্ষীরা 

উচ্চতা :  ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি

পড়াশুনা :  এইচএসসি

প্রথম ক্লাব :  ক্রিকেট কোচিং স্কুল (সিসিএস)

বর্তমান ক্লাব : গোল্ডেন বয়েজ  

ব্যাটিং স্টাইল : বাঁহাতি

বোলিং স্টাইল: বাঁহাতি

প্রিয় ডেলিভারি : কাটার

প্রিয় মানুষ :  বাবা-মা

প্রিয় ক্রিকেটার :  ডেইল স্টেইন, বেন স্টোকস ও সাকিব আল হাসান

প্রিয় বন্ধু :  বড় ভাই

ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত : ২০১৮ সালে আফগানিস্তান সিরিজটা।  

ছবি- সাজ্জাদ হোসেন। 

/আরআই/পিকে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ