X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয়ভাষিণীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল তারই সহকর্মী

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
০৮ মার্চ ২০১৮, ১৮:৪২আপডেট : ০৯ মার্চ ২০১৮, ১০:৫৬

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী একাত্তরে খুলনার খালিশপুর এলাকায় মুন্সিবাড়িতে বসবাস করতেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ছিলেন খুলনার ক্রিসেন্ট জুটমিলের টেলিফোন অপারেটর। যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিনের মাথায় ফিদাহ নামে এক সহকর্মী ফেরদৌসীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। হানাদার বাহিনী তাকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হতে থাকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জুটমিলে আগের চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু সহকর্মীরা তাকে কটূক্তি করতেন। এ কারণে চাকরি ছেড়ে দেন প্রিয়ভাষিণী। পরে ‘বীরাঙ্গনা’ হিসেবে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করে একটি প্রতিষ্ঠান। তার এই পরিচয়টি প্রকাশ হওয়ায় স্বামী কাজী সিরাজুল ইসলাম তাকে তালাক দেন। এরপর শুরু হয় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সংগ্রামী জীবন।

মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সম্পর্কে এভাবেই স্মৃতিচারণ করলেন তার সান্নিধ্য পাওয়া ইসরাত আরা হীরা। ইসরাত আরা খুলনার সোনালী দিন প্রতিবন্ধী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা ছিলেন বলেও জানান তিনি।

ইসরাত আরা হীরা বলেন, ‘পিপলস জুটমিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহমেদ রেজা ১৯৬৬ সালে ফেরদৌসীকে ওই প্রতিষ্ঠানের টেলিফোন অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেন। বছরখানেক চাকরি করার পর ফেরদৌসী বেশি বেতনে প্লাটিনাম জুটমিলে একই পদে চাকরি নেন। সেখানেও বছরখানেক চাকরির পর  চলে যান ক্রিসেন্ট জুটমিলে।সেখানেও তিনি টেলিফোন অপারেটর ছিলেন।

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সঙ্গে ইসরাত আরা হীরা ইসরাত আরা জানান, ডিভোর্স হওয়ার পর ফেরদৌসীর প্রথম স্বামী সিরাজুলের পরিচিত আহসান উল্লাহ আহমেদ তাকে বিয়ে করতে আগ্রহী হন। তিন সন্তানকে সঙ্গে নেওয়ার শর্তে ১৯৭২ সালে আহসান উল্লাহ আহমেদকে বিয়ে করেন ফেরদৌসী। এরপর তিনি স্বামীর সঙ্গে যশোর, সিলেট ও রংপুরে বসবাস করেন। সিলেট থেকে ফেরার সময় একটি কাঠের গুঁড়িতে তিনি তার মনের মতো শিল্পকর্ম তৈরি করেন। এই শিল্পকর্মটি দেখে নড়াইলের চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান মুগ্ধ হন এবং ফেরদৌসীকে ভাস্কর হতে উদ্বুদ্ধ করেন। প্রিয়ভাষিণী হতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। তবে তিনি ভাস্কর হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৮০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ফেরদৌসী স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় যান। ওই সময় তিনি কাজ করেন গণসাহায্য সংস্থা, কানাডিয়ান হাইকমিশন ও এফএডব্লিউ-তে (ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশন)। দ্বিতীয় স্বামীর সংসারেও তার তিন কন্যাসন্তান রয়েছে বলে জানান ইসরাত আরা হীরা।

উল্লেখ্য, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনার নিরালায় নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ মাহবুবুল হক এবং মা রওশন হাসিনা। ফেরদৌসীর বাবা দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। বাবা-মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে প্রিয়ভাষিণী ছিলেন সবার বড়। ফেরদৌসীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় দৌলতপুর বীনাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর খুলনার পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি মেট্রিক পাস করেন। ১৯৬৩ সালে সাতক্ষীরার কাজী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরিবারের অমতে বিয়ে করার কারণে বাড়ি ছাড়তে হয় তাকে। এ অবস্থায় ফেরদৌসী খুলনা লায়ন্স স্কুলে বাংলা বিষয়ে জুনিয়র সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি নেন। এই চাকরির পাশাপাশি তিনি প্রাইভেটও পড়াতেন। একই সঙ্গে ফেরদৌসী যশোরের এমএম কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যান এবং এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন। ২০১০ সালে  ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী স্বাধীনতা পদক পান। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। শেষ বয়সেও নানা শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। তার ছয় সন্তান হলেন—কারু তিতাস, কাজী মহম্মদ নাসের, কাজী মহম্মদ শাকের (তূর্য), রাজেশ্বরী প্রিয়রঞ্জিনী, রত্নেশ্বরী প্রিয়দর্শিনী ও ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী।

এই নন্দিত নারী, মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী  গত  ৬ মার্চ রাতে ঢাকায় ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

 

 

 

/এপিএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী