রাজধানীতে নিত্য যানজট, ধুলাবালি, কিছুদিন পরপর সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। জীবন-জীবিকার তাগিদে এসব সমস্যা অনেকে মেনে নেন। তবুও মাঝে মধ্যে কর্মব্যস্ত জীবনটা অবসাদগ্রস্ত হয়ে ওঠে। ইচ্ছে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটু নির্মল পরিবেশে সময় কাটানোর।
রাজধানীবাসীর বিষিয়ে ওঠা মন ভালো করতে রাজধানীর ওসমানী উদ্যানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) তৈরি করছে অত্যাধুনিক এই পার্ক। এখানে এলেই গোসসা চলে যাবে, মন উৎফুল্ল হবে! তাই পার্কটিকে বলা হচ্ছে গোসসা নিবারণী পার্ক। আশা করা হচ্ছে, এখানকার নির্মল পরিবেশ দর্শনার্থীদের একঘেয়েমি ও অবসাদ কাটিয়ে দেবে।
এ ধরনের পার্ক বাংলাদেশে এটাই প্রথম। পরিবেশ-প্রকৃতি ও সুরের মূর্ছনায় সাজবে ২৯ একর জায়গাটি। সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণকাজ চলায় পুরো ওসমানী উদ্যানের চারদিক রঙিন টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
পার্কটির নকশা তৈরি ও নির্মাণকাজে যুক্ত ছিলেন বিশিষ্ট স্থপতি রফিক আজমের সাতত। প্রতিষ্ঠানটির একদল স্থপতি ও প্রকৌশলী ব্যতিক্রম পার্কটির নকশা তৈরি করেন। তারা হলেন – স্থপতি ইকরামুন নেসা, স্থপতি ফাহিম আবরার কবির, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখতার হোসেন, প্রকৌশলী লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মোহাইমিনুল ইসলাম ও প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম। তাদের মন্তব্য, এই পার্কে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রক্ষণাবেক্ষণ।
স্থপতি রফিক আজম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন লোকজন মেডিটেশন করতে পারে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আড্ডা দিতে পারে। পুরো পার্কে কোনও দেয়াল থাকবে না। যখন-তখন প্রবেশ করা যাবে। জল, প্রকৃতি ও আধুনিকতার মিশেল পাওয়া যাবে এতে। আমরা পার্কটি এমনভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছি যেখানে এলে সবার রাগ নিবারণ হয়ে যায়।’
জানা গেছে, ভেতরে একটি লেকে সারাবছর পানি থাকবে। আশপাশের এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনভাবে করা হবে যাতে বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি লেকে চলে আসে। সাউন্ড সিস্টেমে বাজবে হারানো দিনের গান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এখানে এলে মানুষের গোসসা নিবারণ হয়ে যাবে।
স্বাধীনতা চত্বর, বসার জোন, জিম, শিশু কর্নার, এলইডি টিভি, ওয়াই-ফাই জোন, স্ট্রিট লাইট, ওয়াকওয়ে থাকবে পার্কে। টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ড বোর্ড, ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস সুবিধা পাবেন খেলাধুলায় আগ্রহীরা।
এছাড়া যুক্ত হচ্ছে ফুড কর্নার, নগর জাদুঘর, পাঠাগার, কার পার্কিং, এটিএম বুথ, ওষুধের দোকান, সিসি ক্যামেরা।
ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ‘জলসবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় পার্কটি সাজাতে ব্যয় হচ্ছে ৮৬ কোটি ৮৪ লাখ ৩৮ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি শুরুর পর নির্মাণকাজ ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কয়েক দফায় পার্কের নকশা পরিবর্তন ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজের গতি কমেছে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পার্কটির বিষয়ে মেয়র সাঈদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এমন একটি ভাবনা থেকে বিশেষজ্ঞ দলের সমন্বয়ে এটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি যাতে নগরবাসী এসে প্রশান্তি পায়। পার্কটিতে প্রকৃতি ও জলের এমন মিলন ঘটবে যাতে মানুষ রাগ বা গোসসা সব ভুলে মনোরম পরিবেশে ডুবে থাকে। আমার বিশ্বাস, পার্কটি বিশ্বের জন্য মডেল হবে।’
ডিএসসিসির দাবি, উন্নত বিশ্বে এ ধরনের পার্ক নেই। ইতোমধ্যে পার্কটি নিয়ে আগ্রহ জন্মেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ আলোচিত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছে।
অ্যানিমেশন: সাতত