X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, গোসসা নিবারণী পার্ক কতদূর?

শাহেদ শফিক
১০ নভেম্বর ২০২০, ১৮:০৩আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২০, ২২:৪২

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, গোসসা নিবারণী পার্ক কতদূর? নগরবাসীর রাগ, অবসাদ, একঘেয়েমি ও গোসসা নিবারণের জন্য রাজধানীর ওসমানী উদ্যানে ব্যতিক্রমধর্মী একটি পার্ক নির্মাণ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির ব্যয় ও তিন দফা সময় বাড়ানো হলেও এখনও পার্কের ৩৫ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। আর সিটি করপোরেশন বলছে, পার্কের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এরইমধ্যে কয়েক দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত তারা পার্কের কাজ শেষ করতে না পারলে বিকল্প ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর গোসসা নিবারণী পার্কের কাজ শুরু হয়। পরের বছরের ২৭ জানুয়ারি এ কাজের উদ্বোধন করেন তখনকার মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সে সময় বলা হয়েছিল, পরবর্তী ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যেই এই পার্কের নির্মাণ করা শেষ করা হবে। কিন্তু এরই মধ্যে তিন দফায় সময় বাড়ানোর পর গত ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু এখনও প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়নি। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। সর্বশেষ গত ১০ জুন পার্কটির নির্মাণ কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এসময় তিনি কাজের অগ্রগতি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি পার্কটিতে আশপাশের যানজট নিরসনের জন্য পার্কিং ব্যবস্থা রাখান নির্দেশনা দেন।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, গোসসা নিবারণী পার্ক কতদূর? রাগ নিয়ন্ত্রণসহ নানা মানসিক সমস্যায় জর্জরিত নাগরিকদের মন ভালো করে দেওয়ার লক্ষ্যে এই পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। গুলিস্তান সংলগ্ন ওসমানী উদ্যানে তৈরি হচ্ছে এই অত্যাধুনিক পার্ক। এর ভেতরে একটি লেকে সারাবছর পানি থাকবে। আশপাশের এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা এমনভাবে করা হবে, যাতে বর্ষার সময় অতিরিক্ত পানি লেকে চলে আসে। সাউন্ড সিস্টেমে বাজবে হারানো দিনের গান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এখানে এলে মানুষের গোসসা থাকবে না, মন ভালো হয়ে যাবে। পার্কে থাকবে স্বাধীনতা চত্বর, বসার জোন, জিম, শিশু কর্নার, এলইডি টিভি, ওয়াই-ফাই জোন, স্ট্রিট লাইট ও  ওয়াকওয়ে। এছাড়া, টেবিল টেনিস, বিলিয়ার্ড বোর্ড, ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস সুবিধা পাবেন খেলাধুলায় আগ্রহীরা। এছাড়া ফুড কর্নার, নগর জাদুঘর, পাঠাগার, কার পার্কিং, এটিএম বুথ, ওষুধের দোকান, সিসি ক্যামেরা ইত্যাদি যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিএসসিসি বলছে, এখানে এলেই গোসসা চলে যাবে, মন হবে উৎফুল্ল। তাই পার্কটির নাম দেওয়া হয় ‘গোসসা নিবারণী পার্ক’। 

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ২৯ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত উদ্যানটির সংস্কার কাজে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। পরে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে ৮৬ কোটি ৮৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা করা হয়। সর্বশেষ আরও কয়েকটি প্যাকেজের কাজ যুক্ত হওয়ার পর এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। পার্কে বর্তমানে তিনটি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়। সেসব কাজের  টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। পার্কের সংস্কার কাজ করছে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বরাদ্দের ৪৫ শতাংশ বিল উঠিয়ে নিয়েছে তারা। এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রবিবার (৮ নভেম্বর) পার্কের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের পুরো এলাকা নীল রঙের টিন দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। প্রবেশপথটি তালাবদ্ধ। দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি সদস্যও কোনও কথা বলতে রাজি হননি। ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে তিনি সেই সুযোগও দেননি।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, গোসসা নিবারণী পার্ক কতদূর? ডিএসসিসি বলছে, এ ধরনের পার্ক বাংলাদেশে এটাই প্রথম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরইমধ্যে পার্কটি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পার্কটি সংস্কারের আগে এটি মাদকসেবীদের আখড়া ও ভবঘুরে মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। এ কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ এই পার্কে প্রবেশ করতেন না। সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি।

পার্কের কাজের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা নাসিরুল হাসান বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে দেখছি, পার্কের চার দিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরাও করা। কিন্তু ভেতরে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেটা আমরা কেউই জানি না। কাউকে ভেতরে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না। এখন শুনছি—এক বছরের কাজ নাকি তিন বছরেও  শেষ হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘কবে পার্ক চালু হবে, আর আমরা গোসসা নিবারণ করবো, সবই তো স্বপ্ন মনে হচ্ছে।’

পার্কটির নকশা তৈরি ও নির্মাণ কাজে শুরু থেকে যুক্ত ছিল বিশিষ্ট স্থপতি রফিক আজমের প্রতিষ্ঠান ‘সাতত’। তিনিও পার্কের কাজের অগ্রগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের বিষয়ে আরও অনেক আগেই আমি তাগাদা দিয়েছি। কাজ আরও দ্রুত করা উচিত।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক, পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উন্নয়নের নামে একটি পার্ককে বছরের পর বছর ফেলে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। খুব দ্রুত পার্কের উন্নয়নকাজ শেষ করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত।’

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, গোসসা নিবারণী পার্ক কতদূর? জানতে চাইলে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর সার্কেল) মুন্সি মো. আবুল হাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে, ‘আসলে পার্কের নির্মাণ কাজ অনেক ধীরে এগুচ্ছে। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে নোটিশ করেছি। তাদেরকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যয় বৃদ্ধির কিছু কারণ রয়েছে। প্রকল্পে অনেক কম্পোনেন্ট বাড়ানো হয়েছে। এজন্য নকশারও পরিবর্তন করতে হয়েছে। যে কারণে ব্যয়ও বেড়েছে।  এরপরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছু অবহেলা আছে বলে আমরা মনে করি।’ 

 

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা, টানা ৪ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট