আসন্ন বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ৪ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে লড়াইয়ে নেমেছেন শাশুড়ি খোদেজা বেগম ও ছেলে বউ রেবেকা সুলতানা লিমা। পারিবারিক মান-অভিমান থেকে এবার শাশুড়ির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন ছেলে বউ -এলাকায় এমনটাই শোনা যাচ্ছে। এতে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
তারা দু’জনই ভোটের জন্য ভোটারদের দ্বারো দ্বারে ছুটছেন। দু’জনই জয়লাভের ব্যাপারে আশাবাদী।
জানা গেছে, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ইভিএম পদ্ধতিতে বগুড়া পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে। ২১টি ওয়ার্ড সম্বলিত পৌরসভায় মেয়র পদে চারজন, ২১টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের সাত পদে ৫০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আবু ওবায়দুল হাসান ববি নৌকা, বিএনপির রেজাউল করিম বাদশা ধানের শীষ, ইসলামী আন্দোলনের আবদুল মতিন হাতপাখা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দ জগ প্রতীক পেয়েছেন। পুরো পৌর এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা শুরু হয়েছে। পোস্টারে পোস্টারে এলাকা ছেয়ে গেছে।
প্রার্থী ও তাদের লোকজন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন।
বগুড়া পৌরসভার ৪ নম্বর সংরক্ষিত আসনে (ওয়ার্ড নম্বর ১০, ১১ ও ১২) সাতজন প্রার্থীর অন্যতম হচ্ছেন বর্তমান কাউন্সিলর খোদেজা বেগম। আর তার অপর ৬ প্রতিদ্বন্দ্বীর একজন হচ্ছেন তার বড়ছেলে আলমগীর হোসেনের বউ রেবেকা সুলতানা লিমা। এক বাড়ির ভেতরে দুই নারীর প্রার্থিতা নিয়ে এলাকার ভোটারদের মাঝে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
তাদের এমন প্রার্থিতার কারণে পরিবারের সদস্যরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। খোদেজা বেগমের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ঘরের ভোটেও বউ-শাশুড়ির সমান সমান অবস্থান। তার বড়ছেলের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন ছোটমেয়ে নাজমা-তারা চালাচ্ছেন ছেলের বউ লিমার প্রচারণা; আর ছোটছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও বড় মেয়ে আসমা চালাচ্ছেন মায়ের (খোদেজা বেগম) প্রচারণা।
খোদেজা বেগম ওই ওয়ার্ডে পরপর দু’বার বিএনপির সমর্থন নিয়ে ও তৃতীয়বার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। বিএনপি তাকে এবার সমর্থন দেয়নি। তাই এবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। খোদেজা বেগম পেয়েছেন জবাফুল প্রতীক; আর তার ছেলে বউ লিমা পেয়েছেন চশমা প্রতীক।
প্রার্থিতা নিয়ে বড় ছেলে আলমগীর হোসেন জানান, তার মা দীর্ঘদিনের নির্বাচিত কাউন্সিলর। এবার তার স্ত্রী লিমা মানুষের সেবা করতে চান।
লিমা জানান, তিনি কাউন্সিলর না হয়েও এলাকার গরিব মানুষের সেবা করেছেন। আগামীতে আরও সেবা করতেই তিনি শাশুড়িসহ ছয়জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর শাশুড়ির কাছে গ্রহণ করা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ভোটারদের কাছে গিয়ে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। লিমা জয়লাভের ব্যাপারেও আশাবাদী।
আর তার শাশুড়ি বর্তমান কাউন্সিলর খোদেজা বেগম জানান, তিনি গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। ছেলে অভিমান করে বউমা লিমাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী করেছেন। ছেলের বউ প্রার্থী হলেও তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদী। তিনি মজা করে বলেন, ‘ভোটাররা চশমা পড়ে কেন্দ্রে এসে তার জবাফুল মার্কায় ভোট দেবেন।’
অপরদিকে ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের প্রত্যাশা, একই বাড়ি থেকে দু’জন কাউন্সিলর প্রার্থী হলেও ভোটের পাল্লা তার মায়ের পক্ষে ভারী হবে।
এদিকে, একই বাড়ি থেকে দুজন প্রার্থী হওয়ায় তা সংরক্ষিত আসনের অপর পাঁচ প্রার্থীকে মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা দিচ্ছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোটাররা। আবার এই প্রচারণা তাদের ভোট বাড়াতে সহায়তা করবে বলেও ধারণা এলাকার কিছু ভোটারের। তারা বলছেন ‘বউ-শাশুড়ির ফাইট, লড়াই হবে টাইট।’
এলাকার ভোটার রফিকুল ইসলাম, মোমেনা খাতুন, রেজাউল হাসান, মোর্শেদুল হক প্রমুখ জানান, তাদের ওয়ার্ডে সাতজন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে তারা যোগ্য বিবেচনা ও ভালো-মন্দ পরখ করেই প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন।
এসব ভোটারসহ অন্য এলাকাবাসী বলেছেন তারা অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদক ব্যবসা ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত কোনও বিতর্কিত নারীকে ভোট দেবেন না।
