X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেল থেকে বের হয়েই আবার শুরু চুরি-ডাকাতি!

নুরুজ্জামান লাবু
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:১৮আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২০:৪৬

ওরা চারজন। চারজনই চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও মাদক মামলায় একাধিকবার জেল খেটেছে। জেল থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও তারা ফিরে গিয়েছিল পুরানো পেশায়। চুরি-ডাকাতি করে বেড়াতো ওরা। সর্বশেষ তারা গত বছরের ১০ অক্টোবর মগবজার ওয়্যারলেস গেট এলাকার বিশাল সেন্টারের পেছনের একটি বাসা থেকে নগদ আড়াই লাখ টাকা ও ৮৮ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ৪৭ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।

এর প্রায় দুই মাসের মাথায় ডাকাত দলের একই সদস্যরা রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন হাজিপাড়ার একটি বাসা থেকে একটি লাইসেন্সকৃত পিস্তল, ৫৯ রাউন্ড গুলি, নগদ টাকা, বিদেশি মুদ্রা, ৫৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সংঘবদ্ধ এই ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিম। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোরশেদ ওরফে হাড্ডি মোরশেদ (৩৭), কবির হোসেন মনা (২৯), জাহিদ শেখ (২৮) ও আরমান হোসেন (২২)। এছাড়া ডাকাতির ঘটনায় সহযোগিতা করার অভিযোগে রাসেল নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা সবাই একাধিকবার জেল খেটেছে। জেল থেকে বের হয়ে তারা আবার ডাকাতি করছে। তিনি বলেন, জামিন পাওয়া প্রত্যেকের অধিকার। তবে বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ হলে তাদের আর পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ থাকে না।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘এই ডাকাত দলের সদস্যরা সবাই পেশাদার অপরাধী। এদের অপর সদস্যদের ধরতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।'

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাসে হঠাৎ করেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল। পরে গোয়েন্দা পুলিশের সকল ইউনিট একযোগে একাধিক অভিযান চালিয়ে চুরি-ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ও সংগঠিত অপরাধের আসামী হিসেবে ৫০ জনেরও বেশি চোর-ডাকাতকে গ্রেফতার করে। তবে বিশাল সেন্টারের হাতিরঝিল থানাধীন বিশাল সেন্টারের পেছনে ও হাজী পাড়ার দুটি বাসায় গ্রিল কেটে দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের সদস্যরা প্রায় কোটি টাকার মালামাল নিয়ে গেলেও তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় ডিবি পশ্চিমের তেজগাঁও জোনাল টিমের সদস্যরা সংগঠিত দুটি দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত ডাকাত চক্রকে শনাক্তের পর গ্রেফতার করে। তাদের কাছে লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ টাকা ও লাইসেন্সকৃত পিস্তল ও ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। এই চক্রটি পেশাদার ডাকাত দলের সদস্য। এরা ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার জেল খেটেছে। কিন্তু জেল থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে আবারও তারা ডাকাতি শুরু করে।

নেশা করেই লুণ্ঠিত টাকা উড়িয়েছে মোরশেদ

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাড্ডি মোরশেদ জানিয়েছে, তার নেতৃত্বেই হাজীপাড়া ও বিশাল সেন্টারের পেছনের বাসা দুটিতে ডাকাতি হয়েছিল। প্রতিটি ডাকাতির আগে তারা দিনের বেলা বাসাটি রেকি করে আসতো। রাত গভীর হলে মুখোশ পড়ে গ্রিল কাটার যন্ত্র দিয়ে পেছনের দিকে গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকতো। বাসায় ঢুকে পরিবারের সদস্যদের ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রথমে হাত-পা বেঁধে রাখতো তারা। পরবর্তীকালে আলমারী খুলে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বের হয়ে যেত।

মোরশেদ জানায়, তার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। ১২-১৩ বছর বয়সে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় ভাসমান হিসেবে থাকা অবস্থাতেই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে সে। নেশার টাকা যোগার করতে শুরু করে চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতি। সর্বশেষ ২০১৬  সালে সে একবার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যায়। বছর দুয়েক পরে বের হয়ে আসে জামিনে। এরপর আবার মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যায়। জামিনে ছাড়া পেয়ে নতুন করে ডাকাতি শুরু করে।

গ্রেফতার হওয়া মোরশেদ জানায়, সে ডাকাতি করে যে টাকা ভাগে পেত তার পুরোটাই নেশার পেছনে খরচ করতো। সর্বশেষ দুটি বাসায় ডাকাতি করে পাওয়া ভাগের টাকাও নেশার পেছনে খরচ করেছে। স্ত্রী ও সন্তান আফতাবনগর এলাকায় থাকলেও মাঝে মধ্যে সেখানে গিয়ে থাকে। বাকি সময় বিভিন্ন জায়গায় থাকতো।

লুণ্ঠিত অর্থ দিয়ে মাদক ব্যবসা শুরু করেছিল মনা

ডাকাতি করে ভাগে পাওয়া অর্থ দিয়ে রাজধানীর শান্তিবাগ, খিলগাঁও এবং শাজাহানপুরে ইয়াবার ব্যবসা শুরু করেছিল কবির হোসেন ওরফে মনা। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মনা জানায়, সেও অনেক আগে থেকেই নেশায় আসক্ত। গাড়িচালক পেশার আড়ালে সে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করে বেড়াত। শান্তিবাগ এলকাতেই স্ত্রী লাভলী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকে। মনা জানায়, ২০১৬ সালে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে জেলে যায় সে। প্রায় দুই বছর জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আসে। আগে থেকে মোরশেদের সঙ্গে পরিচয় ছিল তার। জেল থেকে বের হয়ে আবারও চুরি-ডাকাতি শুরু করে।

মনা আরও জানায়, হাতিরঝিল এলাকার দুই বাসায় ডাকাতি করে তারা বড় অংকের টাকা ভাগ পেয়েছিল। কিন্তু টাকা পাওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই ইয়ার আসর বসিয়ে অর্ধেক টাকা উড়িয়েছে। এরপর বাকি টাকা দিয়ে ইয়াবার ব্যবসা শুরু করে সে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, হাজী পাড়ার বাসা থেকে লুট করে নেওয়া অস্ত্র ও গুলিটি মনার কাছে ছিল। গ্রেফতারের মনার কাছ থেকে সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ৫৯ রাউন্ড গুলির মধ্যে ৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা গেলেও বাকি ৯ রাউন্ড উদ্ধার করা যায়নি।

চোরের ওপর বাটপারির শিকার ডাকাত জাহিদ

গ্রেফতার হওয়া ডাকাত চক্রের আরেক সদস্য জাহিদ জানিয়েছে, সে উত্তরা এলাকায় ভ্রাম্যমান হকার হিসেবে কাজ করতো। নেশা করতে গিয়েই মোরশেদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মোরশেদের কথাতেই পৃথক দুটি ডাকাতির ঘটনায় অংশ নিয়েছিল সে। ডাকাতির টাকা ভাগে পেয়ে প্রথম দফায় ঋণগুলো পরিশোধ করে। পরবর্তীকালে ভাগের তিন লাখ টাকা নিয়ে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় সে। এয়ারপোর্ট এলাকা থেকে একই মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাওয়ার পথে হাতিরঝিল এলাকায় গাঁজা কিনতে থামে। গাঁজা কিনে আবারো গাড়িতে ওঠার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে একদল লোক জাহিদকে তল্লাশি করে ডাকাতি করে ভাগে পাওয়া তিন লাখ টাকা নিয়ে যায়।

জাহিদ জানায়, বছর ছয়েক আগে সে নারায়ণগঞ্জের একটি চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিল সে। এছাড়া সম্প্রতি পল্টন থানার একটি চুরির মামলায় গ্রেফতার হয়ে সাত দিন জেল খেটেছে। জাহিদ আরও জানায়, তাদের ডাকাত দলের হোতা মোরশেদ। তার কথামতো মাঝে মধ্যেই তারা ডাকাতি-ছিনতাই করতে বের হতো।

ভাগের টাকা নিয়ে সেন্টমার্টিনে আরমান

গ্রেফতার হওয়া সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য আরমান জানায়, আগে রামপুরা এলাকায় থাকতো সে। ওই এলাকার বন্ধু রুবেল ও মোরশেদের মাধ্যমে সে এই ডাকাত দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। ২০১৫ সালে একটি অস্ত্র ও একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল খাটে সে। প্রায় আড়াই বছর জেল খেটে বের হয়ে জামিনে বের হয়ে এসে আবারও চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে।

আরমান জানায়, সর্বশেষ হাতিরঝিলের দুই বাসায় ডাকাতি করার ভাগে যে টাকা পেয়েছিল তা নিয়ে সেন্টমার্টিন ঘুরতে গিয়েছিল। ঢাকায় ফিরে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বাড্ডা থানা পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়। ওই মামলায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে বের হয়ে আসে আরমান। এরপর গত শুক্রবার আবার ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার হয় ডিবি পুলিশের হাতে।

ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারকারী গোয়েন্দা তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা বলেন, এরা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। এরা চুরি-ডাকাতির অভিযোগে একাধিকবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে আবার চুরি-ডাকাতি শুরু করে। এদের দলের আরও সদস্য রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

 

/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!