X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসের বাইরে নিরাপত্তাহীনতায় শাবি শিক্ষার্থীরা

নাজমুল হুদা, শাবি
০৬ মার্চ ২০২১, ২১:৪৫আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২১, ২২:১৫

তালা ভেঙে ছাত্রী মেসে বহিরাগত যুবকের অনুপ্রবেশ, গোসলের সময় ছাত্রীর ভিডিও ধারণ, ছাত্রী মেস থেকে ল্যাপটপ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি এবং আবাসিক এলাকায় থাকতে বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ ছাড়াও অটোরিকশায় ছিনতাইয়ের শিকারসহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক ও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে ঘটনাগুলোতে ভুক্তভোগীরা তৎক্ষণাৎ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা পুলিশকে জানালেও স্থায়ী সমাধানের কোনও প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ তারা দেখতে পাননি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীরা এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

এমনটা কেন হচ্ছে, যারা এগুলোর সঙ্গে জড়িত তারা কি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, প্রশাসনের কি কিছুই করার নেই, এমন নানা প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন শিক্ষার্থীরা। এমনকি অধিকাংশ সময় প্রশাসন বিষয়গুলো নিয়ে দায়সারা মনোভাব দেখায় বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবারই বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে কেউ না কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদারকিতে ঘটনাস্থলে পুলিশও আসে। কিন্তু এরপর আর কোনও খোঁজ খবর থাকে না। অধিকাংশ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কেউই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও মামলা দায়ের অথবা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চান না। থাকে না প্রশাসনের কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ, এতে বিষয়গুলো আরও হাজারও ঘটনার নিচে চাপা পড়ে যায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় আবাসিক হল খোলা ছাড়াই ১৭ জানুয়ারির মধ্যে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল এ সময়ের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়া হোক। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি অগ্রাহ্য করে পরীক্ষা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে নিরুপায় হয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আর্থিক অসংগতির মধ্যেও সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মেস-বাসা ভাড়া নেয়। তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন ছাত্রীরা। নিজেদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ১ মার্চ থেকে শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে আবারও শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে সিলেট আসতে শুরু করেন। সিলেটে এসে আবাসন ব্যবস্থা না করতে পেরে হল খুলে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে ও উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশের এক কিলো সংলগ্ন রাস্তায় অবস্থান নেন তারা। এমনকি উপাচার্য বাসভবন সংলগ্ন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

পরে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত আসায় আগামী ২৪ মে পর্যন্ত সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ অবস্থায় পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষার রুটিন হয়ে যাওয়ায় অগ্রিম কয়েক মাসের জন্য ভাড়া পরিশোধ করে মেস ভাড়া নিয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে পরীক্ষা দিতে এসে আবাসিক হলে উঠতে না পেরে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় মেস বা বাসা ভাড়া করে থাকা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের চুরি, ছিনতাই, শ্লীলতাহানিসহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক ও অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাদের অভিভাবক হিসেবে দাবি করেন। কিন্তু শিক্ষকদের মধ্যে সে ধরনের অভিভাবকসুলভ আচরণ নেই। পরীক্ষার শুরুর কথা বলে আমাদেরকে সিলেটে নিয়ে আসলেও হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা শুরু করেন। গত কয়েক মাস থেকে যে ধরনের ঘটনা আমাদের সঙ্গে ঘটছে তা নিয়ে কারোরই মাথা ব্যথা নেই। বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা না ঘটলে আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের টনক নড়বে না।

সর্বশেষ শুক্রবার (৫ মার্চ) রাতে সিলেট নগরীর এক আবাসিক এলাকায় মেয়ে শিক্ষার্থীদের এক মেসে বহিরাগত যুবক ভেন্টিলেটর দিয়ে এক শিক্ষার্থীর গোসলের ভিডিও ধারণ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে ওই শিক্ষার্থীর চিৎকার বহিরাগত যুবক পালিয়ে যায়। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ধারণকৃত ভিডিও ফাঁস ও ব্ল্যাকমেইলের আশঙ্কায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সিলেটের সুবিদবাজারস্থ নুরানী পুকুরপাড় এলাকার ত্রয়ী কুটিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীদের মেসে চুরির ঘটনা ঘটে। এসময় একটি ল্যাপটপ, নগদ অর্থ ও সোনার অলঙ্কারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরির শিক্ষার্থীদের।

এছাড়া গত ২১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন ইনায়া ম্যানশনের চতুর্থ তলায় ছাত্রীদের মেসের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের দায়ে বহিরাগত এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। এছাড়া সুরমা আবাসিক এলাকা ও আখালিয়া আবাসিক এলাকায় মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলা, মেসে বিভিন্নভাবে উৎপাত সৃষ্টিসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।

এসব ঘটনা ছাড়াও প্রায়ই সিলেট নগরীর বিভিন্ন জায়গা, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, সুরমা আবাসিক এলাকা, আখালিয়া, টিলারগাঁসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের ভোগান্তি, চুরি, ছিনতাই ও এলাকার বখাটে ছেলেদের মাধ্যমে উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন।

এমন বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানামুখী সমালোচনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা নিয়ে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সর্বদা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে ক্যাম্পাসের বাইরে সাধারণ মানুষের চলাচল। এখানে একজন শিক্ষার্থী আর একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন। নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আমাদের পুলিশের একটা দল আছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে। এছাড়া পুলিশের টহলতো থাকেই। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় আমাদের কাছে খবর আসে। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আবু হেনা পহিল বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা নেই। ২৫ শতাংশের মতো শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে বাইরে বিভিন্ন হোস্টেল ও মেস নিয়ে থাকতে হয়। এতে করে সাধারণ জনগণের মধ্যেই মিলে-মিশে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। ছোট-বড় অনেক সমস্যার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে তাদের। আমরা নিয়মিত সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিতে আবাসিক হল বাড়ানোর কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি আবাসিক হল নির্মাণ হবে। ইতোমধ্যে দুটি হল নির্মাণের কাজ চলছে, আগামীতে আরও হবে। এতে করে ক্যাম্পাসের ভেতরেই শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। আর তা হলে নিরাপত্তা রিলেটেড সমস্যা কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষার্থী বাড়িতে না গিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে সিলেট আছেন। তারা কে কোথায় থাকছে, আসলে সবার বিষয়ে তো আর জানা নেই। তারপরও বলবো, যেহেতু ক্যাম্পাস ২৪ মে’র আগে খুলছে না সেহেতু শুধু শুধু বাইরে থাকার যৌক্তিকতা নেই। সর্বোপরি যারা সিলেটে আছে তাদেরকে সাবধানে থেকে চলাচলের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন প্রক্টর।

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
ওলামা দলের আংশিক কমিটি দিয়েছে বিএনপি
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী