X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা সংকটের পুনরাবৃত্তি!

সাদ্দিফ অভি
১৪ মার্চ ২০২১, ১১:০০আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২১, ১১:০০

দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। চতুর্থ দিনের মতো (শনিবার, ১৩ মার্চ) হাজারের ঘরে শনাক্ত হয়েছে। এর আগে দুইমাস শনাক্ত ছিল হাজারের নিচে। সম্প্রতি সেই চিত্র পাল্টে গেছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগী, তাই স্বাস্থ্য অধিদফতর আগের মতো সেবা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা ইতোমধ্যে সব হাসপাতালে পাঠিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, মানুষের বেপরোয়া আচরণ সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের উপরে শুধু দায় দিয়ে অন্য কারণগুলো উপেক্ষা করলে চলবে না। কেন সংক্রমণ বাড়ছে তা গবেষণার বিষয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাস পর ১০ মার্চ থেকে টানা চারদিন শনাক্ত রয়েছে হাজারের ঘরে। এর আগে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই করোনা শনাক্ত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে দৈনিক শনাক্তের হার ২ দশমিক ২৬ থেকে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকলেও চলতি মাসে তা বেড়ে ৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

সাপ্তাহিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৯ম সপ্তাহ ( ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ) থেকে ১০ম সপ্তাহে (৭ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ) শনাক্ত বেড়েছে ৬৭ দশমিক ২৭ শতাংশ আর মৃত্যু বেড়েছে ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ। গত বছরের মে থেকে দৈনিক শনাক্ত হাজারের ঘরে প্রবেশ করে। এরপর থেকে করোনা শনাক্ত দেশে বাড়তেই থাকে। সেটি বাড়তে বাড়তে জুলাইতে চার হাজারের ঘরে ঠেকে। এরপর আবারও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে করোনা শনাক্ত। তবে আবার হাজারের নিচে নামতে সময় লাগে পাঁচ মাস। এই বছরের প্রথম দিন শনাক্ত হয় ৯৯০ জন, তার আগের দিন শনাক্ত ছিল এক হাজার ১৪ জন।

হাসপাতালের তথ্য বলছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুধু ঢাকা মহানগরীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে বেড খালি ছিল দুই হাজার ২৩১টি আর আইসিইউ বেড খালি ছিল ১৯৪টি। তবে শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের বেড খালি আছে এক হাজার ৭৩৯টি এবং আইসিইউ বেড খালি আছে ১১৯টি। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালের ১১৭টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র ৩৮টি বেড খালি আছে। আর দুই হাজার ৩৮১ বেডের মধ্যে খালি আছে এক হাজার ১৭৭টি।

রোগী বাড়ার পরিস্থিতি যে বাড়ছে তাতে জনসাধারণকে সতর্ক করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজির অধ্যাপক শাহজাদ হোসাইন মাসুম। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন, ‌‘মাস দুই-এক একটু শ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। কখনও একটা বেডও খালি রাখতে না পারলেও রোগীদের ওয়ার্ডে শিফট করা যাচ্ছিলো। মৃত্যুহার অনেক কম ছিল। এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আক্ষরিকভাবে রোগীদের বাঁচিয়ে রাখতে আমরা এখন যুদ্ধ করছি এবং হেরে যাচ্ছি বারবার। এই পরিবর্তন আমরা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে দেখছি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, রোগী যখন বাড়ছিল, তখন অধিদফতরের মহাপরিচালক সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালকে আগের মতো সেবা দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, মানুষজন সামাজিক দূরত্ব মানছেন না এবং মাস্ক পরছে না। সে কারণেই এখন সংক্রমণের হার বেশি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাবেশ সীমিত করতে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ডিসিদের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) চিঠি দেওয়া হয়েছে। শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংক্রমণের হার রোধে সবার মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

এ অবস্থায় সবার মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে নজীর আহমেদ বলেন, করোনা আমদের একবার কমে গেল। সেখান থেকে আবার একবার যে বৃদ্ধি পেলো, এটি একটি উদ্বেগের বিষয়। এই অবস্থা যে কতদূর যাবে, তাই বোঝা দরকার। জানা উচিত কেন এরকম হচ্ছে। সেটা সরকারেরই উচিত ভালো করে বিশ্লেষণের ব্যবস্থা করা। এটি করার জন্য গবেষণা দরকার, সার্ভে দরকার, জিনোম সিকয়েন্সিং করা দরকার। তবে মুশকিল হচ্ছে সরকারের এমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায় না। বরং তারা শুধু মানুষ নিয়ম কানুন মানছে না, এই কারণেই সংক্রমণ বাড়ছে বলে দায় সারছে।

তিনি আরও বলেন, জানুয়ারিতে করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হলো, কিন্তু সেটা প্রকাশ করা হলো মার্চে। তখন সবাইকে জানিয়ে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা যেতো। কিংবা নির্বাচন কমিশন যে পৌরসভা নির্বাচন করেছে, এটার কারণে মানুষের মনে ভুল একটা মেসেজ গেছে, যে নির্বাচন যদি করা যায়, তাহলে হয়তো সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা ও ভ্রমণে যাওয়া যাবে। এগুলোকে বলা হয় ফলস সেন্স অব সিকিউরিটি। এই জায়গাগুলোতে যথাযথ ভূমিকা যদি না থাকে, তাহলে আমাদের এই সমস্যা মিটবে না।

তিনি বলেন, ইউকে থেকে আসা যাত্রীদের ঠিকমতো কোয়ারেন্টিন দরকার ছিল। সব দেশ যেখানে ফ্লাইট বন্ধ করে দিলো, সেখানে আমাদের মানুষ আসছে। তাদের ঠিকমতো কোয়ারেন্টিন হচ্ছে না, তারা বের হচ্ছে, অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। এই কারণে প্রভাব ভালো হওয়ার কথা না, আর তাই এখন হচ্ছে বলে ধারণা আমাদের।

গ্রীষ্মকালে এ অবস্থা থাকলে ও সরকার সিরিয়াসলি বিষয়টা দেখভাল না করলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন:
নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনা ছড়িয়েছে ৭০টি দেশে: ডব্লিউএইচও
‘দেশে পুনরায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে’
করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই ৭ পরামর্শ মানার অনুরোধ
ঢাকার আইসিইউতে করোনা রোগী বাড়ছে
করোনাভাইরাস: আমাদের জানা-অজানা এবং করণীয়
করোনাভাইরাস: করণীয় ও বর্জনীয়
সুস্থ হলেও শরীরে থাকতে পারে করোনা!
ব্রিটেনে নতুন প্রজাতির করোনা, ফ্লাইট বন্ধের পরামর্শ
টিকা নেওয়ার পর করোনা থেকে সুরক্ষায় কত দিন লাগে?
লন্ডন থেকে সিলেটে আসা ২৮ যাত্রীর করোনা পজিটিভ
করোনা আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে!
‘সব দিন এক করে দিয়েছে করোনা’

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু
টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু
যে সাফল্যে নতুন ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের মাসফিয়া আফরিন 
যে সাফল্যে নতুন ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের মাসফিয়া আফরিন 
সারা দেশে আবারও ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
সারা দেশে আবারও ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
গরমে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করছে ‘স্বপ্ন’
গরমে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ করছে ‘স্বপ্ন’
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু