X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাঁদে রাখা হবে ব্যাকআপ, কিন্তু কীসের?

ফয়সল আবদুল্লাহ
১৯ মার্চ ২০২১, ০৯:০৯আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২১, ০৯:০৯
image

ডিজিটাল ফাইলপত্র হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে আমরা ব্যাকআপ রাখি। কিন্তু গোটা দুনিয়াটাই যদি ওলটপালট হয়ে যায়? আচমকা যদি বিরাট কোনও গ্রহাণু ছুটে আসে আমাদের দিকে? কিংবা সব পরমাণু বোমা যদি একে একে ফাটতে শুরু করে? পৃথিবীর ৬৭ লাখ প্রজাতির কী হবে তখন? বিজ্ঞানীদের ঘুমটা কত কারণেই না হারাম হয়। আর শান্তির ঘুম আনতে তারা ভাবলেন, এই পৃথিবীর প্রাণীকূলের একখানা ব্যাকআপ না রাখলেই নয়। কিন্তু পৃথিবীই যদি ধ্বংসের মুখে পড়ে তবে ব্যাকআপটা রাখবো কোথায়? হাতের কাছেই পাওয়া গেল চাঁদটাকে।

গত সপ্তাহে বিশ্বের মহাকাশবিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ও শিল্পপতিতের নিয়ে হয়ে গেল আইইই অ্যারোস্পেস কনফারেন্স। সেখানেই আজব এক প্রস্তাব করেছেন তারা। সারা দুনিয়ার তালিকাভুক্ত ৬৭ লাখ প্রজাতির (গাছ ও প্রাণী) ডিএনএ নমুনা ও বীজ সংরক্ষণ করা হবে চাঁদের বুকে। হাজার কিংবা লক্ষ বছরেও যে সংরক্ষণাগার থাকবে অক্ষত। যাতে পরে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও অন্য কোনও বুদ্ধিমান প্রাণী এসে সেখান থেকে ফের ক্লোনিং করে ফিরে আনতে পারে আজকের পৃথিবীর জীবপ্রজাতিকে।

এ কাজে চাঁদের ভেতর বানানো হবে অতিকায় এক ভল্ট। সেটা আগাগোড়া মোড়া থাকবে লাভার চাদরে। লাভা টিউব নাম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদে এমন অনেকগুলোই আছে। লাভার স্তরটা খুঁড়ে নামলেই দেখা মিলবে শূন্য টিউবাকৃতির গুহাগুলোর। এমন শ’দুয়েক টিউবের সন্ধান ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে।  

গুহাগুলো চাঁদে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছিল প্রায় ৩০০ বছর আগে। সেখানে নির্মাণ করা হবে লুনার আর্ক ওরফে জিন ব্যাংক। সৌরশক্তিতেই চলবে ওই সংরক্ষাণাগারের যন্ত্রপাতি। আর এটা বানাতে ও নমুনার ব্যাকআপ নিয়ে বড় সাইজের রকেটে করে চাঁদে যাওয়া-আসা করতে হবে ২৫০ বার।

এটা মোটেও ঠুনকো কোনও চিন্তা নয়। এ নিয়ে প্রকাশ হয়েছে গবেষণাপত্রও। স্পেস অ্যান্ড টেরেস্ট্রিয়াল রোবটিক এক্সপ্লোরেশন-এর প্রধান বিজ্ঞানী জেকান থাংগা বলেছেন, ‘আমাদের সঙ্গে প্রকৃতির একটা বড় মেলবন্ধন আছে। এই জীববৈচিত্র্যের অভিভাবক আমরা। সেই হিসেবে একটা দায়িত্বও আছে। আগামী ৩০ বছরের মধ্যেই আমরা চাইলে এমন একটা সংরক্ষণাগার বানাতে পারি।’

কী আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা?

দুনিয়া ধ্বংসের সমস্ত উপকরণ কিন্তু আমরাই বানিয়ে রেখেছি। নিউক্লিয়ার যুদ্ধ লাগলে তো কথাই নেই, আছে সুপারভলকানো, মহামারি, জলবায়ু বিপর্যয়, সৌর ঝড়, খরা ইত্যাদি।

‘জলবায়ু ও মানব সভ্যতা, দুটো বড় ঠুনকো।’ বললেন থাংগা। আর তাই নাসার সামনের চন্দ্রমিশনেই এ কাজের প্রাথমিক কাজটুকু সেরে ফেলার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

ভল্টের নাড়িনক্ষত্র

চাঁদের যে অংশে এ ভল্ট বানানোর চিন্তা করা হচ্ছে, সেখানকার তাপমাত্র হিমাঙ্কের নিচে ২৯২ ডিগ্রি ডিগ্রি ফারেনহাট। মানুষ তো দূরে থাক, এ ঠাণ্ডায় রোবটও কাজ করতে হিমশিম খাবে। এ জন্য তাদের ভেতর জুড়ে দেওয়া হবে কোয়ান্টাম লেভিটেশন প্রযুক্তি। সুপারচার্জড চৌম্বক বলয় তৈরি করার মাধ্যমে রোবটগুলোকে নড়াচড়া করা হবে শূন্যে ভাসতে থাকা অবস্থায়। এই প্রযুক্তি এখনও খাতা-কলমে হলেও বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, এটাও দ্রুত হয়ে যাবে।

লাভা টিউবের ভেতরে থাকবে ডোমাকৃতির একটি প্রিজারভেশন অ্যানালাইসিস ল্যাবরেটরি, শীতলীকরণ কক্ষ (কাইরো প্রিজারভেশন মডিউল), এলিভেটর শ্যাফট ও নমুনা আনা-নেওয়ার চেম্বার।

থাংগার মতে, এ চেম্বার তৈরি ও নমুনা আনা-নেওয়ার কাজে শত শত বিলিয়ন ডলার খরচ হলেও জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে এটা ঠিক প্রশ্নাতীত কিছু নয়। থাংগা অবশ্য ভুল বলেননি, এই নীল-সবুজ গ্রহটাই যদি না থাকলো তবে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন কাগুজে নোটগুলোরই বা দাম কীসের।

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
ভারতের নিখিলের হ্যাটট্রিকে ঊষার বড় জয়
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
বাংলাদেশে আইসিটির ভবিষ্যৎ কেন হুমকির মুখে?  
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’