কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিএনপি’র সদ্য প্রয়াত নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। আজ শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় শহীদ মিনারে আনা হয় তাকে। বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১০টার দিকে তার মরদেহ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে নেওয়া হয়।
সেখানে বিএনপির পক্ষে শ্রদ্ধা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান, শহীদুল্লাহ চৌধুরী এ্যানী, মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উল্লাহ, খায়রুল কবির খোকন, মওদুদ আহমেদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অব), অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠতা পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
এছাড়াও সম্মিলিত পেশাজীবী, জাসাস, গণফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল, জেএসডি, জিয়া নাগরিক ফোরাম, স্বাধীনতা ফোরাম, বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন, স্টুডেন্টস অফ নোয়াখালী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ ছিলেন একজন ব্যাতিক্রমী ব্যক্তি। রাজনীতিতে তিনি পরিচ্ছন্ন মুখ ছিলেন এবং সেটা বোঝা যেত। তার মতো রাজনীতিবীদ দেশের জন্য প্রয়োজন ছিল। '
আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি সম্পন্ন একজন রাজনীতিবীদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তিনি বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্রকে উদ্ধারের সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। দেশমাতৃকার জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য, সার্বভৌমত্বের জন্যে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার এ চলে যাওয়াতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।'
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ৯টা ৫০মিনিটের দিকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের উদ্দেশে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পল্টন দলীয় কার্যালয়ে।
গত ১৬ মার্চ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন দেশের খ্যাতনামা আইনজীবী ও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকাল ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে তার মরদেহ। দলের সিনিয়র নেতারা তার মরদেহ গ্রহণ করেন এবং ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
বিএনপির দফতর বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার সকাল ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মওদুদ আহমদের জানাজা ও দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর হেলিকপ্টারে নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে তার মরদেহ। দুপুর আড়াইটায় নোয়াখালীর কবিরহাট ডিগ্রি কলেজ মাঠে, বিকাল ৪টায় বসুরহাট কোম্পানীগঞ্জ সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয় মাঠে ও বিকাল সাড়ে ৫টায় মরহুমের নিজ বাসভবনের (মানিকপুর, কোম্পানীগঞ্জ) সামনে মরহুমের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে, বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
১৯৪০ সালের ২৪ মে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন মওদুদ আহমদ। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান পাস করে লন্ডনে লিংকন’স ইন থেকে ‘বার-অ্যাট-ল' ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশোনা করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ব্লান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন মওদুদ আহমদ।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭-৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন মওদুদ আহমদ। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, উপ-রাষ্ট্রপতি, আইনমন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন ও আবিদ হাসান।