X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মামলা চলাকালেই বিরোধপূর্ণ জমিতে বানানো হলো গৃহহীনদের বাড়ি!

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
২৪ মার্চ ২০২১, ২০:৩৮আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২১, ২০:৪৮

১৯৪০ সালের সিএস খতিয়ান সূত্রে প্রায় পৌনে দুই একর কৃষি জমি ভোগ দখল করে আসছেন জমির তিন ওয়ারিশ। অক্ষর জ্ঞানহীন কৃষক হওয়ায় জমির কাগজপত্র হালনাগাদ করার বিষয়ে অনেকটাই উদাসীন ছিলেন তারা। হঠাৎ করে ২০১৫ সালে জানতে পারেন তাদের জমিটি সরকারি খাস জমির অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। দিগ্বিদিক খুঁজে না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তিন ভাই। ২০১৫ সালে করা সেই দেওয়ানি মামলায় সরকার বিবাদী পক্ষ। দীর্ঘ শুনানি শেষে এখন রায় হওয়ার অপেক্ষা। কিন্তু দেওয়ানি আদালত কর্তৃক সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা নির্ধারণ হওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে সেই জমি দখলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। দরিদ্র কৃষকদের শেষ সম্বলটুকু দখলে নিয়ে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ১৬ টি ঘর, বন্দবস্তও দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। জমির অবশিষ্ট অংশে ভোগদখলীয় মালিকরা চাষাবাদ করায় খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ‘নির্দেশে’ রোপন করা ধানের চারা তুলে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অসহায় কৃষকদের প্রশ্ন, সরকারই যদি দখলদার হয়, আদালতের বিচারের নিয়মও যদি তারা না মানেন তাহলে আমরা যাবো কোথায়?

যে জমিতে ঘর তোলা হয়েছে সে জমি খাস হিসেবে সরকারের দাবি করা হলেও জমির ভোগ দখলদারদের দাবি উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিকানা তাদের।

‘নিপীড়নমূলক’ এ ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের পান্থাপাড়া গ্রামে। ভুক্তভোগী তিন কৃষক হলেন শামসুল আলম, সোলায়মান আলী ও রফিকুল ইসলাম। এরা আপন তিন ভাই। তারা তাদের পিতা আমির উদ্দিন এবং দাদা খইমুদ্দিনের ওয়ারিশ হিসেবে বিবাদমান জমি ভোগদখল করে আসছেন।

দেওয়ানি আদালতে চলমান মামলা ও ভুক্তভোগী কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪০ সালের সিএস খতিয়ান তাদের পূর্বপুরুষ (দাদা) খইমুদ্দিনের নামে অন্তর্ভুক্ত। তখন থেকে তারা ধারাবাহিকভাবে বংশানুক্রমে ওই জমি ভোগদখল করে আসছে। কিন্তু ২০১৫ সালে তারা জানতে পারেন সরকার জমিটি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাদীপক্ষ বিষয়টি জানা মাত্র আদালতের স্মরণাপন্ন হন। এর ফলশ্রুতিতে ওই তিন কৃষক বাদী হয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে কুড়িগ্রাম দেওয়ানি আদালতে মামলা করেন যার নম্বর ৪৭/২০১৫। ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জবাবও দিয়েছেন (তারিখ: ৩১/৭/২০১৬)। বর্তমানে মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু দেওয়ানি আদালত কর্তৃক সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানা নির্ধারণ হওয়ার আগেই উপজেলা প্রশাসন ওই জমি থেকে বাদীদের দখল উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জমিতে ধান রোপণ করেছিলেন জমির মালিক দাবিদাররা। প্রশাসনের নির্দেশে সে ধানের চারা তুলে ফেলা হয়।

ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, প্রতিবছরের মতো চলতি মৌসুমে তারা ওই জমিতে ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। কিন্তু ইউএনওর নির্দেশে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) পাওয়ার টিলার লাগিয়ে চারা রোপণ করা অবস্থায় জমিটি চাষ করে দেন। পরবর্তীতে তারা আইনজীবীর স্মরণাপন্ন হয়ে ইউএনওকে একটি উকিল নোটিশ (নোটিশ ডিমানডিং জাস্টিস) পাঠিয়ে আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জমিটি দখলের পদক্ষেপ বন্ধ করার অনুরোধ জানান। এরমধ্যে তারা আবারও জমিতে ধানের চারা রোপণ করেন। কিন্তু নোটিশ পাঠানোর ১৫ দিনের মাথায় ইউএনও আবারও লোকজন লাগিয়ে জমিতে লাগানো ধানের চারা উপড়ে ফেলেন।

‘ওই একটি জমিই আমাদের সম্বল। ওই জমির ফসল দিয়ে আমাদের রুজি চলে। ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ওই জমিটুকু যদি হারাতে হয় তাহলে আমরা কী খেয়ে বাঁচবো? বিচার পাওয়ার আগেই যদি আমাদেরকে বেদখল করে, তাহলে আদালতে মামলা করে কী হলো?’ প্রশ্ন রাখেন ভুক্তভোগী তিন কৃষক।

তবে সরকার পক্ষের দাবি, রেকর্ড মূলে ওই জমির মালিক সরকার। আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকলেও আদালত কর্তৃক কোনও নির্দেশনা না থাকায় উপজেলা প্রশাসন থেকে জমিটি দখলে নেওয়া হয়েছে। 

জমি নিয়ে মামলা চলমান ও জমি হতে কৃষকদের রোপণ করা ধানের চারা তুরে ফেলার বিষয়টি স্বীকার করলেও জমিটি সরকারের দখলে বলে দাবি করেছেন রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরে তাসনিম। তিনি বলেন,‘জমিটি ওই কৃষকরা চাষাবাদ করলেও তারা কখনও জমির খাজনা দিয়েছেন বলে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। আর ওই জমিটি এসএ এবং আরএস খতিয়ানেও খাস। হাল রেকর্ড সরকারের নামে রয়েছে। সেখানে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করে বন্দবস্ত দেওয়া হয়েছে। তারা তখনও আদালতের কোনও নির্দেশনা দেখাতে পারেননি। এখন সেখানে গৃহহীনদের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের ঘর নির্মাণ করা হবে। তারাতো সেখানে চাষাবাদ করতে পারেন না।’

তুলে ফেলা ধানের চারা

মামলা নিষ্পত্তির আগে জমির দখল নেওয়া আইনগতভাবে বৈধ কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন,‘ জমিটি তাদের দখলে ছিল বিষয়টি এমন নয়। জমিটি সরকারের দখলে ছিল। তারা (কৃষকরা) সেখানে চাষাবাদ করেছিল। এখন সেখানে গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হবে, তারা তো সেখানে আর চাষাবাদ করতে পারেন না।’

তবে ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, ১৯৪০ সাল থেকে তাদের পূর্ব পুরুষদের ধারাবাহিকতায় ওয়ারিশ হিসেবে তারা জমিটি বর্তমান সময় পর্যন্ত ভোগদখল করে আসছেন।

ওই কৃষকদের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু জানান, ‘শুধুমাত্র এসএ রেকর্ড ও আরএস রেকর্ড না হওয়ার কারণে জমির স্বত্ব চলে যায় না। এসএ রেকর্ড ও আরএস রেকর্ডের মূল ভিত্তি হলো সিএস রেকর্ড যা ছাড়া জমির স্বত্ব সৃষ্টি হয় না। সে হিসেবে সিএস রেকর্ড প্রজার নামে থাকায় ওই জমিতে ওয়ারিশদের উত্তম স্বত্ব রয়েছে।’

এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘যেহেতু চলমান মামলায় সরকার পক্ষে জবাব প্রদান করা হয়েছে এবং মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমান সে কারণে বিচারধীন মামলার জমি হতে আইনে নির্ধারিত পদ্ধতি ছাড়া কাউকে তার ভোগ দখল হতে উচ্ছেদ করা বেআইনি।’

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!