ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন থানায় মোট ৪৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারনামীয় ২৮৮ জন ও অজ্ঞাতনামাসহ ৩৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার হন ১৬ জন। এ নিয়ে এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ৪৯টির মধ্যে সদর মডেল থানায় ৪৩টি, আশুগঞ্জ থানায় ৩টি, সরাইল থানায় ২টি এবং আখাউড়া রেলওয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে সদর মডেল থানায় ৩টি মামলা দায়ের করা হয়।
গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালের দিন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুরকারী আরমান আলিফ (২২)। আলিফকে গ্রেফতারের পর তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাজীপাড়ার ভাড়াটিয়া বাসায় তল্লাশি চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙার কাজে ব্যবহৃত একটি শাবল, একটি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন এবং ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। তিনি জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ফুলকারকান্দি গ্রামের শুক্কুর মিয়ার ছেলে।
একাধিক মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা কওমি মাদ্রাসাছাত্র-শিক্ষক ও তাদের অনুসারী দুষ্কৃতিকারীদের’ কথা উল্লেখ করা হয়। তবে কোনও মামলাতেই হেফাজতের কোনও নেতাকর্মীর নাম নেই বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । তবে এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাণ্ডবের সময় ভিডিও ফুটেজ ও স্থির ছবি দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেককেই শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে শুক্রবার দুপুরে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলামের সহিংস ঘটনায় বিভিন্ন স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ দেখে বিশ্লেষণপূর্বক আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থির চিত্র ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য জেলা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর তিনটি ম্যুরাল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে থাকার দু’দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার প্যান্ডেল, একই চত্বরে থাকা শহর সমাজসেবা প্রকল্পের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের অফিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা কার্যালয়, পৌর মেয়রের বাসভবন, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ব্যক্তিগত অফিস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মৎস্য অফিস, সার্কিট হাউজ, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব, খাঁটি হাতা হাইওয়ে থানা ভবন, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন, মাতৃ সদন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের বাসভবন, তার শ্বশুরের বাড়ি, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কালীবাড়ি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির বাসভবন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাসভবন, আশুগঞ্জ টোলপ্লাজা, আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাছেরের বাসভবন, বিজয়সনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসভবন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়সহ প্রায় অর্ধশতাধিক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
আরও পড়ুন...