X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শতবর্ষী গার্লস স্কুলভবনের সিঁড়ি ভেঙে ইচ্ছেমতো জায়গা বিক্রি!

পাবনা প্রতিনিধি
২৪ এপ্রিল ২০২১, ২১:৩৭আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ২১:৪৫

পাবনার প্রায় শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের তিনতলা ভবনের সিঁড়ি ভেঙে জায়গা বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির  পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু ইছাহাক শামীমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, সভাপতি হওয়ার পর থেকেই স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের সম্পদ লুটপাট করছেন তিনি। এমনকি মেয়েদের স্কুলটির ভবনটির নিচে মার্কেট বানিয়ে দোকান বিক্রির পর তার বেশিরভাগ টাকাও ফান্ডে জমা দেননি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটি সদস্যদের অভিযোগ, অনৈতিক উদ্দেশ্যে সভাপতির একের পর এক স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত ও অনিয়ম দুর্নীতিতে শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা বিব্রত। কিন্তু, শাসক দলের জেলা কমিটির পদে থাকায় ক্ষমতার দম্ভের কারণে তাকে কেউ বাধা দিতে পারছেন না।

এলাকাবাসী জানান, পাবনায় নারী শিক্ষার প্রায় শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান পাবনা সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুল। মধ্য শহরে অবস্থিত সুবিশাল বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমান বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে আবু ইছাহাক শামীম দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তবে সরকারি অর্থ কিংবা ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ প্রাপ্তির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে পথে চেষ্টা করেননি তিনি। অনৈতিক উদ্দেশ্যে স্কুল ভবন নির্মাণের দায়িত্ব একটি বাণিজ্যিক ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে দেন। এরপর কোম্পানিটির সঙ্গে যোগসাজস করে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে নিচতলায় কোনও ক্লাসরুম না রেখে দোকান নির্মাণ করে তা বিক্রি করে দেন।

তৎকালীন সময়ের শিক্ষকরা জানান, মধ্য শহরে দোকানগুলো লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করে বিদ্যালয় তহবিলে নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে জমা দেন সভাপতি। কোনও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নামমাত্র মূল্যে পুরাতন বিল্ডিং বিক্রিও করেন ঘনিষ্ঠজনের কাছে। সে সময় তার এই ব্যাপক লুটপাটের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও আবু ইছাহাক শামীমের রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে কেউই প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। প্রশাসনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই দুর্নীতি দিনে দিনে চাপা পড়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু ইছাহাক শামীম প্রায়শই অস্বাভাবিক অবস্থায় বিদ্যালয়ে এসে বিনা কারণে শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে কারও মতামতের তোয়াক্কা না করেই যা খুশি তাই করে বিদ্যালয়টিতে তিনি রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন। বিদ্যালয়ের নীচতলায় দোকান বিক্রি করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, বিদ্যালয়ে জরুরি বহির্গমন পথটিও সম্প্রতি বিক্রি করে দোকান নির্মাণ করেছেন। আগের বিক্রি করা দোকানগুলোর মালিকদের কাছ থেকে উৎকোচ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে সেগুলো সম্প্রসারণেরও অনুমতিও দিয়েছেন। এসব কাজ তিনি করেছেন একক সিদ্ধান্তে। সম্প্রতি করোনাকালে বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকার সুযোগে মূল ফটকের পাশে প্রধান সিঁড়িসহ সুবিশাল জায়গাটিও বিক্রির জন্য খাবার বাড়ি নামে এক রেষ্টুরেন্টের সঙ্গে চুক্তি করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক ও রাজমিস্ত্রি মূল ফটকের ডান পাশে নতুন সিঁড়ি নির্মাণের কাজ করছেন। ডান পাশে একটি সম্পূর্ণ অক্ষত ও সুপ্রশস্ত সিঁড়ি থাকা সত্তেওও কেন নতুন সিঁড়ি তৈরি হচ্ছে জানেন না নির্মাণ শ্রমিকরাও।

বিনা প্রয়োজনে কেন নতুন সিঁড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তালেবুর রহমান বলেন, এটি বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ বলতে পারবেন, আপনারা তাদের সাথেই কথা বলুন।

বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবু ইছাহাক শামীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলের জায়গা নতুন করে বিক্রি করা হচ্ছে না। আধুনিকায়ন করতে সবার সম্মতিতেই ডেভলপারকে দেওয়া হয়েছিল। বিদ্যালয়ের প্রয়োজনেই পুরাতন সিঁড়িটি ভাঙা হচ্ছে। এখানে কোনও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবক এবং স্থানীয়রা দাবি করেছেন, মেয়েদের বিদ্যালয় এমনিতেই সংরক্ষিত জায়গা হিসেবে সারাদেশে স্বীকৃত। সেখানে সরকারি দলের পদ-পদবি ব্যবহার করে এক নেতা স্কুলের ভেতর দোকানের পর দোকান কিভাবে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন তা অবশ্যই তদন্ত করা দরকার। করোনার পর স্কুল চালু হলে এখানে শিশুরা যে নিরাপদে ক্লাস করতে আসতে পারবে তার গ্যারান্টি কোথায়? 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুড়িগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালককে শোকজ
কুড়িগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালককে শোকজ
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা