X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

‘রাবির ১৪১ জনের নিয়োগ বাতিলের সুযোগ নেই’

এস এম আব্বাস
০৭ মে ২০২১, ১৮:২৫আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ২০:৫০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহানের দেওয়া ১৪১ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর এডহক নিয়োগ বাতিল না হলেও তারা স্থায়ী হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রায় সাড়ে তিনশ’ জনবল নিয়োগ দেওয়া আছে এডহক ভিত্তিতে। এখনও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। তবে নিয়োগ স্থায়ী করা না হলেও তা বাতিলের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য ড. এম আব্দুস সোবহান।

উপাচার্য ড. এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট অনুযায়ী এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

গত বুধবার (৫ মে) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী এডহক ভিত্তিতে ৯ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন। পরদিন তার মেয়াদের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৬ মে) যোগদান করেন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিয়োগ দেওয়া শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশই সরাসরি ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে অবস্থান নেওয়া পরিবারের সদস্য বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

উপাচার্য তার নিয়োগ আদেশে উল্লেখ করেছেন, ‘১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের-১২(৫) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অনধিক ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলো। এই নিয়োগ আদেশ নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর করা হবে।’

এর আগে এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (৫ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই নিয়োগ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

নিয়োগ টিকবে কিনা জানতে চাইলে রাবির সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, ‘১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে পারেন। এটি সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য। ছয় মাস পর এডহক নবায়ন করতে হয়। সাধারণ এডহকে দু-তিন জন নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে গতকাল যে নিয়োগ হয়েছে এটি রাজনৈতিক নিয়োগ। বিএনপি সরকারের সময় একসঙ্গে ৫৪৪ জনের মাস্টাররোলে নিয়োগ হয়েছিল। অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানও তার প্রথম মেয়াদের শেষ দিকেও রাজনৈতিক বিবেচনায় ৫০ জনের অধিক এডহক নিয়োগ দিয়েছিলেন।’

রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া এডহক নিয়োগ বাতিলে অতীতে কোনও দৃষ্টান্ত নেই বলেও জানান দুই মেয়াদে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা এই অধ্যাপক।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার উপাচার্যের রয়েছে। এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া আইনগতভাবে অবৈধ নয়। যেখানে আইনগতভাবে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে সেখানে মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে উপাচার্যের বিরুদ্ধে সরকার চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাতে নিয়োগ অবৈধ হয়ে যায় না। তাছাড়া আগেও রাজনৈতিক বিবেচনায় এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কারও নিয়োগ বাতিল হয়নি। আগে অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমেও এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরে তা স্থায়ীও করা হয়েছে।’

এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন বলেন, ‘ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময়ে অনেকের দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু কেউ তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন করেনি। উপাচার্য স্যার আমাদের সে মূল্যায়ন করেছেন। আমরা যারা নিয়োগ পেয়েছি তাদের মধ্যে অনেকেরই ছাত্রশিবিরের হামলায় অঙ্গহানি হয়েছে। বাইরে কিছু করার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। সেই জায়গায় উপাচার্য আমাদের চাকরি দিয়ে পিতার ভূমিকা পালন করেছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা চাকরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ দাবিতে তারা এর আগে উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটক, প্রশাসন ভবন ও সিনেট ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন। বাসভবনের ফটকে তালা লাগানোর দিন উপাচার্য ছাত্রলীগ নেতাদের আশ্বস্ত করেন বলেন, ‘চাকরির ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ অগ্রাধিকার পাবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান ১৪১ জনকে এডহক নিয়োগ বিষয়ে বলেন, ‘নিয়োগপ্রাপ্তদের সবাই চাকরি পাওয়ার যোগ্য। ১৯৭৩ সালের অ্যাক্টে উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িকভাবে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০০ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়মিতভাবে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিল। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন নেওয়ার পর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ভাইভা নেওয়ার আগে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। সে কারণে পরে তা নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা চিন্তা করলাম করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে ডিসেম্বরে ভাইভা শুরু করবো। কিন্তু ঠিক ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টার পর আমার ইমেইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এলো প্রশাসনিক কারণে সব ধরনের নিয়োগ নির্দেশক্রমে স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। চিঠি পেয়ে আমি অবাক হয়েছি। যারা এখানে নিয়োগের বিরোধিতা করছিল তারা চায়নি আমার সময় কোনও নিয়োগ হোক।’

নিয়োগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান আরও বলেন, ‘অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিবারের সদস্য। ছাত্রশিবিরের নির্যাতনে অনেকের হাত, পা, নখ কাটা রয়েছে। অনার্স মাস্টার্স পাস এসব ছেলেমেয়ে তৃতীয় শ্রেণির নিয়োগ পাবে, এই যোগ্যতা কি তাদের নেই? এর আগে সব জামায়াত-বিএনপির ছেলেমেয়েদের চাকরি দিয়েছে। ছাত্রলীগের পোড় খাওয়া যেসব ছেলেমেয়েরা চার বছর ধরে নিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে; আমি অন্তত দায়িত্ব মনে করেছি এদের চাকরি দিয়ে যাবো। তারা এটা জানে আমি চাকরি দিয়ে না গেলে ভবিষ্যতে কেউ দেবে না। আগেও দেয়নি। কেউ যদি বলে যাওয়ার দিন কেন দেওয়া হয়েছে? আমি বলবো, বাধ্য হয়েছি। নরমালভাবে আমাকে নিয়োগ দিতে দেওয়া হয়নি। ফলে আমি এক কাজ করেছি চ্যালেঞ্জ হিসেবে। আমি মনে করি, এ কাজটি অবৈধ বা অনৈতিক হয়নি। আমি নিয়মের মধ্য থেকেই করেছি। আমাকে এডহক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪১ জন ছাড়া আগের এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েক দফা এডহক নবায়ন করা হয়েছে। তাদের এখনও স্থায়ী করা হয়নি। মোট শূন্য পদ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৯০০। এসব পদের বিপরীতে এই নিয়োগসহ মোট এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলো প্রায় ৫০০ জনকে। এখনও সাড়ে ৪০০ শূন্য পদ রয়েছে।

আরও পড়ুন: গণহারে নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন রাবি উপাচার্য

/এনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জয়পুরহাটে সড়কে প্রাণ গেলো দুই ধানকাটা শ্রমিকের
জয়পুরহাটে সড়কে প্রাণ গেলো দুই ধানকাটা শ্রমিকের
রাজধানীতে ঝড়-শিলাবৃষ্টি
রাজধানীতে ঝড়-শিলাবৃষ্টি
৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার
৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার
এমপি স্ত্রীকে হারিয়ে ৬ ভোটে স্কুল কমিটির সভাপতি বদি
এমপি স্ত্রীকে হারিয়ে ৬ ভোটে স্কুল কমিটির সভাপতি বদি
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী