X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

কোয়ারেন্টিন না মানলে হতে পারে মামলা

সাদ্দিফ অভি
১৬ মে ২০২১, ১৯:০৩আপডেট : ১৬ মে ২০২১, ১৯:৪৩

বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। আর ভারত থেকে ফিরলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার এবং ভারতের সার্বিক করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে পালানোর ঘটনাও ঘটেছে। আর তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তাই কোয়ারেন্টিন থেকে পালালেই কিংবা কোয়ারেন্টিন না মানলে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এ কিংবা পেনাল কোডের ২৬৯ ধারায় মামলা করার সুযোগও আছে। 

ইতোমধ্যে যশোরে কোয়ারেন্টিন সেন্টার থেকে ভারত ফেরত ১০ জন পালানোর পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ওই ১০ করোনা রোগীর বিরুদ্ধে গত ৮ মে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এ এই মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরমধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর গত সোমবার সকালে তাদের আটক করা হয়। বর্তমানে ৮ জন জামিনে আছেন, আর দুজন চিকিৎসাধীন আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন যশোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন।

যশোরের হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিল ভারত থেকে ফিরে আসা ৭ করোনা রোগী ও স্থানীয় তিন করোনা রোগী যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রেড জোন থেকে পালিয়ে যায়। রেড জোন থেকে ১০ করোনা রোগী পালিয়ে যাওয়ার খবর জানাজানি হলে এ নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ২৬ এপ্রিল পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের আটক করে ফের যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ এই ১০ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে  সংক্রমণ রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এর ২৫(২) ধারায় মামলা দাখিল করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮-এর ২৪ ধারায় বলা আছে,  যদি কোনও ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করেন, জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনও ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তার নিকট গোপন করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ।

একই ধারার দ্বিতীয় উপ-ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন কোনও অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইনের ২৭ ধারায় বলা আছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত কোনও অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে। আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার ওপর অর্পিত কোনও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনও নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন তাহলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ হবে একটি অপরাধ। এই ধারায় যদি কোনও ব্যক্তি অপরাধ সংঘটন করেন তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ মাস কারাদণ্ডে, অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই আইনের অধীনে সব অপরাধ অ-আমলযোগ্য,  জামিনযোগ্য এবং আপসযোগ্য হবে।

পুলিশ সদর দফতরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেনাল কোডের ২৬৯ ধারা অনুযায়ী সংক্রমণ ঠেকাতে মামলা করার সুযোগ আছে। দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে যশোর ছাড়াও কুমিল্লা, মৌলভীবাজার জেলায় মামলা হয়েছে আগেও।

১৮৮০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ২৬৯ ধারায় বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি বেআইনিভাবে বা অবহেলামূলকভাবে এমন কোনও কার্য করে যা জীবন বিপন্নকারী মারাত্মক কোনও রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও বা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও তা করে, তবে সেই ব্যক্তি ছয় মাস পর্যন্ত যেকোনও মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে। 

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশি নাগরিক যারা আসছেন তাদের সীমান্ত অতিক্রম করার পর আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠাচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসন থেকে অনেক সহায়তা পেয়েছি। তারপরও আমরা দেখেছি যে যারা রোগী কিংবা রোগীর এটেনডেন্টসহ অনেকেই এই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এটি একেবারেই যৌক্তিক নয়। তার কারণ হচ্ছে, কোয়ারেন্টিন থেকে চলে গেলে সেখানে যদি সম্ভাব্য কোনও রোগী থাকে, যাদের ভারত থেকে সংক্রমণ নিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে, তারা কিন্তু পুরো দেশবাসীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যারা পালিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ফেরত আনা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া কিন্তু চালু হয়েছে। কাজেই আমরা বিনীত অনুরোধ করবো আইনের প্রতি যেন আমরা শ্রদ্ধাশীল থাকি।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৭
নোয়াখালীতে করোনা আক্রান্ত হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
আরও ১৩ জনের করোনা শনাক্ত
সর্বশেষ খবর
ভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন