X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইকোসাইডকে অপরাধ হিসেবে আইনের আওতায় চায় সংসদীয় কমিটি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২০ জুন ২০২১, ২১:০৮আপডেট : ২০ জুন ২০২১, ২১:০৮

জেনোসাইডের মত ইকোসাইডকে (ECOCIDE) অপরাধ হিসেবে গণ্য দেখতে চায় সংসদীয় কমিটি। এই প্রতিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংসের অপরাধকে দেশের প্রচলিত আইনের এখতিয়ারভুক্ত করতে বলেছে কমিটি। এক্ষেত্রে বিদ্যমান ফৌজদারি কার্যবিধি বা নতুন আইন করার কথাও বলেছে কমিটি।

রবিবার (২০ জুন) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমন সুপারিশের কথা জানান।

তিনি বলেন, গণহত্যা যেমন অপরাধ ইকোসিস্টেম ধ্বংস করাও সেই ধরনের একটি অপরাধ বলে আমরা মনে করি। কারণ ইকোসিস্টেম না থাকলেও তো আমরা কেউই বাঁচতে পারবো না। এজন্য প্রতিবেশের বিরুদ্ধে যে অপরাধগুলো হচ্ছে সেটাকে আইনের আওতায় আনাই ইকোসাইডের মূল থিম। আমরা ইকোসাইডকে ক্রাইম হিসেবে দেশি আইনের এখতিয়ারভুক্ত করার কথা বলেছি। এক্ষেত্রে সিআরপিসিতে এটা অন্তর্ভুক্ত করা যায় কী না বা নতুন কোনও আইন করা সম্ভব কী না সেটা দেখতে বলেছি।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বন অধিদফতর গত ৮ মাসে ২ হাজার ৪৬৮ দশমিক ২০ একর জবরদখল হওয়া ভূমি উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ঢাকা বনবিভাগের ৬৪২ দশমিক ৫৮ একর, টাঙ্গাইল বনবিভাগের ৬৩৬ দশমিক ৪৯ একর, ময়মনসিংহ বনবিভাগের ১ দশমিক ৫০ চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের ৭২৩ দশমিক ৪০ একর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের ২৩০ দশমিক ৬৫ একর, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ১৪৪ দশমিক ১৫ একর, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ২৪ দশমিক ১৯ একর, উপকূলীয় বনবিভাগ চট্টগ্রামের ২৯ দশমিক ৭০ একর, সামাজিক বনবিভাগ রাজশাহীর ১৯ দশমিক ৪৯ একর এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, চট্টগ্রামের ১৬ দশমিক শূন্য ৫ একর।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, বনভূমি উদ্ধার কার্যক্রমে আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি। যে কাজটি অতীতে কখনও করা সম্ভব হয়নি সেই কাজটি শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে আমাদের সুপারিশ হচ্ছে এর গতি বাড়াতে হবে। কারণ যে গতিতে চলছে তাতে বছরের পর বছর সময় লেগে যাবে। এজন্য কীভাবে গতি বাড়ানো যায় আগামী বৈঠকে তার একটি রোডম্যাপ দিতে বলা হয়েছে।

বৈঠকে কমিটি কমিটি বিশ্বের বন উজাড়ের রেটের তুলনায় বাংলাদেশের বন উজাড়ের রেট যেন কম থাকে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করে। এ বিষয়ে সাবের হোসেন বলেন, জাতিসংঘ কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) সম্প্রতি একটি রিপোর্ট করেছে। সেখানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বড় উজাড়ের হার বিশ্বের গত হারের দ্বিগুণ। বন উজাড় হওয়া হার পৃথিবীর গড় রেট এক দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে এটা ২ দশমিক ৬ শতাংশ। আমরা বলেছি এভাবে চলতে থাকলে তো বনই আমাদের থাকবে না। এটা কেন হচ্ছে তা কীভাবে রোধ করা হয় তার জন্য একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে বলেছি।

বৈঠকে জীব-বৈচিত্র্য বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতরের নাকি বন অধিদফতরের অধীনে থাকবে তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে সভাপতি বলেন, জীববৈচিত্র্য এখন পরিবেশ অধিদফতরের অধীনে আছে। আমরা মনে হয়েছে এটা বনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পরিবেশ তো এমনিতেই অনেক কাজ করে। এজন্য জীববৈচিত্র্য আলাদাভাবে বা বনের সঙ্গে যুক্ত করা যায় কী না সেটা দেখতে বলেছি। মন্ত্রণালয়ের রুলস অব বিজনেসে ইকোসিস্টেম, বায়োডাইভার্সিটি ইত্যাদি বিষয়গুলো নেই। এগুলো অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছি।

বৈঠকে কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনভিত্তিক অভিযোগ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ড্যাশিবোর্ড করার সুপারিশ করা হয়ে বলে সাবের হোসেন চৌধুরী জানান। তিনি বলেন, আমরা গাছ কাটা, বন্যপ্রাণী মেরে ফেলাসহ বিচ্ছিন্নভাবে নানা অভিযোগ শুনি। কিন্তু এগুলোর ফলোআপ হয় না। যথাযথ মনিটরিং হয় না। এজন্য অভিযোগ গ্রহণের একটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সুপারিশ করেছি। যাতে অনলাইনে অভিযোগ করতে পারে। তার জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকেই সফটওয়্যার ডেভেলপ করবো। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পর্যন্ত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। যিনি অভিযোগ করবেন তিনিও সেটার আপডেট জানতে পারবেন।

বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে বন অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন গেজেটভুক্ত সংরক্ষিত বনের পরিমাণ ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৯০৭ দশমিক ৫২ একর। এরমধ্যে বনবিভাগের রেকর্ডকৃত জমির পরিমাণ ৫ লাখ ২৮ হাজার ২৬৩ দশমিক ১৪ একর। তিনটি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবনের সংরক্ষিত জরিপ বহির্ভূত ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭১ দশমিক ১৮ একর। অবশিষ্ট তিন লাখ ৯৫ হাজার ২৭৩ দশমিক ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমির রেকর্ডের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কমিটি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কমিটি সদস্য পরিবেশন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মো. রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং মো. শাহীন চাকলাদার বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

 

/ইএইচএস/এনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতীত ফিরিয়ে আনলেন শান্ত-রানারা
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জেনে নিন
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
হাতিরঝিলে ভাসমান অবস্থায় যুবকের মরদেহ
ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রুশ সাংবাদিক নিহত
ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় রুশ সাংবাদিক নিহত
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি