X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর গভীর স্তরে অনুসন্ধানের পরামর্শ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট 
১৪ আগস্ট ২০২১, ১৫:৩২আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২১, ১৫:৩২

বাংলাদেশের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর আরও গভীরে অনুসন্ধান করলে বেশ ভাল পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। হঠাৎ যদি বর্তমান গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উত্তোলিত গ্যাসের পরিমাণ কমে যায় তাহলে শুধুমাত্র এলএনজি দিয়ে এক ঘাটতি পূরণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে অনেক গ্যাসক্ষেত্রের গভীরে হাই প্রেসার জোন পাওয়া গেলেও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ।  

শনিবার (১৪ আগস্ট) এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিন আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এই পরামর্শ দেন। 

ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মর্তুজা আহমেদ ফারুক। 

তিনি বলেন, আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে তিতাসের মতো বড় গ্যাসক্ষেত্র যেমন আছে তেমনই ফেঞ্চুগঞ্জ, পাথারিয়া, আটগ্রাম, সীতাকুণ্ড, সুনেত্র, মোবারকপুর, শ্রীকাইল, পটিয়া, কাসালং’র মতো গ্যাসের অবকাঠামো আছে এমন জায়গায়ও অনুসন্ধান শুরু করা দরকার এখনই। 

তিনি আরও বলেন, তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের যে স্তর থেকে এখন যে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, তার নিচের স্তরগুলোতে গ্যাস থাকার সম্ভাবনা প্রবল। গভীর স্তরে খনন করে এই গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। তিতাসের নিচে সাড়ে সাত হাজার মিটার পর্যন্ত গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তিতাস ছাড়াও আরও কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

আহমেদ ফারুক বলেন, বিশ্বের বহু দেশ ডিপ ড্রিলিং করে। সেখানে খনন করতে গিয়ে হাই প্রেসার জোনের মুখোমুখি হোন। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন এই হাই প্রেসার জোনে কাজ করছে অনেক দেশ। সম্প্রতি কাস্পিয়ান সাগরের ১৫ হাজার মিটার নিচ পর্যন্ত খনন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তেলের জন্য ১০ হাজার মিটারের মতো মাটির নিচে এবং গ্যাসের জন্য প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মিটার পর্যন্ত খনন করেছে। তবে আমাদের দেশে হাই প্রেসার জোনে ড্রিলিং করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাপেক্সের একার পক্ষে করা এটি করা সম্ভব নয়। অভিজ্ঞ কোম্পানির সহযোগিতা ও প্রযুক্তির সহায়তা প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় অনুসন্ধানের কাজও শুরু করা দরকার।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি বলেন, সরকারি কোম্পানি বাপেক্সের একার পক্ষে এসব কাজ করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে অন্য বিদেশি অভিজ্ঞ কোম্পানি অথবা প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগিয়ে কাজ করানো সম্ভব। দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বাপেক্সকে ফুল অথোরিটি দেওয়া, বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে দেওয়া ও প্রবাসী অভিজ্ঞদের কাজ লাগানো উচিত। সবার আগে আমাদের মাইন্ড সেটআপ চেঞ্জ করতে হবে। সংকট কাটাতে হলে রিয়েল এক্সপার্টদের কাজে লাগাতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দেশের বেশ কিছু গ্যাসব্লকে ডিপ ড্রিলিং করে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পার্বত্য এলাকাসমূহে এ সম্ভাবনা আছে। তিতাস, বাখরাবাদ, শ্রীকাইল, শাহবাজপুর, রশিদপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় এই খনন এখন সময়ের দাবি। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, দেশের অনেক আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে আমরা হাই প্রেসার জোন পেয়েছি। প্রেসারের কারণে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন এইসব হাই প্রেসার জোনে কী পরিমাণ গ্যাস আছে তা কিন্তু প্রমাণিত নয়। তাই আমাদের ড্রিপ ড্রিলিংয়ে যাবার আগে সেখানে কী পরিমাণ গ্যাদ আছে সে তথ্যগুলো কালেক্ট করে একটি ডাটা বেইজ করে মডেলিং করা যেতে পারে। আমরা এখনো আশাবাদী, অনেক এলাকায় গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। একদিন এই গ্যাস আবিষ্কার হবে এবং আমাদের গ্যাস সংকট কেটে যাবে বলে আমরা আশা করছি। 

ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, এখনও দেশে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে এটা অনেক আশার কথা। তবে কী পরিমাণ পাওয়া যাবে সেটার অনিশ্চয়তা আছে। এদিকে ক্রমান্বয়ে গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন কমছে। হঠাৎ  করে ৩০০-৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কমে যেতে পারে। আর হুট করে কমে গেলে সেটা মেটানো খুব কঠিন হবে। শুধু এলএনজি আমদানি করে এই ঘাটতি পূরণ করা যাবে না। আশা করি সেই পরিস্থিতি হবে না। যদি হয় তাহলে মহাবিপদে পড়বে দেশ। বাপেক্স যদি সরকারি নির্দেশনায় বসে থাকে তাহলে চলবে না। এইভাবে কাজ করলে কাজ হয় না। অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় যেটা বাপেক্স নিতে পারছে না। এতে কাজের গতিও কমে আসছে। 

তিনি বলেন, হাই প্রেসার জোনে কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু একেবারে অসম্ভব নয়। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কাজ করতে দিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ড্রিলিং করে কিছু না পেলে হতাশ হওয়া যাবে না। ৪-৫টি ডিপ জোনে ড্রিল করা দরকার, গ্যাস আছে কিনা। সম্ভাবনাময় জায়গাগুলো আগে দেখা। তথ্য ছাড়া আমরা কোনও কাজ করতে পারবো না। কিছু তথ্য জোগাড় করা হয়েছে। তবে এখনও সব হয়নি। আমি আশা দেখছি, বাপেক্সকে সরকারের মধ্য থেকে বের করা সম্ভব নয়। কিন্তু যৌথভাবে বাপেক্স কাজ করতেই পারে। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ডিপ জোনে কাজ করতে হলে যে তথ্য প্রয়োজন তা সবার আগে সংগ্রহ করে, তার ভিত্তিতে গভীর স্তরে কাজের সুযোগ রয়েছে আমাদের।

/এসএনএস/এনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাশিয়া-চীন বাণিজ্য নিয়ে পুতিন-শির বৈঠক
রাশিয়া-চীন বাণিজ্য নিয়ে পুতিন-শির বৈঠক
বেনাপোলে পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে আমদানি-রফতানি
বেনাপোলে পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে আমদানি-রফতানি
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপযুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!