X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিল বরগুনায়

সুমন সিকদার, বরগুনা
১৫ আগস্ট ২০২১, ১১:৩২আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২১, ১৮:০০

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকাল ৮টার পরপর প্রথম প্রতিবাদ মিছিল বের হয় তৎকালীন মহকুমা ও বর্তমান জেলা বরগুনায়। এমনটাই দাবি করছেন তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালসহ পরিবারের ১৬ সদস্য। স্তব্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ। বাকশূন্য হয়ে পড়ে গোটা জাতি। ইতিহাসের এই নৃশংস হত্যকাণ্ডের প্রতিবাদে সে দিন গর্জে উঠেছিল বরগুনার সাধারণ মানুষ ও ছাত্র জনতা। প্রথম প্রতিবাদ করেছিল তারা। বরগুনার মহকুমা এসডিও হিসেবে দায়িত্বে থাকা সিরাজ উদ্দীন আহমেদের সহযোগিতা ও পুলিশের সমর্থনে বরগুনার তৎকালীন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। একই সময় জেলার ৪টি উপজেলা শহর আমতলী, বামনা, বেতাগী, পাথরঘাটায়ও হত্যার প্রতিবাদ জানানো হয়।

তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক সিরাজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ১৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৭টায় মোতালেব মৃধা আমার বাসায় এসে জানায়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল তাকে। রেডিও খুলে শুনতে পাই কুখ্যাত মেজর ডালিম এর ঘোষণা। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই এ নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদ করবো। নিজের রিভালবার নিয়ে মোতালেব মৃধাকেসহ বের হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা (এসডিপিও) ফারুখ হোসেনের বাসায় যাই। এরপর সেখান থেকে ওয়াপদার ডাক বাংলোতে রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সভা করে বিদ্রোহের প্রস্তুতি ও মহকুমা দখলের জন্য বলি। মহকুমার সব থানায় ফোন করে বিদ্রোহে অংশ নিতে বলি। মোতালেব মৃধাকে জাহাঙ্গীর কবিরসহ ছাত্রলীগ কর্মীদের বাসায় নিয়ে আসার জন্য বলি। অল্প সময়ের মধ্যেই মোতালেব মৃধা জাহাঙ্গীর কবিরসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী নিয়ে বাসায় উপস্থিত হয়। সেখানে প্রথমে আমরা প্রতিবাদ সভা করি এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করি। এরপর ১৬ আগস্ট আমার সরকারি বাসভবনে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের স্মরণে শোকসভা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে তৎকালীন সরকার শহরে কারফিউ ঘোষণা দিলেও তা অমান্য করে বিক্ষোভ মিছিল করেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সাধারণ জনতা।। আমরা চেয়েছিলাম বরগুনা ও পটুয়াখালী থেকে ৫০০ রক্ষী বাহিনীর সদস্য নিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করবো, কিন্তু তেমন সাড়া না পাওয়ায় আর অগ্রসর হওয়া হয়নি, কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও নির্দেশনা না থাকায় আন্দোলন বেশি দূর এগোয়নি।

সিরাজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, এসব ঘটনার জন্য ১৯৭৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করা হলেও সাক্ষী না থাকায় কিছুই করতে পারেনি তারা। পরে মুচলেকা দিয়ে চাকরিতে যোগদান করতে বলা হয়, কিন্তু আমি তাতে রাজি হয়নি। এরপর ১৯৭৭ সালে উপসচিব জালাল উদ্দিন ও অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আসাদুজ্জামানের উদ্যোগে আমাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।

১৫ আগস্ট ও তার পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদে অংশ নেওয়াদের মধ্যে যাদের নাম পরিচয় জানা যায়, তারা হলেন তৎকালীন বরগুনার সিও ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, সাবরেজিস্ট্রার  আলী আজগর, রিলিফ অফিসার বিপ্লব কুমার শর্মা, স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে আবদুল লতিফ মাস্টার, প্রয়াত সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, নুরুল ইসলাম সিকদার, রুস্তম আলী খান, বতর্মান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, আ. রশিদ, ইউসুফ শরীফ, বেনু তালুকদার, সুলতান আহমেদ, মোতালেব মৃধা, দিলীপ সাহা, দেলোয়ার হোসেন, সুখ রঞ্জন শীল, কুদ্দুস মীর, জালাল উদ্দীন মোল্লা, জয়নাল আবেদীন খান, মানিক গাজী, দুলাল মাতুব্বর, হারুন মাতুব্বর, জ্ঞান রঞ্জন ঘোষ, অধ্যক্ষ সামসুল আলম তালুকদার, আ. মান্নান, কানাই নাথ, পরেশ তালুকদার, বাচ্চু মিয়া, এসডিপিও ফারুক আহমেদ, রক্ষীবাহিনীর সহকারী কমান্ডার আ. মন্নান, আমতলী থেকে পাশা তালুকদার, জিএম দেলোয়ার, বেতাগী থেকে মান্নান মৃধা, নাজেম মিয়া প্রমুখ। এছাড়াও এ সময় একাত্মতা প্রকাশ করেন এমপি আসমত আলী সিকদার, শাহজাদা আবদুল মালেক খান, নিজাম উদ্দীন আহমেদ।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে সামরিক স্বৈরসরকারের নির্দেশে তৎকালীন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক শাকুর আহমেদ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বর্তমান বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, প্রয়াত অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম শিকদার, প্রয়াত সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুস শরীফ, বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, মোসলেম আলী শরিফ, মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডার, আ. রশিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেতাগী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত আ. মন্নান মৃধা, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা নাজেম আলী, আমতলী আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদার ও শ্রমিক নেতা সুখ রঞ্জন শীলসহ অনেক আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গ্রেফতার, নির্যাতন ও কারাভোগ করেন।

বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ও বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদকারী আবদুল মোতালেব মৃধা বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর প্রথমে আমি জানতে পারি। এরপর আমি দৌড়ে গিয়ে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক সিরাজ উদ্দীন সাহেবকে জানাই। এরপর আমরা প্রথম প্রতিবাদ সভা করি।

৭৫ এর ১৫ আগস্ট বরগুনা শহরে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলহাজ মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আজ আমরা গর্ব করে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে বরগুনাতেই ছাত্রলীগ প্রথম প্রতিবাদ করেছিল। কেন্দ্রীয় কোনও নির্দেশনা ছাড়াই আমরা সিরাজ উদ্দীন সাহেবের প্রেরণায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেছিলাম।

ওই সময়ের আরেক সাহসী ছাত্রনেতা সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করি তাই তার হত্যা মেনে নিতে পারিনি। মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে সেদিন সংখ্যায় কম হলেও আমরা প্রতিবাদ করতে পেরেছিলাম।

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি: প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ গিনেস বুকে ওঠানোর উদ্যোগ
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!