X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যে ঘটনায় ইউএনও'র বাসভবনে হামলা

সালেহ টিটু, বরিশাল
১৯ আগস্ট ২০২১, ০৯:২৪আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২১, ১৮:৫০

বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুরো সদর উপজেলা প্রাঙ্গণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় ওসি ও দুই পুলিশ সদস্য এবং প্যানেল মেয়রসহ সাত জন গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘট্নায় কিছু সময়ের জন্য বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নগরীর থানা কাউন্সিল এলাকা অবরোধ করলে দুই প্রান্তে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

তবে হঠাৎ করে কেন এমন ঘটনা ঘটেছে, জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন- শোক দিবসের ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে এমনটা ঘটেছে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিমের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহর। সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের ছয় কাউন্সিলর প্রতিমন্ত্রীর অনুদানের চাল বিতরণ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মেয়র। এরপর ওই ছয় কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বিসিসির কর্মচারীদের তুলে নেওয়া হয়। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন ২৩ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিচুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান দুলাল এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব। ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে বুধবার রাতে বিসিসি কর্মী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী প্রতিমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে গেলে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ২৩ জনকে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল এবং অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহক শ্রমিক লীগ কর্মী নাসির আলমসহ পুলিশের দুই সদস্যকে ভর্তি করা হয় জেলা পুলিশ হাসপাতালে। কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলামের বুকেও স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছেন। তবে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হননি।

এদিকে ঘটনার জন্য সদর ইউএনও বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) কর্মী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এবং বিসিসি মেয়র ইউএনওকে দোষারোপ করেছেন।

ইউএনও মুনিবুর রহমানের অভিযোগ, প্রতিমন্ত্রীর ছবি সংবলিত শোকদিবসের ব্যানার অপসারণ করতে বুধবার রাতে বিসিসি থেকে লোক আসে। তবে তাদেরকে ব্যানার অপসারণে সকালে আসার অনুরোধ জানানো হয়। পরবর্তীতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৬০ থেকে ৭০ জনের একটি দল আমার সরকারি বাসভবনে দিকে আসতে চাইলে আনসাররা আমাকে জানায়। আমি দোতলা থেকে নিচে নামলে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব বাসায় প্রবেশ করেন। এ সময় তার সঙ্গেও লোকজন ঢুকে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। আমার বাসার দোতলায় করোনায় আক্রান্ত অসুস্থ বাবা-মাকে নিয়েও গালাগাল করে তারা।

এক পর্যায়ে তারা আমাকে ঘিরে ধরলে আমি আনসারদের সাহায্য নেই। এ সময় আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বাবুকে আটকে আনসারের হাতে সোপর্দ করি। তারা যাওয়ার আগে বাসার প্রধানগেট ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে অন্য কর্মকর্তারা ছুটে এসে আমাকে রক্ষা করেন। ওই ঘ্টনার পরও গ্রুপে ভারী হয়ে ফের আমার বাসায় হামলা চালানো হয়। আমার অপরাধ আমি রাতে শোক দিবসের ব্যানার অপসারণ করতে না করেছি। 
 
সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ইউএনও’র সরকারি বাসভবন এলাকায় জনগণের ব্যবহৃত পুকুর, মসজিদ ও সড়ক রয়েছে। এ কারণে সেখানকার মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ করতে বলা হয়। এটা বিসিসির নিয়মাফিক কাজ। আমার বিসিসির কর্মীরা জানান ব্যানার অপসারণ করতে গেলে ইউএনও তাদের গালিগালাজ করেন। তবে তিনি তা করেছেন কিনা তা আমি নিশ্চিত নই। বিষয়টি জানার পর মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার পরপরই তাদের ওপরও গুলি ছোড়া হয়। জানতে পেরে আমি দ্রুত সেখানে উপস্থিত হই। আমি যাওয়ার পরও গুলি ছোড়া অব্যাহত ছিল। তখন আমি হাত উঁচিয়ে আমার পরিচয় দেই। আমি মেয়র মেয়র বলে ডাক-চিৎকার দিলেও তাতে কেউ কর্ণপাত করেননি। গুলি ছুড়তে থাকলে আমি অল্পের জন্য রক্ষা পাই। 

মেয়র বলেন, আমার অভিভাবক হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী এবং আমার বাবা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এভাবে দায়িত্ব পালন করা যায় না।

বর্তমানে সদর উপজেলা পরিষদ এলাকায় মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ইউএনও’র মাধ্যমে খবর পেয়ে তার সরকারি বাসভবনে আসি। এসে আসনার সদস্যদের আহত অবস্থায় দেখতে পাই। এরপর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ফোর্স আনা হয়। তবে কী ঘটেছিল, আর কী কারণে এ হামলা তা খতিয়ে দেখে, জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। কয় রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছে তা পরবর্তীতে জানানো হবে বলে জানান পুলিশ কমিশনার।

জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, কী ঘটেছে, আর কী কারণে এমন হামলা হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও ব্যানার-পোস্টার অপসারণকারীদের বৃহস্পাতিবার সকালে আসতে বলেন। এরপরও তাকে অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। সরকারের আদেশ নির্দেশ মানাই আমাদের কাজ। তবে এমন কী ঘটেছিলো যে. ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলা চালাতে হবে। বিষয়টি আমাদের জানাতে পারতো। যা হয়েছে তা খুবই দুঃখজনক।

/টিটি/
সম্পর্কিত
হিজবুল্লাহর ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান পাকিস্তান ও ইরানের
গাজায় ৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
সর্বশেষ খবর
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!