X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা জরুরি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৯ আগস্ট ২০২১, ১৮:১৭আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২১, ১৮:১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কট ব্যবস্থাপনায় কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে কক্সবাজারে কর্মরত ৫০টি স্থানীয় ও জাতীয় এনজিওর নেটওয়ার্ক কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিশ্ব মানবিকতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে এসব সুপারিশ করেন বক্তারা।

ভার্চুয়াল সভায় বক্তারা বলেছেন, দুর্যোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই সবার আগে মানুষের পাশে দাঁড়ান। তাই কর্মসূচি প্রণয়নে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা জরুরি। স্থানীয়করণ ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান শীর্ষক এই সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির কো-চেয়ার এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং আরেকজন কো-চেয়ার এবং পালস’র নির্বাহী পরিচালক আবু মুর্শেদ চৌধুরী। এতে আরও বক্তৃতা করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবসার, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মরজিনা আক্তার, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হেলাল উদ্দিন, ইপসার নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান, জাগো নারী সংস্থার প্রধান নির্বাহী শিউলি শর্মা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মো. মজিবুল হক মনির এবং এতে স্থানীয় ও জাতীয় এনজিও ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিগণ বক্তব্য রাখেন।

মজিবুল হক মনির বলেন, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার সময় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে তাদের পাশে সবার আগে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বিশেষ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। জনগণের সবচাইতে কাছে থাকেন বিধায় তারা জনগণের প্রয়োজনটা সবচাইতে ভাল বোঝেন।তাই রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থাপনার সকল ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ জরুরি।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যেকোনও দুর্যোগ বা মানবিক সংকটে ইউনিয়ন পরিষদ সবার আগে প্রত্যক্ষ শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে, কিন্তু আমাদের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কাঠামোগত কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। এই দুর্বলতা কাটাতে জাতীয় নীতি কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। নীতিগত সহায়তা পেলে ইউনিয়ন পরিষদ যেকোনও দুর্যোগে কার্যকর ও টেকসই ভূমিকা পালন করতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উপজেলা পরিষদগুলোকে এসব ক্ষেত্রে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মরজিনা আক্তার বলেন, আমাদের এলাকায় কোনও কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের মতামত নেওয়া হলে আমরা আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারি। রাজাপলং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, স্থানীয়দের জন্য কী পরিমাণ বরাদ্দ আসছে, কী ধরনের প্রকল্প আসছে তার স্পষ্ট ধারণা আমরা পাই না। স্থানীয় এনজিগুলো আমাদেরকে তাদের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করলেও, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেভাবে আমাদের সম্পৃক্ত করছে না। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নূরুল আবসার বলেন, কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করার আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি চাহিদা যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, সবাই মিলে, সকলের সমন্বয়ে কাজ করলেই কেবল রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনা যথাযথ ও কার্যকর হতে পারে।

জাগো নারী সংস্থার শিউলি শর্মা বলেন, রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালে কক্সবাজারে আসার পর স্থানীয় নারীরা রোহিঙ্গা গর্ভবর্তী ও প্রসূতি মায়েদের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তারা বেশ ত্যাগও স্বীকার করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে। তারা তাদের সেই ভূমিকা, সেই স্বেচ্ছাসেবার কোনও স্বীকৃতি পাননি। তাদের স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। মো. আরিফুর রহমান বলেন, ৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি কক্সবাজারে সকল দুর্যোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ সবার আগে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তাই স্থানীয়দের জন্য কোনও কর্মসূচি গ্রহণকালে তাদের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক কারণে এমনিতেই কক্সবাজার একটি বিপদাপন্ন এলাকা। কিন্তু বর্তমান সরকারের কক্সবাজারের উপর বিশেষ নজর রয়েছে। বিশাল আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ কক্সবাজারের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগগুলোর সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করছে রোহিঙ্গা সংকটের কার্যকর ব্যবস্থাপনার ওপর। আর এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সরকারের সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় আসা মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তার কার্যকর স্থানীয়করণ নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয় পর্যায়ে এর জবাবদিহিতাও। অর্থ সহায়তার কার্যকর ব্যবহার ও সংকটের টেকসই সমাধানে স্থানীয় এনজিও-সুশীল সমাজের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া বিশেষ করে আইএসসিজি এবং আরআরআরসি’র বিভিন্ন সভায় ইউনিয়ন পরিষদের অংশগ্রহণের একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে।

 

/জেইউ/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ