X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য নেই সরকারি আইসিইউ!

জাকিয়া আহমেদ
২৯ আগস্ট ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২১, ১৩:০০

আট মাসের মিনা খাতুনের জ্বর আর শ্বাসকষ্ট ছিল। গত ৬ আগস্ট মিনাকে নিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে আসেন দাদা শাহজাহান মিঞা। সেদিন রাতেই মারা যায় শিশুটি। শাহজাহান মিঞা বলেন, ‘পেট ফুলে গিয়েছিল মিনার, অনেক জ্বর ছিল। হাসপাতালে আনার পর প্রথমে অক্সিজেন দিয়েছে। তারপর বলেছে, এখানে আইসিইউ নেই। এই রোগী এখানে রাখে যাবে না। অন্য ব্যবস্থা করেন। অনেক রিকোয়েস্ট করছি, তারপরও রাখেনি। তখন আর কী করবো। অক্সিজেন খোলার পর মেয়েটা মারা যায়।’

গত ২৫ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১১৭ জন। তাদের মধ্যে বয়স বিবেচনায় ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ছিলেন তিন জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৩৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিন জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে মারা যায় একজন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে, শনিবার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেছেন ২৫ হাজার ৯২৬ জন। তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে রয়েছে ৭৩ জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১৬২ জন।

দেশে শুরু থেকে করোনায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা কম ছিল। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশে আসার পর শিশু আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেড়েছে। এমনকি, চট্টগ্রামে জুন থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুদের করোনার জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা গেছে, শিশুদের শতভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আগত ও ভর্তি হওয়া ১২ শিশুর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সে এ তথ্য পেয়েছেন গবেষকরা।

আবার দেশে শিশুদের জন্য যে কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে তার অন্যতম ঢাকা শিশু হাসপাতাল। এ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি ডেডিকেটেড ওয়ার্ড থাকলেও সেখানে এসব শিশুদের জন্য নেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র।

শিশু হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলছেন, এ হাসপাতালে যেসব শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে তাদের অন্যান্য শারীরিক জটিলতাও ছিল। কিন্তু যদি তাদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো, আইসিইউতে নেওয়া যেত, তাহলে হয়তো অনেককেই বাঁচানো যেত।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, কেবল শিশু হাসপাতাল নয়, দেশের কোনও সরকারি হাসপাতালেই করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য আইসিইউ নেই। নেই দেশের সবচেয়ে বড় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও। রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এগুলোতে করোনায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য আলাদা আইসিইউ নেই।

প্রসঙ্গত, শিশুদের আইসিইউকে বলা হয় পিআইসিইউ (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট); এটি এক মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য এবং এনআইসিইউ (নিউন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট); এটি নবজাতক বা এক মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে এখন শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, আর এ ভ্যারিয়েন্ট অতি সংক্রমণশীল, রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে শিশুদের জন্য আইসিইউ না থাকার কারণে মৃত্যু হচ্ছে। তাই করোনা আক্রান্ত শিশুদের আইসিইউ সময়ের দাবি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার। বর্তমানে তিনি অবসরকালীন ছুটিতে আছেন। তার সময়েই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য চালু হয় শিশু করোনা ইউনিট। দেশের সবচেয়ে বড় এই গণমানুষের হাসপাতালেও করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র নেই বলে জানান অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘শিশুদের জন্য এখানে আইসিইউ নেই, এখানে কেবল এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) রয়েছে।’

কখনও কারও প্রয়োজন হলে কী করা হয়েছে জানতে চাইলে অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার বলেন, ‘শিশুদের আইসিইউ খুব কমই প্রয়োজন হয়েছে। তবে যাদের প্রয়োজন হয়েছে সেসব শিশুকে কোভিড এডাল্ট আইসিইউতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আবার কিছু বাচ্চাকে পাঠানো হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। কারণ, শিশু হাসপাতালেও তখন বাচ্চাদের জন্য আইসিইউ নেই।’ ‘কোভিডের জন্য বাচ্চাদের আইসিইউ আসলে নেই’,—বলেন তিনি।

শুরুর দিকে করোনায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা কম হলেও এখনকার ভ্যারিয়েন্টের কারণে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে জানান ঢাকা শিশু হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার পেডিয়াট্রিকস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মাদ মনির হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিন্তু করোনায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য আইসিইউ নেই। সরকারি হাসপাতালে একটাও নেই, নট অ্যা সিঙ্গেল ওয়ান।’

শিশুদের জন্য আইসিইউ না থাকাকে বড় সংকট উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, ‘শিশুদের জন্য আইসিইউ নেই—এর চেয়ে বড় ভয়ংকর আর কী হতে পারে?’

অধ্যাপক মনির হোসেন বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে এখন শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। আর এ ভ্যারিয়েন্ট অতি সংক্রমণশীল, দ্রুত রোগী খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই শিশুদের জন্য করোনা এনআইসিইউ এবং পিআইসিউ দুটোই থাকা উচিত।’

ঢাকা শিশু হাসপাতালে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫০ রোগী করোনার চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৩৪ জনের মতো। এ হাসপাতালে ২০ শয্যার একটি করোনা ইউনিট করা হয়েছে।

হাসপাতালে আইসিইউ না থাকাকে ‘অনেক বড় সমস্যা’ উল্লেখ করে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাতারাতি আইসিইউ তৈরি করা যায় না। এর সঙ্গে জনবলসহ আরও অনেক বিষয় জড়িত, এটা খুব সহজসাধ্য না।’ তবে যদি আইসিইউ থাকতো, তাহলে হয়তো এদের মধ্যে কাউকে বাঁচানো সম্ভব হতো’,— বলেন ডা. প্রবীর কুমার সরকার।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই কম ছিল। কিন্তু নতুন ভ্যারিয়েন্টে এই হার বেড়েছে। তাই শিশুদের জন্য আইসিইউ করার দিকে এখন মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে, খুব সহজে জটিল অবস্থাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’

 

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!