কক্সবাজারের মহেশখালী পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মকসুদ মিয়ার বিরুদ্ধে চিংড়ি ঘের দখল এবং লুটপাটের মামলা করায় এক মুক্তিযোদ্ধাকে পরিবারসহ গ্রামছাড়া করার অভিযোগ করেছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কর্মকর্তারা। বর্তমানে ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পালিয়ে কক্সবাজার শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত ১৯ অক্টোবর রাতে মহেশখালী পৌর মেয়র মকসুদ মিয়ার নির্দেশে ৩০-৩৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে ৬৭ একর বিশিষ্ট একটি চিংড়ি ঘের দখল করে নেয়। ওই ঘেরের মালিক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আমজাদ হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা। দখলের সময় সন্ত্রাসীরা চিংড়ি ঘেরের পরিচালক এবং কর্মচারীদের কুপিয়ে ও গুলি করে গুরুতর আহত করে। পরে তারা ঘেরের কয়েক লাখ টাকার চিংড়ি, লবণ ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে আদালতে মেয়র মকসুদ মিয়াসহ তার লোকজনদের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের নির্দেশে মহেশখালী থানার পুলিশ গত ২৫ অক্টোবর মামলা নথিভুক্ত করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা একমাত্র মামলার এক নম্বর আসামি মাওলানা জাকারিয়ার পরিবারের সন্তান এবং স্বীকৃত রাজাকার হাসেম সিকদারের ছেলে মেয়র মকসুদ মিয়া। তিনি এখন জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য। প্রভাবশালী পরিবার হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন ও তার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন তারা।
ঘের দখলের বিষয়ে আমজাদ হোসেন জানান, মেয়র মকসুদ মিয়া একজন দখলবাজ, ইয়াবাকারবারি ও কালো টাকার মালিক। চিংড়ি ঘের দখলের সময় তার নেতৃত্বে দশ জন অবৈধ অস্ত্রধারীসহ ৩০ জন সন্ত্রাসী চিংড়ি প্রজেক্টে থাকা ইজারাদারকে উচ্ছেদ করে মাছ, জাল, মালামাল লুটপাট ও ডাকাতি করে। ডাকাতরা হাতে থাকা লম্বা বন্দুক, কাটা বন্দুক, রাইফেল, কিরিচ দিয়ে হামলা চালায়। চিংড়ি প্রজেক্টের হালিয়া নজরুল ইসলাম ও ফয়সালকে গুলি করে মারাত্মকভাবে আহত করে তারা।
আমজাদ বলেন, ‘সে সময় চিংড়ি প্রজেক্টের সাত লাখ টাকা মূল্যের ১৫ মণ চিংড়ি মাছ এবং দেড় লাখ টাকার জাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মহেশখালী থানায় এজাহার দায়ের করি। কিন্তু মহেশখালী থানার ওসি বিষয়টি আমলে নেননি। পরে মহেশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এজাহার দায়ের করি। মহেশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আব্বাস উদ্দিনের আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে মহেশখালী থানার ওসিকে মেয়র মকসুদ মিয়াসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পর পৌর মেয়র ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন– চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজি বসিরুল আলম, কক্সবাজার জেলার সাবেক সহকারী কমান্ডার মাসুদ কুতুবী ও আলতাফ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার আবুল কাশেম, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, অভিযুক্ত মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকসুদ মিয়ার বক্তব্য জানতে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ না করেননি। তবে মহেশখালী থানার ওসি আবদুল হাই ৩১ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা হওয়ার কথা স্বীকার করেন।